পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের প্রতিবাদে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান আবু সাঈদ
Published: 21st, September 2025 GMT
কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের প্রতিবাদে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান। এ সময় পুলিশের গুলিতে আহত আবু সাঈদকে উদ্ধার করে আনতে গিয়ে নিজেও গুলিবিদ্ধ হন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ষষ্ঠ সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে শিক্ষার্থী মো.
সিয়াম আহসান বলেন, গত বছরের ১৬ জুলাই দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা রংপুরের জেলা স্কুলের সামনে একত্র হন। একপর্যায়ে তাঁরা রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে আগানো শুরু করেন। আনুমানিক বেলা ২টা ১০ মিনিটের সময় তাঁরা রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে অবস্থান করেন। তখন পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ক্যাডার বাহিনী তাঁদের ওপর হামলা চালায়।
সিয়াম আহসান বলেন, পুলিশ বাহিনী তাঁদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে, যার প্রতিবাদে আবু সাঈদ রাস্তার আইল্যান্ডের (সড়ক বিভাজক) পশ্চিম পাশে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটক বরাবর তাঁর দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান। পুলিশ বাহিনী থেকে তাঁকে গুলি করে। তখন তিনি (সিয়াম আহসান) বিয়াম শপিং কমপ্লেক্সের সামনে রাস্তার পূর্ব পাশে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে তিনি আবু সাঈদকে দেখতে পারছিলেন।
গুলি খেয়ে আবু সাঈদ তাঁর ব্যালেন্স (ভারসাম্য) হারিয়ে আইল্যান্ডের পূর্ব পাশে চলে আসেন উল্লেখ করে সিয়াম আহসান বলেন, আবু সাঈদকে বাঁচানোর জন্য তিনি এগিয়ে যান। তখন তাঁকে (আবু সাঈদ) তিনি তুলে তাঁর ডান পাশে ঘুরিয়ে নেন। পুলিশ আবারও গুলি করলে তিনি আহত হন। তাঁর বাঁ পাশের পুরো শরীর গুলিবিদ্ধ হয়।
এ সময় সিয়াম আহসান তাঁর শরীরের বাঁ পাশে গুলির ক্ষতচিহ্ন ট্রাইব্যুনালকে দেখান।
জবানবন্দিতে সিয়াম আহসান আরও বলেন, আবু সাঈদ আবারও ভারসাম্য হারিয়ে তাঁর হাত থেকে পড়ে যান। তখন তাঁর (আবু সাঈদ) শরীরের সামনের অংশে প্রচণ্ড পরিমাণে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। সঙ্গে থাকা আন্দোলনকারী ও বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন, তৎকালীন এসি (সহকারী পুলিশ কমিশনার) আরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল এসে আবু সাঈদ ও তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে আহত করে এবং আবু সাঈদের মাথার পেছনে আঘাত করে।
আরও পড়ুনআবু সাঈদ হত্যায় শেখ হাসিনাকে দায়ী করলেন শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু০৬ আগস্ট ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স য় ম আহস ন র স মন
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে ব্রিটেন সময় নিলো ১০৮ বছর
১০৮ বছর আগে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোড়া ইসরায়েলের জন্মের ঘোষণা দিয়েছিল ব্রিটেন। এই শতবর্ষে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল, বাস্তুচ্যুত করেছে লাখ লাখ মানুষকে। ফিলিস্তিনিদের কান্না ব্রিটিশরা কখনোই শোনেনি। আজ ফিলিস্তিন যখন ধ্বংসের দোরগোড়ায় তখন ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলো ব্রিটেন।
১৯১৭ সালের ২রা নভেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বেলফোর স্বাক্ষরিত একটি ঘোষণাপত্রে ফিলিস্তিনে ইহুদি জনগণের জন্য একটি জাতীয় আবাসভূমি (জাতীয় রাষ্ট্র) প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটেনের সমর্থন দেয়। এই ঘোষণাটি জায়নিস্ট ফেডারেশন অব গ্রেট ব্রিটেন এন্ড আয়ারল্যান্ডের নেতা লিয়োনেল ওয়াল্টার রথচাইল্ডকে পাঠানো একটি চিঠির মাধ্যমে জারি করা হয়েছিল। এই ঘোষণাটি ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের পথ খুলে দেয়। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের বদৌলতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইসরায়েল রাষ্ট্র।
১৯৪৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় দেড় লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। শুধুমাত্র ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এই পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৬৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। সম্প্রতি গাজা সিটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরায়েল। গাজার কেন্দ্রীয় শহর থেকে বাসিন্দাদের বের করে উপকূলীয় এলাকায় যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার রবিবার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত ইসরায়েল এবং একটি কার্যকর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র - এই মুহূর্তে আমাদের কাছে এর কোনটিই নেই। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার মুহূর্ত এখন এসে গেছে। তাই, আজ, শান্তি এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের আশা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য, এই মহান দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি স্পষ্টভাবে বলছি যে যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।”
যুক্তরাজ্য সরকার জুলাই মাসে বলেছিল, তারা সর্বাধিক প্রভাবের একটি অনুমিত মুহূর্ত পর্যন্ত স্বীকৃতি স্থগিত রাখার দীর্ঘস্থায়ী পদ্ধতি পরিবর্তন করবে - যদি না ইসরায়েল গাজায় তার গণহত্যা যুদ্ধ বন্ধ করে, একটি দীর্ঘমেয়াদী টেকসই শান্তি প্রক্রিয়ায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় যা একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান প্রদান করে এবং ছিটমহলে আরো ত্রাণ প্রদানে সহায়তা করে।
কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে গাজার বিপর্যয়কর পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। কারণ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা শহরকে দখল করার জন্য পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করে চলেছে, একই সাথে ছিটমহলের দুর্ভিক্ষপীড়িত জনগোষ্ঠীকে অনাহারে এবং বাস্তুচ্যুত করে চলেছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীর জুড়ে ইসরায়েলি সৈন্যদের প্রতিদিনের অভিযান এবং বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণও অব্যাহত রয়েছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে সংযুক্ত করার এবং অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি সংলগ্ন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে ‘কবর’ দেওয়ার পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশন শুরু হওয়ার দুই দিন আগে কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াও আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এরপরই ব্রিটেন এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
ঢাকা/শাহেদ