ইলিশ রক্ষার অভিযানে জেলেদের হামলা, ফিরে গেল অভিযানকারী দল
Published: 8th, October 2025 GMT
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা নদীতে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে দায়িত্বরত দলের ওপর জেলেদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে অভিযান সংক্ষিপ্ত করে ফিরে আসেন অভিযানকারীরা।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে উপজেলার মেঘনা নদীর মোহনপুর ও বোরোচর এলাকায় পৃথক সময়ে এসব ঘটনা ঘটে। উপজেলা মৎস্য কার্যালয়, প্রশাসন ও মোহনপুর নৌফাঁড়ির পুলিশ সম্মিলিতভাবে এ অভিযান চালায়।
প্রশাসন, নৌ পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, গতকাল সন্ধ্যায় মেঘনা নদীর মোহনপুর ও বোরোচর এলাকায় ইলিশ রক্ষার অভিযান চালানো হয়। উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য কার্যালয় ও মোহনপুর নৌফাঁড়ির পুলিশ স্পিডবোটে করে ওই অভিযান নামে। এর নেতৃত্বে ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) রহমত উল্যাহ, মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস ও মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (ইনচার্জ) মোহাম্মদ আলী।
দুটি স্পিডবোট নিয়ে অভিযানকারী দল মেঘনার ওই দুই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ১০ কেজি মা ইলিশ জব্দ করে। এ সময় ১৫–১৬টি ট্রলারে করে শতাধিক জেলে অভিযানকারী দলটির ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পাশাপাশি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করেন। জেলেদের মারমুখী আচরণের মুখে অভিযানকারী দল পিছু হটে কিছুটা নিরাপদ স্থানে চলে যায়। এর আগে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।
হামলা ও মারধরের চেষ্টার ঘটনার পরও ইলিশ রক্ষার অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস। তিনি বলেন, কৌশলে কোনোরকম অভিযান শেষ করে তাঁরা চলে আসেন। এ ঘটনার পর কিছুটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাঁরা। জেলেদের আচরণে তিনি ক্ষুব্ধ ও শঙ্কিত। থানায় বিষয়টি জানানো হয়েছে।
মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হনপ র মৎস য ক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মধ্যরাতে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনা ভয়ের সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করছে: টিআইবি
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) চালুর সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একজন সাংবাদিক ও মোবাইল ব্যবসায়ী সংগঠনের এক নেতাকে গভীর রাতে তুলে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, যা আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষার পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে টিআইবি বলেছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া মধ্যরাতে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনা নজরদারি ও ভয়ের সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করছে। এ ধরনের জবাবদিহিহীন অভিযান কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার ন্যায় আচরণের পুনরাবৃত্তি এবং সরকারের ঘোষিত মানবাধিকারভিত্তিক সংস্কার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, এনইআইআর চালুর সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার পর ওই দুজনকে তুলে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবির ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘তথ্য যাচাইয়ের জন্য’ তাঁদের আনা হয়েছিল। অপর একটি ব্যাখ্যায় বলা হয়, সংবাদ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্রে ‘সভাপতি’ পদবি ব্যবহার এবং ব্যক্তিগত ফোন নম্বর উল্লেখ করার বিষয়টি খতিয়ে দেখতেই সাংবাদিককে ডাকা হয়। টিআইবি এসব পরস্পরবিরোধী বক্তব্যকে মিথ্যাচার আখ্যায়িত করেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ভিন্নমত দমনে গভীর রাতে কারণ না জানিয়ে বাসা থেকে তুলে নেওয়া, অভিযোগ গোপন রাখা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বক্তব্যে অসংগতি-কর্তৃত্ববাদী নিপীড়নমূলক চর্চা অব্যাহত রাখার উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত। এ আচরণ শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত নয়, বরং রাষ্ট্র সংস্কারের ওপর জনগণের আস্থাকে ধূলিসাৎ করার ঝুঁকি তৈরি করেছে। অভিযোগ থাকলে আইন অনুযায়ী সমন পাঠানো, স্বাভাবিক সময়ে আইনজীবীর উপস্থিতি নিশ্চিত করে জিজ্ঞাসাবাদ করার বাধ্যবাধকতাকে উপেক্ষা করে গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
ইফতেখারুজ্জামান সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা ও নজরদারি সংস্থার আমূল সংস্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, কেবল ব্যক্তি বদল যথেষ্ট নয়; রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নামে অধিকার হরণের দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি দূর না হলে ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর স্বপ্নপূরণ হবে না।
সরকারি নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন হলে রাষ্ট্র বিষয়টি জানতে চাইতেই পারে বলে ডিবির এক কর্মকর্তা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে টিআইবি। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি নীতি বা আইনের সমালোচনা করা নাগরিক ও অংশীজনদের সাংবিধানিক অধিকার। সমালোচনা বা ভিন্নমতকে নিরাপত্তাঝুঁকি হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সংবিধানের ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শান্তিপূর্ণভাবে মতামত প্রকাশ, সমাবেশ করা এবং সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের পূর্ণ অধিকার নাগরিকদের রয়েছে। এনইআইআর নিয়ে প্রশ্ন তোলাকে আইনগত বা নৈতিকভাবে অপরাধ হিসেবে দেখানোর ব্যাখ্যা সরকারকেই দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
টিআইবি মনে করে, এ ঘটনা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার সংকুচিত করার ঝুঁকি তৈরি করেছে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডেরও লঙ্ঘন করছে।