বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, শুধু বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা নন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও যাঁরা ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করতে চাইছেন, তাঁরা সবাই নির্বাচনের অপেক্ষায় আছেন।

আমীর খসরু বলেন, ‘একেবারে পরিষ্কার ভাষায় বলছি, তাঁদের (বিদেশি বিনিয়োগকারী) সমস্ত সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এবং নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে তাঁদের যে বিনিয়োগের বিষয়টা বাংলাদেশের ব্যবসায়ী এবং বিদেশিরা সবাই অপেক্ষা করছেন, একটা নির্বাচনের পর বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে অনেকের উৎসাহ আছে। সবাই অপেক্ষা করছেন নির্বাচনের জন্য।’

আজ রোববার বিকেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির নেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতিনিধিদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিকেল পাঁচটায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এই বৈঠক প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এখানে দুটি কারণ আছে। একটা হচ্ছে, আমাদের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন (স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ)। আরেকটা হচ্ছে, আমাদের লেবার (শ্রম) ইস্যু।’

আরও পড়ুনএলডিসি উত্তরণ পেছানো কতটা বাস্তবসম্মত১৭ আগস্ট ২০২৫

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো শুনেছি এবং এখান থেকে যেটা প্রতীয়মান হয় যে এই মুহূর্তে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে যাওয়া বাংলাদেশের বর্তমান এবং আগামী দিনের ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে না।’

বিগত দিনে এলডিসি উত্তরণ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে বলেও বক্তব্য তুলে ধরেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অর্থনীতি, বিনিয়োগ, ব্যবসা, বাণিজ্যে এগিয়ে যেতে চাইলে এই মুহূর্তে এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এলডিসি নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতির বিষয় নিয়ে জাতিসংঘকে একটি চিঠি দেওয়া দরকার বলেও জানান আমীর খসরু।

এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত নন

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় কনসার্ন হচ্ছে, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের ডিফামেন্ট নিয়ে কথাবার্তা বলা। আরেকটা হচ্ছে লেবার ল অ্যামেন্ডমেন্ট (ন্যূনতম ২০ জন শ্রমিকের সায় থাকলেই ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে, এমন বিধান)।’ এসব বিষয়ে বিএনপি মহাসচিবের মাধ্যমে বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টার নজরে আনতে আজ বিএনপির সঙ্গে বৈঠকটি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নিউইয়র্ক যাচ্ছেন। তাই তিনি (মির্জা ফখরুল) তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবেন। তাঁর মাধ্যমে আমরা এই বার্তাটা প্রধান উপদেষ্টার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। এলডিসি থেকে উত্তরণ আমরা স্থগিত করতে চাই না, মাত্র তিন বছরের জন্য পিছিয়ে দিতে চাই। আর এটি লাগবে কারণ, আমরা এখনো এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুত না।’

বৈঠকে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি ফজলে শামীম এহসান এবং নেক্সাস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন২০ শ্রমিক মিলেই ট্রেড ইউনিয়ন, শিল্পকারখানায় বিশৃঙ্খলার শঙ্কা০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য ব এনপ র র জন য এলড স

এছাড়াও পড়ুন:

তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে চায় আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সঙ্গে বৈঠক করেছে। এতে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতের ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে অবহিত হওয়ার চেষ্টা করে আইএমএফের প্রতিনিধিদল।

পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে আজ বুধবার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিজিএমইএর নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইনামুল হক খান, সহসভাপতি মো. রেজোয়ান সেলিম, ভিদিয়া অমৃত খান, পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা, রশিদ আহমেদ হোসাইনী প্রমুখ। অন্যদিকে আইএমএফের প্রতিনিধিদলে ছিলেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ কিয়াও চেন, জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ রুইফেং ঝাং ও অর্থনীতিবিদ আয়া সাইদ।

উভয় পক্ষের আলোচনায় পোশাক রপ্তানিতে মার্কিন শুল্কের সম্ভাব্য প্রভাব, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রভাব, শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং মূল্য সংযোজিত পণ্য বৈচিত্র্যকরণের কৌশল গুরুত্ব পায়। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সম্ভাব্য প্রভাব, ব্যবসায়ের পরিচালন ব্যয় কমানো ও ব্যবসা সহজীকরণের জন্য করণীয় বিষয়েও আলোচনা হয়।

আইএমএফের প্রতিনিধিদের কাছে জাতীয় অর্থনীতিতে তৈরি পোশাকশিল্পের অবদানসহ শিল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিজিএমইএর নেতারা। তাঁরা শিল্পের কৌশলগত রূপকল্প তুলে ধরে জানান, পোশাকশিল্প বর্তমানে শ্রমনির্ভর মডেল থেকে বেরিয়ে এসে মূল্য সংযোজিত পণ্য, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত মানোন্নয়নের মাধ্যমে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে কৃত্রিম তন্তু ও টেকনিক্যাল টেক্সটাইলভিত্তিক পোশাক তৈরির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

বিজিএমইএ নেতারা জানান, তাঁদের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ইতিমধ্যে তৈরি পোশাকশিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ, বন্দর ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার উন্নয়ন, কাস্টমস ও বন্ড প্রক্রিয়া সহজীকরণ, সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছেন। এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণের পর শুল্কসুবিধা বজায় রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ), যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) সই করার বিষয়ে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে চায় আইএমএফ