রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম (এনডিসি) বলেছেন, “দেশের রাজস্ব বৃদ্ধিতে হিলি স্থলবন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি হচ্ছে, যা অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখছে। তবে শুধু আমদানির ওপর নির্ভর না করে রপ্তানিও বৃদ্ধি করতে হবে—এটাই এখন সময়ের দাবি।”

শনিবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, জিরো পয়েন্ট এবং উপজেলা প্রশাসন কার্যালয় পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

৯ দিন বন্ধ থাকবে বাংলাবান্ধায় আমদানি-রপ্তানি

‘অর্থনীতিকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে দেখিয়ে গত সরকার ব্যবসায়িদের ঝুঁকিতে ফেলেছে’

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, “হিলি স্থলবন্দর দেশের রাজস্ব খাতে একটি বড় অবদান রাখছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ছয়দিনের বন্ধের পর আজ থেকে আবারো আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বন্দরের কার্যক্রম সরেজমিনে দেখে খুব ভালো লাগলো। আমদানির পাশাপাশি রপ্তানিও বাড়াতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে আরো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

তিনি বলেন, “রপ্তানি বাড়াতে হলে আমাদের স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে এবং বিদেশে বাংলাদেশের পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে। সরকার এ লক্ষ্যেই কাজ করছে। বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময় হিলি বন্দরকে আরো আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

এ সময় বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী অতিরিক্ত সচিব মোছা.

হুমায়েরা বেগম, পিএস মো. রেজাউল করিম, হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী ভুমি কমিশনার (এসি ল্যান্ড) মো. সাব্বির হোসেন, হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হক, হাকিমপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা প্রমুখ।

পরিদর্শনকালে তিনি বন্দর এলাকার সার্বিক কার্যক্রম ঘুরে দেখেন এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে যুক্ত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে বন্দর এলাকার শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার নির্দেশ দেন।

ঢাকা/মোসলেম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আমদ ন আমদ ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দুই মাস পর ভুটানের প্রথম চালানের পণ্য খালাস শুরু

দুই মাস আগে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামানো হয়েছিল ভুটানের ট্রানজিট পণ্যের প্রথম চালান। তবে সরকারি সংস্থাগুলোর এ–সংক্রান্ত অনুমোদন না পাওয়ায় এত দিন খালাস করা যায়নি। গত সপ্তাহে বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদনের পর গতকাল রোববার চালানটি খালাসের প্রক্রিয়া শুরু করে ভুটানের পণ্য খালাসের জন্য নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধি। আজ সোমবার চালানটি বন্দর থেকে খালাসের পর ভুটানের উদ্দেশে নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সই হওয়া ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট’ চুক্তি ও প্রটোকলের আওতায় পরীক্ষামূলক চালানটি নেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২২ মার্চ এই চুক্তি ও প্রটোকল সই হয়েছিল। ভুটান স্থলবেষ্টিত হওয়ায় দেশটিতে কোনো সমুদ্রবন্দর নেই। ফলে তৃতীয় দেশের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের মাধ্যমে শুরু হওয়া পরীক্ষামূলক চালান পরিবহনে দেশটি সন্তুষ্ট হলে নিয়মিত পণ্য পরিবহন শুরু হতে পারে। তবে এটি নির্ভর করছে ভুটানের সিদ্ধান্তের ওপর।

থাইল্যান্ড থেকে আসা ভুটানের পরীক্ষামূলক চালানটিতে ৬ হাজার ৫৩০ কেজি পণ্য রয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে শ্যাম্পু, শুকনো পাম ফল, আইস টি, চকলেট ও জুস। চালানটির রপ্তানিকারক থাইল্যান্ডের অ্যাবিট ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড। চালানটি আমদানি করেছে ভুটানের এবিট ট্রেডিং।

পরীক্ষামূলক চালান খালাসে বিলম্ব

দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও প্রটোকল সই হয় ২০২৩ সালে। এক বছর পর ২০২৪ সালের এপ্রিলে ভুটানে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ–ভুটান বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের সভায় সুবিধাজনক সময়ে দুটি পরীক্ষামূলক চালান পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গত ৮ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ডের ল্যাম চ্যাবাং বন্দরে ভুটানের চালানের কনটেইনার জাহাজে বোঝাই করা হয়। ভুটান বিষয়টি বাংলাদেশকে অবহিত করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরে পাঠানো হয়। তার আগেই গত ২২ সেপ্টেম্বর ভুটানের চালানটি বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘এমভি এইচআর হিরা’ জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়।

