কক্সবাজারের ‘মিনি বন্দরবান’ দেখতে কেমন
Published: 4th, October 2025 GMT
উঁচু-নিচু পাহাড়ের ভেতর দিয়ে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক। সাপের মতো আঁকাবাঁকা সড়কটি দিয়ে যেতে দুপাশের সবুজ গাছপালা ও পাখির কিচিরমিচির ডাক যে কাউকেই মুগ্ধ করে। কক্সবাজারের রামু উপজেলায় অবস্থিত এই সড়কের নাম ‘গোয়ালিয়া-মরিচ্যা’ সড়ক। পর্যটননগর কক্সবাজারের এই এলাকা এখন পরিচিত পেয়েছে ‘মিনি বান্দরবান’ নামে। পর্যটকেরাও সাগর দেখার পাশাপাশি এলাকাটিতে গিয়ে খুঁজে পাচ্ছেন পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর আমেজ।
কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে দক্ষিণে টেকনাফের দিকে ১৮ কিলোমিটার গেলে সামনে পড়ে উখিয়ার রেজুখাল সেতু। সেতুর পূর্ব পাশে বিজিবির তল্লাশিচৌকি। পাশে টাঙানো একটি দিকনির্দেশক সাইনবোর্ডে লেখা—‘মিনি বান্দরবান’। নির্দেশনা অনুযায়ী সাইনবোর্ডের পূর্ব দিকে গেলেই ১২ কিলোমিটারের সড়কটি।
রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নে অবস্থিত এই সড়ক সম্প্রতি ঘুরে দেখা হয়। সড়কে গিয়ে দেখা যায় ‘মিনি বান্দরবান’ দেখতে খোলা জিপ, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল নিয়ে অসংখ্য পর্যটকের ভিড়। সড়কটির দুপাশে কোথাও সুপারিবাগান, কোথাও আবার ধান ও সবজির খেত। এ ছাড়া কিছু স্থানে রয়েছে ঘরবাড়ি। সড়কটি ধরে তিন কিলোমিটার যাওয়ার পর পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত ‘গোয়ালিয়া পার্ক’।
গোয়ালিয়া পার্কে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত, কেউ আবার চুপচাপ চারপাশের সবুজ পরিবেশ উপভোগ করছেন। পার্কের এক পাশে স্থাপন করা হয়েছে কাঠের চৌকি। এসব চৌকিতেও বসে রয়েছেন কিছু পর্যটক। পাশে চা-কফি ও খাবারের দোকানেও পর্যটকদের জটলা চোখে পড়ে।
একটি খোলা জিপ নিয়ে গোয়ালিয়া পার্কে আসেন ঢাকার আদাবর এলাকার ৩টি পরিবারের ১২ সদস্য। পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে ছবি তোলার সময় কথা হয় এই দলেরই এক সদস্য সাজিদুর রহমানের (৪৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যেতে মিনি বান্দরবান সাইনবোর্ডটি হঠাৎ চোখে পড়ে। এরপর এলাকাটি ঘুরতে এসেছি। পর্যটকদের মধ্যে যাঁরা কখনো তিন পার্বত্য জেলার—বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি—মনোরম দৃশ্য দেখেননি, তাঁদের অপূর্ণতা কিছুটা হলেও ঘোচাবে এই পর্যটন এলাকা।’
গোয়ালিয়া পার্কের উত্তর পাশে রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু আরেকটি পাহাড়। সেই পাহাড়ে ওঠার জন্য সিঁড়ি নেই। অনেক তরুণ-তরুণীকে দেখা গেল হেঁটে পাহাড়চূড়ায় উঠেছেন। মিনি বান্দরবানের মতো এই পাহাড়টিরও নাম দেওয়া হয়েছে ‘মিনি চিম্বুক’। পাহাড়ের ওপরে উঠে সাগর, সৈকত, ঝাউবাগান দেখা যায়। উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে থাকা উঁচু–নিচু পাহাড়সারি, রেজুখালও চোখে পড়ে।সাজিদুর রহমান আরও বলেন, মেরিন ড্রাইভ সড়ক এমনিতেই আকর্ষণীয়। সাগরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে পাহাড়সারি, ঝরনা, পানের বরজ, সুপারিবাগানের দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এর সঙ্গে পথে ‘মিনি বান্দরবান’ পর্যটকদের নতুন কিছু দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।
দলের আরেক সদস্য বিলকিস আকতার (৩২) বলেন, বান্দরবানের তাঁর দুবার যাওয়া হয়েছে। দুবারই নীলাচল পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরে দেখেছেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নীলাচল প্রায় দুই হাজার ফুট উঁচুতে। সেখানে দাঁড়িয়ে চারপাশে যে দৃশ্য অবলোকন করা যায়, সে রকম দৃশ্য দেখা গোয়ালিয়াতে সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ‘গোয়ালিয়ার পাহাড় বড়জোর ৮০ ফুট হবে। এর সঙ্গে বান্দরবানের তুলনা চলে না। হয়তো দেখতে বান্দরবানের মতো লাগে বলেই মিনি বান্দরবান নাম দেওয়া হয়েছে।’
মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যেতে মিনি বান্দরবান সাইনবোর্ডটি হঠাৎ চোখে পড়ে। এরপর এলাকাটি ঘুরতে এসেছি। পর্যটকদের মধ্যে যাঁরা কখনো তিন পার্বত্য জেলার—বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি—মনোরম দৃশ্য দেখেননি, তাঁদের অপূর্ণতা কিছুটা হলেও ঘোচাবে এই পর্যটন এলাকা।সাজিদুর রহমান, পর্যটকগোয়ালিয়া পার্কের উত্তর পাশে রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু আরেকটি পাহাড়। সেই পাহাড়ে ওঠার জন্য সিঁড়ি নেই। অনেক তরুণ-তরুণীকে দেখা গেল হেঁটে পাহাড়চূড়ায় উঠতে। মিনি বান্দরবানের মতো এই পাহাড়েরও নাম দেওয়া হয়েছে ‘মিনি চিম্বুক’। পাহাড়ের ওপরে উঠে সাগর, সৈকত ও ঝাউবাগান দেখা যায়। উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে থাকা উঁচু–নিচু পাহাড়সারি, রেজুখালও চোখে পড়ে।
পাহাড়চূড়ায় কথা হয় দিনাজপুরের মুহসিনা আক্তার ও তাঁর স্বামী মকবুল আহমদের সঙ্গে। তিন দিনের ভ্রমণে কক্সবাজারে এসে দ্বিতীয় দিনে তাঁরা মিনি বান্দরবান দেখতে আসেন। মকবুল আহমদ (৩২) বলেন, ‘বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড় সাত থেকে আট হাজার ফুট উঁচুতে। চান্দের গাড়ি (খোলা জিপ) নিয়ে সেখানে যেতে গা হিম হয়ে আসে। পথে পথে ঝরনা, পাহাড়িদের বাজার, টংঘর—কত কিছু রয়েছে। কিন্তু এখানে তার কিছুই নেই। তারপরও সমুদ্রসৈকত দেখতে আসা পর্যটকদের জন্য মিনি বান্দরবান আনন্দের মাত্রা কিছুটা বাড়াবে।’
নিরাপত্তা, থাকা-খাওয়া ও বিনোদনের ক্ষেত্র তৈরি করা গেলে মিনি বান্দরবানে লোকসমাগম আরও বাড়ত বলে জানান কয়েকজন পর্যটক। ফেনীর বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, তাঁরা চারজন ফেনী থেকে এসেছেন। মিনি চিম্বুকে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগের ইচ্ছা ছিল তাঁদের। কিন্তু পাহাড়ি এলাকাটিতে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় এর আগেই ফিরে যাচ্ছেন।
‘মিনি বান্দরবান’ এলাকা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন র স ইনব র ড পর যটক এল ক ট
এছাড়াও পড়ুন:
ট্যুরিস্ট গাইডদের স্মারকলিপি, রেমাক্রি ও নাফাখুম খুলে দেওয়ার দাবি
বান্দরবানের থানচি উপজেলার আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য নাফাখুম, রেমাক্রিসহ সব পর্যটন স্থান খুলে দেওয়ার দাবিতে ট্যুরিস্ট গাইড সমিতির নেতারা স্মারকলিপি দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, সব গন্তব্য খুলে না দেওয়ায় পর্যটননির্ভর উপজেলার মানুষ চরম অর্থনৈতিক সংকটে দিনযাপন করছেন।
আজ রোববার বেলা তিনটায় থানচি থেকে পর্যটনসংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের একটি দল জেলা শহরে আসে। এদের মধ্যে ট্যুরিস্ট গাইড, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিক, নৌকা ও যানবাহন চালক সমিতির নেতা-কর্মীরা রয়েছেন। তাঁরা মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। জেলা প্রশাসকের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন।
থানচি ট্যুরিস্ট গাইড কল্যাণ সমিতির সভাপতি পাইথুই খেয়াং-এর স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, থানচিতে কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসীরা গত বছরের ৩ এপ্রিল ব্যাংক ডাকাতি করে। তখন থেকে থানচি উপজেলায় পর্যটন বন্ধ রয়েছে। গত ৫ জুন উপজেলাসংলগ্ন তুমাতঙ্গী ও তিন্দু বড় পাথর এলাকা থেকে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ রেমাক্রি ঝরনা, নাফাখুম ও আরও অনেক পর্যটন গন্তব্য থেকে পর্যটক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়নি। এর ফলে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ট্যুরিস্ট গাইড, যানবাহন ও নৌকাচালক, হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিক-কর্মচারীরা চরম আর্থিক সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ট্যুরিস্ট গাইড কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মামুন বলেন, এমনিতে অধিকাংশ পর্যটন আকর্ষণ বন্ধ হওয়ায় তাঁরা সংকটে রয়েছেন, তারপর আবার নিরাপত্তার নামে পর্যটকদের হয়রানি, ট্যুরিস্ট গাইডদের হেনস্তা করা হয়। এ জন্য ট্যুরিস্ট গাইডরা গত বুধবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন।
জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, তিনি ট্যুরিস্ট গাইডদের কথা শুনেছেন। থানচির সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চেয়েছেন। স্মারকলিপিতে দাবি করা পর্যটন গন্তব্য খুলে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন।