রাবি শিক্ষকদের ওপর হামলায় চবি শিক্ষক সমাজের নিন্দা
Published: 21st, September 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকদের ওপর হামলা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক সমাজ (সাদা দল)।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে চবি শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোছাইন ও যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড.
আরো পড়ুন:
২৫ তারিখেই রাকসু নির্বাচন হবে: প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা
রাবিতে কর্মবিরতি উপেক্ষা করে গাছতলায় ক্লাস নিলেন অধ্যাপক পিটার
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাবি শিক্ষক সমাজের ওপর যে বর্বরোচিত হামলা ও অমানবিক আচরণের ঘটনা ঘটেছে, তা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আলম মাসুদসহ একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে শারীরিক নির্যাতন, অর্থ ছিনতাই এবং ৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ করে রাখার মতো জঘন্য ঘটনা কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। চবি সাদা দল এই অন্যায়, অগণতান্ত্রিক ও অসভ্যোচিত কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আজকের এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন বানচাল করার একটি পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত থাকা এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরো বিলম্বিত করে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার এ প্রবণতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। শিক্ষাঙ্গন জ্ঞানচর্চার পবিত্র ক্ষেত্র, কোনোভাবেই সহিংসতার আখড়া হতে পারে না। আজকের ঘটনা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মর্যাদা ও ঐতিহ্যকে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেছে।
পোষ্য কোটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে মেধাই হওয়া উচিত প্রধান মানদণ্ড। তবে যেকোনো মতবিরোধের সমাধান হতে হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে, সহিংসতা দিয়ে নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাই, কিন্তু সহিংসতা ও নৈরাজ্যের কোনো প্রকার সমর্থন করি না।
হামলার ঘটনায় শাস্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আমরা উচ্চ আদালতের বিচারপতির নেতৃত্বে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে শিক্ষকদের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবেদন জানাই যেন রাবি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় এবং শিক্ষাঙ্গনে সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে চবি শিক্ষক সমাজের (সাদা দল) ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক শাহাদাত হোছাইন বলেন, “গতকাল (শনিবার) রাবি শিক্ষকদের উপর যে অমানবিক হামলা হয়েছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। উদ্ভুত এই পরিস্থিতি আসন্ন রাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রও হতে পারে। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে মেধাই হওয়া উচিত প্রধান মানদণ্ড। শিক্ষার্থীরা যে কোনো দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করতে পারে। তবে তা হওয়া উচিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, সহিংসতায় নয়।”
তিনি আরো বলেন, “এ ঘটনায় একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। একইসঙ্গে, শিক্ষকদের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির দাবি জানাই।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণত ন ত র ক প
এছাড়াও পড়ুন:
পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে কাফনের কাপড় জড়িয়ে আমরণ অনশনে এক শিক্ষার্থী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেছেন। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি মাথা ও শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন।
ওই শিক্ষার্থীর নাম আসাদুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অনশনের সময় তাঁর পেছনে রাখা ব্যানারে লেখা ছিল—‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নামক বিষফোঁড়া পুনর্বহাল রাখার প্রতিবাদে আমরণ অনশন ধর্মঘট’।
আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোষ্য কোটা নামক বিষফোঁড়া মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এটাকে নির্মূল করার জন্যই আমার এ কর্মসূচি। জুলাই আন্দোলনে যে কোটার বিরুদ্ধে এত রক্তপাত, এত মৃত্যু, স্বৈরশাসকের পতন হলো, সেই কোটা আবার ফিরেছে। আমি কোটার পক্ষে নই। যদি কোটা দেওয়া হয়, সেটা কৃষক-শ্রমিক-মজুরের সন্তানদের দেওয়া হোক। এই কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমার অনশন চলবে। আমি কোনো খাবার-পানি খাব না। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ আসেনি। রাতে এখানেই অবস্থান করব।’
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই প্রতিবাদ শুরু করেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পরও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, পোষ্য কোটা একটি মীমাংসিত ইস্যু। এটি অন্যায্য ও অযৌক্তিক একটি কোটা। তাঁরা প্রয়োজনে রক্ত দেবেন, তবু ক্যাম্পাসে এ কোটা ফিরতে দেবেন না। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন ঘিরে যখন ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তখন এ সিদ্ধান্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না বলে তাঁরা জানান।
কোটা পুনর্বহালের বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘোষিত ২১ সেপ্টেম্বরের রাকসু নির্বাচনে শাটডাউন কর্মসূচির প্রভাব পড়ার শঙ্কা ছিল। এ জন্য একাডেমিক কাউন্সিলের ভর্তি উপকমিটি এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা যা চান, সেটাই হবে। কারণ, তাঁরা শান্তিপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় চান।