রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় আম্মার বললেন, ‘আমি রাকসুর নির্বাচিত জিএস’
Published: 10th, November 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মারের মধ্যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। গতকাল রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের রেজিস্ট্রারের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার একটি ভিডিও রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুরে রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সভা করছিলেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম। পরে সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সভা করছেন অভিযোগ তুলে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন সালাহউদ্দিন আম্মার। সেখানে তাঁরা একপর্যায়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এনামুল হকের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন বিভাগটির শিক্ষার্থীর। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ওই শিক্ষকের অব্যাহতির চিঠিতে সই করেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। চিঠিটি রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে গতকাল ওই বিভাগে পাঠানোর কথা ছিল। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের ফলাফলের অগ্রগতি না পাওয়ায় রাকসু নেতাদের কাছে যান। জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বিষয়টি নিয়ে গতকাল দুপুরে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলতে যান। সেখানে আম্মারকে জানানো হয় রেজিস্ট্রার ‘মহানগর বিএনপির’ নেতাদের সঙ্গে সভা করছেন। বিষয়টি শুনে সভাকক্ষে অনুমতি ছাড়াই ঢোকেন সালাহউদ্দিন।
ভিডিওতে দেখা যায়, সালাহউদ্দিন আম্মার ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি স্যার ভেতরে আসব না?’ জবাবে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘তোমাকে আমি বাইরে ১০ মিনিট ওয়েট (অপেক্ষা) করতে বলেছি।’ এরপর আম্মার বলেন, ‘আপনি স্যার চিঠি (চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতিকে অপসারণের চিঠি) আটকে রাখছেন।’ রেজিস্ট্রার বলেন, ‘এই বেয়াদব ছেলে, কীসের চিঠি আটকে রাখছি আমি?’ তখন আম্মার বলেন, ‘বেয়াদব তো আমি। ডেফিনেটলি বেয়াদব।’ রেজিস্ট্রার বলেন, ‘আমার সঙ্গে বেয়াদবি কেন? তুমি কে ওই ডিপার্টমেন্টের? তখন সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমি কে মানে? আমি রাকসুর নির্বাচিত জিএস।’
এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, রেজিস্ট্রার প্রায়ই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং সেদিনও তাঁকে বারবার ‘গেট আউট’ বলে চিৎকার করেন। দায়িত্বের জায়গা থেকে তিনি ঘটনাটি যাচাই করতে গিয়েছিলেন, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়।
অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম বলেন, ওই সময় সালাহউদ্দিন আম্মার অনুমতি ছাড়াই তাঁর দপ্তরে ঢুকে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগে সভাপতি নিয়োগপ্রক্রিয়া তখন চলমান ছিল, কোনো ফাইল আটকে রাখা হয়নি। শিক্ষার্থীসংক্রান্ত বিষয় হলে রাকসুর নেতারা আসতে পারেন; কিন্তু প্রশাসনিক নিয়োগ নিয়ে তাঁদের হস্তক্ষেপ করাটা অনুচিত।
এ ঘটনায় নিজেদের অবস্থান জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজশাহী মহানগর শাখার আহ্বায়ক মোবাশ্বের রাজ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সালাহউদ্দিন আম্মার ও রেজিস্ট্রার স্যারের বাগ্বিতণ্ডার সময় সেখানে বিএনপির কেউ ছিল না। আমার উপস্থিতিতে রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতৃত্ব উপস্থিত ছিল। আমরা শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম; কিন্তু রেজিস্ট্রার স্যারের পিএস সম্ভবত আমাদের বিএনপির কর্মী ভেবে ভুল তথ্য দেন, এখান থেকেই ভুল–বোঝাবুঝি শুরু।’
এনসিপি নেতাদের সঙ্গে রেজিস্ট্রারের সভাকে বিএনপিকে জড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ (রাহী)। তিনি বলেন, ‘রেজিস্ট্রার অফিসে আম্মার ও শিক্ষক পরস্পরকে ধমকাচ্ছেন, অথচ বিএনপির নাম টেনে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সেখানে বিএনপির কেউ ছিল না। এনসিপির সঙ্গে নিয়মিত দেখা যায় আম্মারকে, অথচ এখন তিনি তাঁদের চেনেন না।’
বিষয়টি নিয়ে রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ) ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে তাঁদের এ আচরণ পরিবর্তন হওয়াটা সমীচীন ছিল; কিন্তু এখনো প্রশাসনের কারও কারও আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা রাকসুর প্রতিনিধি নির্বাচিত করে তাঁদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছেন। এ জন্য তাঁরা যেমন শিক্ষার্থীদের বিষয়ে খ্যাপা, তেমনি তাঁদের প্রতিনিধিদের ব্যাপারেও।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন আম ম র ব ব এনপ র এনস প গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
জবির ছাত্রী হলে ‘প্রভোস্টের ছাত্রী’ ত্রাস
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র ছাত্রী হল নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলে ক্যান্টিনের খাবারে পোকা পাওয়া নিয়ে প্রতিবাদ করার জেরে এক শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে ‘প্রভোস্টের ছাত্রী’র বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ফাতেমা তুজ জোহরা ইমু বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি হল ডিবেটিং সোসাইটির নেত্রী। ভুক্তভোগী হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী উম্মে মাবুদা।
আরো পড়ুন:
৩ দাবিতে আবারো রাস্তায় রুয়েট শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব পরিবহন নিশ্চিতের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
জানা গেছে, গত ৩ নভেম্বর রাতে ক্যান্টিনে পরিবেশিত বরবটি-আলু ভাজিতে পোকা পাওয়া যায়। বিষয়টি সমাজকর্ম বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী উম্মে মাবুদা তার ফেসবুকে প্রমাণসহ পোস্ট করেন। পোস্টটি ভাইরাল হলে বহু শিক্ষার্থী এতে সহমত প্রকাশ করেন। পোস্টের পরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্ত ইমু ভুক্তভোগী মাবুদাকে একাধিকবার পোস্ট ডিলিট করতে চাপ দেন এবং প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বারবার তাগাদা দেন।
তবে ভুক্তভোগী মাবুদা ইন্টার্নশিপে থাকা অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে দেখা করতে না পারায় গত ৬ নভেম্বর সকালে ইমু সরাসরি তার কক্ষে গিয়ে অপমানজনক ভাষায় কথা বলেন।
ভুক্তভোগী মাবুদা বলেন, “তিনি রুমে এসে চিৎকার করে বলেন— ‘পোস্টটা কেন দিলি? ভোটের প্রসঙ্গ কেন আনলি? এখনই গিয়ে পোস্ট ডিলিট কর, নতুন করে ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দিবি।’ তিনি আমাকে ভয় দেখিয়েছেন যে আমার পোস্টে তার ভোট নষ্ট হবে।”
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আঞ্জুমান আরা পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। তিনি প্রাধ্যক্ষের বিভাগের ছাত্রী হওয়ায় গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে জোরপূর্বক ডিবেটিং সোসাইটির পদ দখল করেছেন এবং সেই পদ ব্যবহার করে হলে দীর্ঘদীন ধরেই প্রভাব বিস্তার করে আছেন। তিনি হলে এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ ও ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছেন।
ক্যান্টিনের খাবারের মান, রুম বণ্টন, এমনকি কোনো অভিযোগের বিষয়েও তার ‘শেষ কথা’ চলে। তিনি ছাত্রী হলের সবকিছুই প্রায় নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন হল প্রাধ্যক্ষের প্রশ্রয়ে। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে হলে ছাত্রী তুলে আসন ভাগাভাগিরও অভিযোগও করেন শিক্ষার্থীরা।
হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, ইমু দীর্ঘদিন ধরে হলে ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে ডেকে অপমান করেন ইমু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, “তিনি প্রাধ্যক্ষ ম্যাডামের বিভাগের ছাত্রী। এ কারণে যা খুশি করেন। অনেকে মুখ খুলতে পারে না।”
আরেকজন বলেন, “ডিবেটিং সোসাইটিতে তার নেতৃত্বই অবৈধ। নির্বাচন হয়নি, গঠনতন্ত্র মানা হয়নি। তিনি নিজেই দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন এবং সেই ক্ষমতা দেখিয়েই বাকি সব নিয়ন্ত্রণ করেন।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফাতেমাতুজ জোহরা ইমু বলেন, “হলের খাবারে মাঝে মাঝে পোকা পাওয়া যায়, এটা সত্যি। তবে ওই শিক্ষার্থী দুই জায়গায় ভিন্ন কথা বলেছে এবং ভোটের প্রসঙ্গ টেনেছে। আমি শুধু জানতে চেয়েছি কেন এমন পোস্ট দিল।” তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন ইমু।
তবে পোস্ট ও হুমকি বিষয়ে মাবুদার বলেন, “আমার পোস্টে কোনো ব্যক্তির নাম ছিল না। শুধু খাবারের মান নিয়ে বলেছি। ইমু আপু সেটাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানালেন। এখন যদি ভোটের আগে এমন আচরণ হয়, ভোটে জিতে গেলে কী হবে—তা সহজেই বোঝা যায়।”
মাবুদার পোস্টে সহমত প্রকাশ করে অনেক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেছেন, বিষয়টি ‘বাজে রাজনীতি’ এবং ইমুর আচরণের কারণে হলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সন্ধী লেখেন, “পুরো প্রসঙ্গটাই খাবার নয়, ভোট। কেউ ভালো কিছু বলতে গেলেই তাকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। এটা খুব নোংরা প্রবণতা।”
সার্বিক বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আঞ্জুমান আরা বলেন, “নির্বাচন সামনে রেখে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। যদি ইমু সত্যিই তাকে (মাবুদা) ক্ষমা চাইতে বলতে গিয়ে চাপ সৃষ্টি করে থাকে, তাহলে তাকেও ক্ষমা চাইতে হবে।”
তিনি বলেন, “খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ এসেছে, বরবটি-কলমিশাক নিষিদ্ধ করা ছিল। তবুও কেন আনা হলো সেটিও তদন্ত করা হবে। রবিবার (৯ নভেম্বর) বৈঠক ডাকা হয়েছে।”
অভিযুক্ত ইমুর বিষয়টি স্বীকার করে প্রাধ্যক্ষ বলেন, “আমি শুনেছি ইমু মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। এ বিষয়ে হলে কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। প্রয়োজন হলে কঠোর ব্যবস্থা নেব।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী