দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘দুদকে শুধু দীর্ঘসূত্রতা নয়, দুদকে দুর্নীতিও আছে।’ আজ রোববার দুপুরে সিলেটে দুদকের গণশুনানি শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

নগরের রিকাবীবাজার এলাকার কবি নজরুল মিলনায়তনে দুদকের সমন্বিত সিলেট জেলা কার্যালয়ের আয়োজনে এবং জেলা প্রশাসন ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সহযোগিতায় গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া গণশুনানিতে ৭৩টি অভিযোগের বিষয়ে শুনানি হয়। এতে অভিযুক্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

গণশুনানি শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘যাঁরা সেবাদাতা, তাঁরা মূলত সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী। সরকারি যত প্রতিষ্ঠান আছে, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ আছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সেই বিষয়গুলো সমাধানের চেষ্টা করে যাব। আমরা নিয়মিত রেইড করে যাচ্ছি। আমাদের এই হস্তক্ষেপে কিছুটা তো উপকার হচ্ছে।’

সিলেটের সাদাপাথর লুট কাণ্ডের ঘটনায় দুদকের প্রাথমিক প্রতিবেদনে রাজনীতিবিদদের নাম আসা–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক প্রতিবেদনের পর অনুসন্ধান শুরু করি। এটা তো সত্য যে সাদাপাথর সেখানে ছিল না। পরবর্তী সময়ে ফিরে এসেছে। দিস ইজ ট্রু। কিন্তু ছিল না, এটা তো সত্য। কাজেই এখানে যাঁরা জড়িত, তাঁদের নাম আপনারা আমাদের চেয়ে আরও বেশি করে জানেন, ভালো করেই জানেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আপনারা কী তাঁদের পার্লামেন্টে চান, নাকি চান না?’

এর আগে সকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আলমপুরে দুদকের বিভাগীয় কার্যালয় ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী হলফনামায় প্রার্থীদের দেশের সম্পদের পাশাপাশি বিদেশের সম্পদের হিসাব বিবরণী দিতে হবে। আমরা সম্পদের বিবরণী চাচ্ছি, সেখানে বিদেশি সম্পদের হিসাব না দিলে অন্যায় হবে। পাশাপাশি অনুপার্জিত সম্পদ যাঁদের থাকবে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ সময় দুদকের নানা সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, দুদকে তাঁর সহকর্মীরা অনেক দুর্নীতির তথ্য চাপা দেন, গণমাধ্যম তা করে না। দুদক বিচারকারী নয়। দুদকের দায়িত্ব মামলার তথ্য–উপাত্ত আদালতে উপস্থাপন করা। এর বিচার করবেন আদালত। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনে কৃষি সম্পত্তি ৫ দশমিক ২১ একর দেখিয়েছেন। পরে দুদকের অনুসন্ধানে ২৯ একর জমির সন্ধান পাওয়া যায়। সেই সময় দুদক বিষয়টি তদন্ত করে বের করলেও ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর রিকাবীবাজার এলাকায় গণশুনানিতে অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো.

সারওয়ার আলমের সঞ্চালনায় গণশুনানিতে দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী অভিযোগের বিষয়ে নানা নির্দেশনা দেন।

গণশুনানিতে অংশ নিয়ে বিশ্বজিৎ দাস নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের লাইব্রেরিয়ান পদে কর্মরত শেখর দাস নামের এক ব্যক্তি সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নেন। কিন্তু পরে চাকরি দেননি, টাকাও ফেরত দেননি। তাঁর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক চেয়ারম্যান সাময়িকভাবে অভিযুক্ত কর্মচারীকে বরখাস্তের আদেশ দেন। পরে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন। এ ছাড়া হাসপাতালে ১৫ টাকার টিকিট ২০ টাকা রাখা, টাকা ছাড়া শয্যা না দেওয়ার অভিযোগও করা হয়।

এ ছাড়া সিলেট পাসপোর্ট অধিদপ্তরে ঘুষ লেনদেন ছাড়া পাসপোর্ট তৈরি করা যায় না বলে অভিযোগ করেন জহুর আলী নামের দক্ষিণ সুরমার এক বাসিন্দা। পাশাপাশি পাসপোর্ট কার্যালয়ের আশপাশের কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে ঘুষ লেনদেন হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গ্যাস সংযোগ প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ করেন কয়েকজন ভুক্তভোগী। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় গণশুনানিতে।

গণশুনানিতে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা–উন–নবী, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমান, সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মু. মাসুদ রানা, সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণশ ন ন ত য় গণশ ন ন ব যবস থ ন বল ন

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানসম্ভবা সোনমের স্টাইলিশ লুক, দেখুন ছবিতে

ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

সম্পর্কিত নিবন্ধ