সোনারগাঁয়ে রাষ্ট্র কাঠামো গঠনের ৩১ দফা তৃণমূলে প্রচারের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হলো শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা। শুক্রবার(২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মুছারচর একাদশ বনাম লস্কর বাড়ী ফাইটার টিমের মধ্যে এ ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল। ফাইনাল ম্যাচের উদ্বোধন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সালাউদ্দিন সালু।

অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল বলেন,“শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা। তার রেখে যাওয়া আদর্শকে ধারন করেই আমরা জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।

রাষ্ট্র কাঠামো গঠনের ৩১ দফা বাস্তবায়নই দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের একমাত্র পথ। তৃণমূলে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করে এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে হবে। খেলাধুলা মানুষকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে, মাদক ও সামাজিক অপরাধ থেকে দূরে রাখে।”

তিনি আরও বলেন, “আজকের এ টুর্নামেন্ট তরুণদের মাঝে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। বিএনপি সবসময় শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রসারে কাজ করে এসেছে। অচিরেই এদেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, ইনশাআল্লাহ।”

এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরে ইয়াছিন নোবেল, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান শান্ত, সোনারগাঁও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক জাকারিয়া ভুইয়া, সোনারগাঁও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব নাছির উদ্দীন নাছির, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাজী পিয়ার হোসেন নয়ন, যুগ্ম আহ্বায়ক শফিক ভুইয়া, সাদিপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহেল আরমান, জামপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হাসু মিয়া, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আল আমিন অভি, সাদিপুর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব পরশ আহমেদ, সাদিপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন রনি প্রমুখ।

খেলা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। আয়োজকরা জানান, এই ধরনের ক্রীড়া আয়োজন তরুণ প্রজন্মকে দলীয় রাজনৈতিক চেতনার পাশাপাশি সুস্থ বিনোদন ও খেলাধুলার প্রতি উৎসাহিত করবে।

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ফ টবল ন র য়ণগঞ জ ছ ত রদল র স ব ক স ন রগ ফ ইন ল অন ষ ঠ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে

বাংলাদেশের সাংবিধানিক-রাজনৈতিক ইতিহাসে গত বৃহস্পতিবার দেওয়া রায়টি নিঃসন্দেহে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে ১৪ বছর আগে যে রায়ের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছিল, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সেই রায়কে সম্পূর্ণ বাতিল করে দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে ঘোষণা করেছেন—নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিধানাবলি পুনরুজ্জীবিত ও সক্রিয় করা হলো।

এ সিদ্ধান্ত কেবল একটি আইনি প্রক্রিয়ার সমাপ্তি নয়, এটি বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার সামনে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিল। কারণ, গত এক যুগে তিনটি জাতীয় নির্বাচন ঘিরে যে প্রশ্ন, বিতর্ক, বৈধতার সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল, তার কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিল তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার বিলোপ।

২০১১ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেন। পরবর্তীকালে সেই রায়ের ওপর ভিত্তি করেই সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবারের রায়ে আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সেই রায় ছিল ‘ত্রুটিপূর্ণ, কলুষিত ও অসাংবিধানিক’। এ রায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এখনই কার্যকর হবে না; বরং সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর ভবিষ্যতে তা প্রয়োগযোগ্য হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বহু টানাপোড়েনে ভরা। ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচন এই ব্যবস্থার অধীনই অনুষ্ঠিত হয় এবং সে নির্বাচনগুলো তুলনামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল। ধারণাটির জন্মই হয়েছিল ১৯৯১ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে, যখন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান। অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা কোনো দলীয় উদ্ভাবন নয়; বরং রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলার জন্য জাতীয় ঐকমত্য থেকে জন্ম নেওয়া একটি বিশেষ ব্যবস্থা।

২০১১ সালের পর থেকে এই ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন দাবি করে নাগরিক সমাজ, নানা সংগঠন ও রাজনৈতিক দল আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে গেছে। এ রায়কে তাই কেউ কেউ গণতন্ত্রের জন্য ‘ঐতিহাসিক পুনর্জাগরণ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের রায়ের মাধ্যমে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা নির্বাসনে গিয়েছিল। ফলে ভোটারবিহীন, একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচন এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন সংসদ তৈরি হয়েছিল।

সর্বোচ্চ আদালত গণতন্ত্রের স্বার্থে যে অবস্থান নিতে পারেন, এই রায় তার এক শক্তিশালী উদাহরণ। আমরা মনে করি, দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ককে আইনি ভিত্তিতে পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ তৈরি করেছে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরে আসায় নির্বাচন নিয়ে নতুন করে আস্থা সৃষ্টির পথ খুলছে। অতীতের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, দলীয় সরকারের অধীন নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।

এ রায় জনগণের আস্থাহীনতার সংকট কাটিয়ে গণতন্ত্রে নতুন ধারা ফিরিয়ে আনতে পারে—যদি রাজনৈতিক দলগুলো প্রজ্ঞা, উদারতা ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করে। রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এটি একটি পরোক্ষ সতর্কবার্তা—গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হলে রাষ্ট্রীয় কাঠামোও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে।

তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হবে না। এ ব্যবস্থার অতীতেও কিছু বিতর্ক ছিল। কিন্তু বিতর্ক সত্ত্বেও এটি ছিল একমাত্র প্রক্রিয়া, যা দলগুলোর মধ্যে আস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলো এই প্রক্রিয়াকে গ্রহণ করে পারস্পরিক আস্থা ফিরিয়ে আনবে কি না, এখন সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

আমাদের প্রত্যাশা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনরুজ্জীবন গণতন্ত্রের জন্য যে সুযোগ তৈরি করেছে, রাজনৈতিক দলগুলো সেটি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজে লাগাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজনৈতিক চেতনা ব্যবসার পরিণতি শুভ হয় না: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • নির্বাচন বিলম্বিত করতে গণতন্ত্রবিরোধীরা সক্রিয়: আমীর খসরু
  • তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরল, গণতন্ত্র ফিরবে কি
  • গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে
  • কেউ যেন নতুন করে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের রায় ইতিবাচক: রিজভী
  • ট্রাম্পকে বশে রাখতে সি চিন পিংয়ের তুরুপের তাস
  • তারেক রহমান সুস্থ থাকলে গণতন্ত্র টিকে থাকবে : মান্নান
  • গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার লাগবে: মাহমুদুর রহমান
  • ‘তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা পুনর্বহালে দেশ গণতন্ত্রের মহাসড়কে হাঁটবে’
  • তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা পুনর্বহাল হওয়ায় দেশ গণতন্ত্রের মহাসড়কে হাঁটবে: অ্যাটর্নি জেনারেল