গণ–অভ্যুত্থানে বিদেশি শক্তির ইন্ধন ছিল না: নাহিদ ইসলাম
Published: 22nd, September 2025 GMT
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে বিদেশি ‘শক্তির’ ইন্ধন থাকার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা অসত্য বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্র নিযুক্ত আসামিপক্ষের আইনজীবী আমির হোসেন জেরা করেন তাঁকে।
জেরার এক পর্যায়ে নাহিদকে আসামিপক্ষের আইনজীবী প্রশ্ন করেন, ‘দেশি-বিদেশি শক্তির ইন্ধন ছিল বিধায় আপনারা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।’
জবাবে নাহিদ বলেন, এ কথা সত্য নয়।
এরপর নাহিদকে আইনজীবী প্রশ্ন করেন, ‘৩ আগস্ট (২০২৪ সাল) সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ছিল আপনাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফলশ্রুতি।’
জবাবে নাহিদ বলেন, এ কথাও সত্য নয়।
তখন আইনজীবী বলেন, জুলাই আন্দোলনের পেছনে দেশি-বিদেশি শক্তির হাত ছিল।
নাহিদের জবাব ছিল আগের মতোই—এ কথাও সত্য নয়।
এ সময় প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষ) পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর মো.
এরপর নাহিদের উদ্দেশে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেননি। তখন নাহিদ বলেন, এ কথা সত্য নয়।
পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবার বলেন, পালিয়ে নয়, বাধ্য হয়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। তখন নাহিদ বলেন, এটাও সত্য নয়। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন।
যে মামলায় নাহিদকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জেরা করেছেন, সেই মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও আসামি। এর মধ্যে মামুন দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
ষড়যন্ত্রের কিছু নেইজেরার মাধ্যমে নাহিদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। জেরা শেষে গতকাল দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সে সময় নাহিদকে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। কিন্তু পতনের আগে ৪ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সরকারপ্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ জায়গাটা ধরেই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তাহলে ষড়যন্ত্র বা পরিকল্পনা আগে থেকেই হয়েছে কি না?
জবাবে নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সে সময় জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। ১৬ বছর ধরে ভোটাধিকার হরণ করে, নাগরিক অধিকার হরণ করে তারা ক্ষমতায় ছিল। শান্তিপূর্ণ জুলাই–আগস্টের আন্দোলনে গুলি চালিয়েছে, হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে এক দফা ঘোষণা করা, সরকার উৎখাত করার প্রস্তুতি নেওয়াটা বৈধ। এখানে ষড়যন্ত্রের কিছু নেই। এটা জনগণের পক্ষ থেকে বৈধ ছিল। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে এসেছিল, জীবন দিয়ে প্রতিরোধ করে এই সফলতা নিয়ে এসেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার এ মামলার জবানবন্দিতে নাহিদ বলেছেন, পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে তাঁরা নতুন সরকার গঠনের জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগেই তাঁকে নতুন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নিতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
‘আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনা উচিত’সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেন, ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনাকে আসামি করে এই মামলা চলমান। তাঁরা মনে করেন, এটা শুধু ব্যক্তিগত সংঘটিত অপরাধ নয়; বরং এটা রাজনৈতিক অপরাধ। ফলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। ট্রাইব্যুনালের সে সুযোগ আছে। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ এসেছে।
নাহিদ বলেন, শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে জনগণকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জনগণ প্রতিরোধ করে তাঁকে উৎখাত করেছে। ফলে এটা আওয়ামী লীগের সংঘটিত অপরাধ। আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে বিচারের আওতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে আনা উচিত।
পরে এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন এবং ১৪–দলীয় জোটের সম্পৃক্ততার অকাট্য প্রমাণ ট্রাইব্যুনালে আসছে। সুতরাং এই সিদ্ধান্ত (দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার) নেওয়ার সুযোগ আছে। প্রসিকিউশন এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এটা নিয়ে প্রসিকিউশন ভাববে।
‘মার্চ টু ঢাকা’নাহিদ ইসলামের পর এই মামলার ৪৮তম সাক্ষী হিসেবে গতকাল ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময়ে প্রায় ১৩৪ জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়।