এরপর গত ১৭ নভেম্বর রাজস্ব বোর্ড ভুটানের প্রথম চালানের কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য অফিস আদেশ জারি করে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ট্রানজিট চালানে সড়কের টোল ও মাশুলের বিষয় জানিয়ে এনবিআরকে চিঠি দেয় গত ২০ নভেম্বর। এরপর ভুটানের পণ্য খালাসের জন্য নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এন এম ট্রেডিং করপোরেশন কাজ শুরু করে।

জানতে চাইলে এন এম ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুল আলম খান গতকাল রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কের টোল ও মাশুল দিচ্ছি। আশা করি, সোমবার বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে পারব। এরপরই সড়কপথে কনটেইনারটি ভুটানে নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, গতকাল রোববার বিকেলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট যাবতীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর কয়েক ঘণ্টায় চালানটির শুল্কায়ন হয়েছে। এখন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বাকি প্রক্রিয়া শেষ করে চালানটি খালাস নিতে পারবে।

পরীক্ষামূলক চালান পরিবহনের নির্ধারিত ট্রানজিট পথ অনুযায়ী চালানটি নেওয়া হচ্ছে। এই পথ হলো থাইল্যান্ডের ল্যাম চাবাং বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সড়কপথে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরের মাধ্যমে শিলিগুড়ি হয়ে অর্থাৎ ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভুটানের ফুয়েন্টশোলিং স্থলবন্দর।

পরীক্ষামূলক চালান থেকে কত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভুটানের পরীক্ষামূলক চালানে চট্টগ্রাম কাস্টমস, চট্টগ্রাম বন্দর এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ—এই তিন সংস্থা মাশুল আদায় করবে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল নির্ধারণ করা আছে। অন্য দুই সংস্থা পরীক্ষামূলক চালানটির জন্য মাশুল নির্ধারণ করেছে।

গত ১৭ নভেম্বর এনবিআরের আদেশে জানানো হয়, প্রতি চালানে ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, ট্রান্সশিপমেন্ট ফি প্রতি টন ২০ টাকা, নিরাপত্তা চার্জ প্রতি টন ১০০ টাকা, এসকর্ট ফি প্রতি কনটেইনারে কিলোমিটারপ্রতি ৮৫ টাকা, প্রশাসনিক মাশুল প্রতি টন ১০০ টাকা এবং স্ক্যানিং ফি প্রতি কনটেইনারে ২৫৪ টাকা।

পরীক্ষামূলক চালানের জন্য সড়ক টোল ও মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর এনবিআরে পাঠানো সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের চিঠি অনুযায়ী, ট্রানজিট পথের (চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর) দৈর্ঘ্য ৬৮৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট অ্যাকসেস রোডে ১২ কিলোমিটারের টোল সড়ক রয়েছে, যার জন্য ৪৫ টাকা টোল দিতে হবে। এ ছাড়া মেঘনা, মেঘনা–গোমতী, যমুনা এবং তিস্তা ব্রিজের জন্য মোট টোল দিতে হবে ৪ হাজার ৮১৫ টাকা। আবার ট্রেইলারের মোট ওজন ধরে প্রতি টনে টোল ফ্রি সড়কের (৬৭২ কিলোমিটার) জন্য মাশুল দিতে হবে ১ হাজার ৪৬২ টাকা। এ হিসাবে সাড়ে ৬ টন পণ্যের জন্য ১০ হাজার ২৩৪ টাকা মাশুল দিতে হবে।

চাপ পড়বে না বন্দরে

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভুটানের বৈদেশিক বাণিজ্য ছিল ১৮৯ কোটি ৫৮ লাখ মার্কিন ডলারের। দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যের ৭৯ শতাংশ বা প্রায় ১৪৯ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে ভারতের সঙ্গে। বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া অন্য দেশের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য খুবই কম, ২০২৪ সালের হিসাবে যা ভুটানের মোট বাণিজ্যের ১৭ শতাংশ বা ৩২ কোটি ডলার। ট্রানজিট চালু হলে এসব পণ্যই নেওয়া হতে পারে বাংলাদেশ ও ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক পর্ষদ সদস্য মো. জাফর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ভুটান বাংলাদেশের মাধ্যমে নিয়মিত ট্রানজিট পণ্য পরিবহন করলেও তা বন্দরের ওপর চাপ তৈরি করবে না। কারণ, দেশটি যে পরিমাণ পণ্য পরিবহন করবে, তা বন্দরের সক্ষমতার তুলনায় নগণ্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই মাস পর ভুটানের প্রথম চালানের পণ্য খালাস শুরু