উঁচু-নিচু পাহাড়ের ভেতর দিয়ে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক। সাপের মতো আঁকাবাঁকা সড়কটি দিয়ে যেতে দুপাশের সবুজ গাছপালা ও পাখির কিচিরমিচির ডাক যে কাউকেই মুগ্ধ করে। কক্সবাজারের রামু উপজেলায় অবস্থিত এই সড়কের নাম ‘গোয়ালিয়া-মরিচ্যা’ সড়ক। পর্যটননগর কক্সবাজারের এই এলাকা এখন পরিচিত পেয়েছে ‘মিনি বান্দরবান’ নামে। পর্যটকেরাও সাগর দেখার পাশাপাশি এলাকাটিতে গিয়ে খুঁজে পাচ্ছেন পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর আমেজ।

কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে দক্ষিণে টেকনাফের দিকে ১৮ কিলোমিটার গেলে সামনে পড়ে উখিয়ার রেজুখাল সেতু। সেতুর পূর্ব পাশে বিজিবির তল্লাশিচৌকি। পাশে টাঙানো একটি দিকনির্দেশক সাইনবোর্ডে লেখা—‘মিনি বান্দরবান’। নির্দেশনা অনুযায়ী সাইনবোর্ডের পূর্ব দিকে গেলেই ১২ কিলোমিটারের সড়কটি।

রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নে অবস্থিত এই সড়ক সম্প্রতি ঘুরে দেখা হয়। সড়কে গিয়ে দেখা যায় ‘মিনি বান্দরবান’ দেখতে খোলা জিপ, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল নিয়ে অসংখ্য পর্যটকের ভিড়। সড়কটির দুপাশে কোথাও সুপারিবাগান, কোথাও আবার ধান ও সবজির খেত। এ ছাড়া কিছু স্থানে রয়েছে ঘরবাড়ি। সড়কটি ধরে তিন কিলোমিটার যাওয়ার পর পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত ‘গোয়ালিয়া পার্ক’।

গোয়ালিয়া পার্কে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত, কেউ আবার চুপচাপ চারপাশের সবুজ পরিবেশ উপভোগ করছেন। পার্কের এক পাশে স্থাপন করা হয়েছে কাঠের চৌকি। এসব চৌকিতেও বসে রয়েছেন কিছু পর্যটক। পাশে চা-কফি ও খাবারের দোকানেও পর্যটকদের জটলা চোখে পড়ে।

একটি খোলা জিপ নিয়ে গোয়ালিয়া পার্কে আসেন ঢাকার আদাবর এলাকার ৩টি পরিবারের ১২ সদস্য। পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে ছবি তোলার সময় কথা হয় এই দলেরই এক সদস্য সাজিদুর রহমানের (৪৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যেতে মিনি বান্দরবান সাইনবোর্ডটি হঠাৎ চোখে পড়ে। এরপর এলাকাটি ঘুরতে এসেছি। পর্যটকদের মধ্যে যাঁরা কখনো তিন পার্বত্য জেলার—বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি—মনোরম দৃশ্য দেখেননি, তাঁদের অপূর্ণতা কিছুটা হলেও ঘোচাবে এই পর্যটন এলাকা।’

গোয়ালিয়া পার্কের উত্তর পাশে রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু আরেকটি পাহাড়। সেই পাহাড়ে ওঠার জন্য সিঁড়ি নেই। অনেক তরুণ-তরুণীকে দেখা গেল হেঁটে পাহাড়চূড়ায় উঠেছেন। মিনি বান্দরবানের মতো এই পাহাড়টিরও নাম দেওয়া হয়েছে ‘মিনি চিম্বুক’। পাহাড়ের ওপরে উঠে সাগর, সৈকত, ঝাউবাগান দেখা যায়। উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে থাকা উঁচু–নিচু পাহাড়সারি, রেজুখালও চোখে পড়ে।

সাজিদুর রহমান আরও বলেন, মেরিন ড্রাইভ সড়ক এমনিতেই আকর্ষণীয়। সাগরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে পাহাড়সারি, ঝরনা, পানের বরজ, সুপারিবাগানের দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এর সঙ্গে পথে ‘মিনি বান্দরবান’ পর্যটকদের নতুন কিছু দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।

দলের আরেক সদস্য বিলকিস আকতার (৩২) বলেন, বান্দরবানের তাঁর দুবার যাওয়া হয়েছে। দুবারই নীলাচল পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরে দেখেছেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নীলাচল প্রায় দুই হাজার ফুট উঁচুতে। সেখানে দাঁড়িয়ে চারপাশে যে দৃশ্য অবলোকন করা যায়, সে রকম দৃশ্য দেখা গোয়ালিয়াতে সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ‘গোয়ালিয়ার পাহাড় বড়জোর ৮০ ফুট হবে। এর সঙ্গে বান্দরবানের তুলনা চলে না। হয়তো দেখতে বান্দরবানের মতো লাগে বলেই মিনি বান্দরবান নাম দেওয়া হয়েছে।’

মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যেতে মিনি বান্দরবান সাইনবোর্ডটি হঠাৎ চোখে পড়ে। এরপর এলাকাটি ঘুরতে এসেছি। পর্যটকদের মধ্যে যাঁরা কখনো তিন পার্বত্য জেলার—বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি—মনোরম দৃশ্য দেখেননি, তাঁদের অপূর্ণতা কিছুটা হলেও ঘোচাবে এই পর্যটন এলাকা।সাজিদুর রহমান, পর্যটক

গোয়ালিয়া পার্কের উত্তর পাশে রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু আরেকটি পাহাড়। সেই পাহাড়ে ওঠার জন্য সিঁড়ি নেই। অনেক তরুণ-তরুণীকে দেখা গেল হেঁটে পাহাড়চূড়ায় উঠতে। মিনি বান্দরবানের মতো এই পাহাড়েরও নাম দেওয়া হয়েছে ‘মিনি চিম্বুক’। পাহাড়ের ওপরে উঠে সাগর, সৈকত ও ঝাউবাগান দেখা যায়। উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে থাকা উঁচু–নিচু পাহাড়সারি, রেজুখালও চোখে পড়ে।

পাহাড়চূড়ায় কথা হয় দিনাজপুরের মুহসিনা আক্তার ও তাঁর স্বামী মকবুল আহমদের সঙ্গে। তিন দিনের ভ্রমণে কক্সবাজারে এসে দ্বিতীয় দিনে তাঁরা মিনি বান্দরবান দেখতে আসেন। মকবুল আহমদ (৩২) বলেন, ‘বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড় সাত থেকে আট হাজার ফুট উঁচুতে। চান্দের গাড়ি (খোলা জিপ) নিয়ে সেখানে যেতে গা হিম হয়ে আসে। পথে পথে ঝরনা, পাহাড়িদের বাজার, টংঘর—কত কিছু রয়েছে। কিন্তু এখানে তার কিছুই নেই। তারপরও সমুদ্রসৈকত দেখতে আসা পর্যটকদের জন্য মিনি বান্দরবান আনন্দের মাত্রা কিছুটা বাড়াবে।’

নিরাপত্তা, থাকা-খাওয়া ও বিনোদনের ক্ষেত্র তৈরি করা গেলে মিনি বান্দরবানে লোকসমাগম আরও বাড়ত বলে জানান কয়েকজন পর্যটক। ফেনীর বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, তাঁরা চারজন ফেনী থেকে এসেছেন। মিনি চিম্বুকে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগের ইচ্ছা ছিল তাঁদের। কিন্তু পাহাড়ি এলাকাটিতে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় এর আগেই ফিরে যাচ্ছেন।

‘মিনি বান্দরবান’ এলাকা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন র স ইনব র ড পর যটক এল ক ট

এছাড়াও পড়ুন:

যুবদল নেতা রনির উদ্যোগে সড়ক সংস্কার

ফতুল্লার পঞ্চবটি থেকে বক্তাবলী সড়কের বেশ কিছু অংশের আরসিসি ঢালাই ভেঙ্গে গিয়েছিল বছর দুয়েক আগে। তবে সবচেয়ে বেহাল অবস্থা ছিল মুসলিমনগর দক্ষিণপাড়া জমজম জামে মসজিদের সামনের অংশ। সড়কের এ অংশটিতে তৈরি হয়েছিল বড় বড় বেশ কিছু গর্তের। বৃষ্টির কারনে ড্রেনের ময়লা পানিতে সড়কটি ডুবে যেতো। যার কারনে এখানে প্রতিদিন ছোট বড় যানবাহন উলটে গিয়ে মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হতো। দীর্ঘ ভোগান্তির পর অবশেষে ব্যাক্তি উদ্যোগে সড়কটি সংস্কার করে লাখো মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। আজ শুক্রবার বেলা ১২টায় দোয়ার মাধ্যমে সড়কটি সংস্কার করা অংশটি উদ্বোধন করা হয়েছে। 


এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, এনায়েতনগর ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক মনির হোসেন, সদস্য সচিব খায়রুল ইসলাম জসীম, কামাল মাদবর, নূর মোহাম্মদ মাদবর, দীন ইসলাম, মুসলিমনগর জমজম জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ইস্রাফিল, কোষাধ্যক্ষ উজ্জ্বল হোসেন, ফতুল্লা থানা বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান মুকুল, যুবদল নেতা খায়রুল ইসলাম প্রমুখ। 


এ সময় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মশিউর রহমান রনির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। 


রনি বলেন, বিএনপির কল্যানের রাজনীতি করে। আমাদের নেতা তারেক রহমান জনগনের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, আমি সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে আপনাদের এই সড়কটি সংস্কার করে দিয়েছি। আগামি দিনেও আপনাদের পাশে থাকতে চাই। আপনারা শুধু আমাদের সহযোগিতা করবেন এবং আগামি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চাই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুবদল নেতা রনির উদ্যোগে সড়ক সংস্কার
  • পর্যটকে পরিপূর্ণ কুয়াকাটা
  • পূজার ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকের ভিড়
  • সড়কে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, হুমকিতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পরিবেশ