গত বছরের ৩০ জুলাই সরকার পক্ষ থেকে ‘শোক দিবস’ ঘোষণা করা হলে আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন—এ বিষয়টি জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন আলী আহসান। তিনি বলেন, শোক দিবস পালন কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনকারীরা চোখেমুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ কর্মসূচি নেন এবং ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার আহ্বান জানানো হয়। এই কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে সাড়া পড়ে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের ফেসবুক প্রোফাইল লাল হয়ে যায়।
জবানবন্দিতে আলী আহসান উল্লেখ করেন, ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে আনার পরামর্শ সমন্বয়ক আসিফ (স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া) ও সাদিক কায়েমকে (এখন ডাকসুর ভিপি) তিনি দিয়েছিলেন। পরে ৪ আগস্ট রাতে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে এনে ৫ আগস্ট করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান আবু সাঈদজুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ষষ্ঠ সাক্ষী হিসেবে গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ জবানবন্দি দেন শিক্ষার্থী মো. সিয়াম আহসান। তিনি বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের প্রতিবাদে আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান। পুলিশ তাঁকে গুলি করে। আহত আবু সাঈদকে উদ্ধার করে আনতে গিয়ে নিজেও গুলিবিদ্ধ হন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন সিয়াম।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম ন হ দ বল ন সরক র র ৫ আগস ট ন কর ন প রস ত অপর ধ আওয় ম গতক ল আহস ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘নির্বাহী আদেশে নয়, আ.লীগকের আইনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করতে হবে’
বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছেন, “জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো দাবি করছে, দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ পিআরের পক্ষে রয়েছে। তাহলে সরাসরি নির্বাচনে আসতে আপনাদের ভয় কিসের? আপনারা নির্বাচনকে অনিশ্চিত করতে হাসিনার মতো ফাঁকা মাঠ তৈরির যে পায়তারা করছেন, বাংলাদেশের জনগণ তা মেনে নেবে না।”
তিনি বলেন, “আপনারা জাতীয় পার্টিসহ সব ফ্যাসিবাদী দলকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। আমরাও চাই, আওয়ামী লীগসহ ফ্যাসিবাদের দোসর সব দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তবে সেটা নির্বাহী আদেশে নয়, আইনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করতে হবে। যাতে পরে আবার আসার সুযোগ না থাকে।”
আরো পড়ুন:
নেত্রকোণায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির অর্ধশত কর্মী-সমর্থক
যেকোনো মূল্যে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ মসজিদ সংলগ্ন বাইতুস-শরফ মাদরাসা মাঠে আয়োজিত বিএনপির উপজেলা দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আজিজুল বারী হেলাল বলেন, “হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে গঠিত ইউনূস সরকার। তাই ইউনুস সরকারের সফলতা মানে বাংলাদেশের সফলতা। ষড়যন্ত্র করে এই সরকারকে হারানো যাবে না। ষড়যন্ত্রের কাছে এ দেশের জনগণ মাথা নত করবে না।”
জামায়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিতে মারাত্মক জীবাণু যদি থাকে, তা হলো জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ। কোরামীন দিয়ে একটি দলকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। একবার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রের স্বার্থে তা করেছিলেন।”
আসন্ন দুর্গাপূজা প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, “বিরাট একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে দুর্গাপূজা উৎসবকে কেন্দ্র করে। যাতে কোনো প্রকার অন্তর্র্বতী সরকার ও বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট না করতে পারে। সে জন্য বিএনপির সকল নেতাকর্মীদের মণ্ডপে মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করতে হবে। হিন্দুরা বিএনপিকে ভোট দেয় না, এই ধারণাটি ভুল। বিএনপি হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের মিলনস্থল।”
আজিজুল বারী হেলাল বলেন, “গত ৫০ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হিন্দুরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের নজির স্থাপনের আহ্বান জানাই।”
সম্মেলনে সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন- দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান, অ্যাডভোকেট অহিদুজ্জামান দিপু, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, সদস্য সচিব মোজাফফর রহমান আলমসহ দলীয় নেতারা।
ঢাকা/শহিদুল/মাসুদ