মধ্যরাতে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনা ভয়ের সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করছে: টিআইবি
Published: 20th, November 2025 GMT
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) চালুর সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একজন সাংবাদিক ও মোবাইল ব্যবসায়ী সংগঠনের এক নেতাকে গভীর রাতে তুলে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, যা আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষার পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে টিআইবি বলেছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া মধ্যরাতে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনা নজরদারি ও ভয়ের সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করছে। এ ধরনের জবাবদিহিহীন অভিযান কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার ন্যায় আচরণের পুনরাবৃত্তি এবং সরকারের ঘোষিত মানবাধিকারভিত্তিক সংস্কার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, এনইআইআর চালুর সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার পর ওই দুজনকে তুলে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবির ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘তথ্য যাচাইয়ের জন্য’ তাঁদের আনা হয়েছিল। অপর একটি ব্যাখ্যায় বলা হয়, সংবাদ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্রে ‘সভাপতি’ পদবি ব্যবহার এবং ব্যক্তিগত ফোন নম্বর উল্লেখ করার বিষয়টি খতিয়ে দেখতেই সাংবাদিককে ডাকা হয়। টিআইবি এসব পরস্পরবিরোধী বক্তব্যকে মিথ্যাচার আখ্যায়িত করেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ভিন্নমত দমনে গভীর রাতে কারণ না জানিয়ে বাসা থেকে তুলে নেওয়া, অভিযোগ গোপন রাখা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বক্তব্যে অসংগতি-কর্তৃত্ববাদী নিপীড়নমূলক চর্চা অব্যাহত রাখার উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত। এ আচরণ শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত নয়, বরং রাষ্ট্র সংস্কারের ওপর জনগণের আস্থাকে ধূলিসাৎ করার ঝুঁকি তৈরি করেছে। অভিযোগ থাকলে আইন অনুযায়ী সমন পাঠানো, স্বাভাবিক সময়ে আইনজীবীর উপস্থিতি নিশ্চিত করে জিজ্ঞাসাবাদ করার বাধ্যবাধকতাকে উপেক্ষা করে গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
ইফতেখারুজ্জামান সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা ও নজরদারি সংস্থার আমূল সংস্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, কেবল ব্যক্তি বদল যথেষ্ট নয়; রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নামে অধিকার হরণের দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি দূর না হলে ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর স্বপ্নপূরণ হবে না।
সরকারি নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন হলে রাষ্ট্র বিষয়টি জানতে চাইতেই পারে বলে ডিবির এক কর্মকর্তা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে টিআইবি। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি নীতি বা আইনের সমালোচনা করা নাগরিক ও অংশীজনদের সাংবিধানিক অধিকার। সমালোচনা বা ভিন্নমতকে নিরাপত্তাঝুঁকি হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সংবিধানের ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শান্তিপূর্ণভাবে মতামত প্রকাশ, সমাবেশ করা এবং সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের পূর্ণ অধিকার নাগরিকদের রয়েছে। এনইআইআর নিয়ে প্রশ্ন তোলাকে আইনগত বা নৈতিকভাবে অপরাধ হিসেবে দেখানোর ব্যাখ্যা সরকারকেই দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
টিআইবি মনে করে, এ ঘটনা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার সংকুচিত করার ঝুঁকি তৈরি করেছে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডেরও লঙ্ঘন করছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম নব ধ ক র সরক র ট আইব
এছাড়াও পড়ুন:
বসুন্ধরা সিটিসহ সব মোবাইল মার্কেট বন্ধ, ক্রেতাদের দুর্ভোগ
রাজধানীর ছোট-বড় সব মোবাইল মার্কেট বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা। বিশেষ করে বসুন্ধরা সিটি মোবাইল মার্কেটসহ অন্য বৃহৎ বাজারগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেলেও ফটকের কাছে এসেই তাঁরা জানতে পারেন মার্কেট বন্ধের কথা। এ ছাড়া অনেকে আসছেন মোবাইল সারাতে, তাঁরাও কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
আজ বুধবার বিকেলে বসুন্ধরা সিটির মূল ফটকে ঢুকতেই দেখা যায় ‘মোবাইল সিটি’ মার্কেট বন্ধ। ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় সেখানে। মূল ফটকেই দাঁড়িয়ে তারা আলোচনা করছেন কেন মোবাইল মার্কেট বন্ধ। মোবাইল সার্ভিসিং, নতুন ফোন কেনা বা দেখতে আসা অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কবে মার্কেট খুলবে, সে বিষয়েও নেই কোনো স্পষ্ট ধারণা। একই দৃশ্য দেখা গেছে রাজধানীর মোতালেব প্লাজা ও স্টার্ন প্লাজায়।
আজিমপুর থেকে আগত সাবিহা শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসেছিলাম বসুন্ধরা সিটিতে ফোন কিনতে। পুরো বসুন্ধরা সিটি খোলা থাকলেও মোবাইল সিটি মার্কেট বন্ধ। কেন বন্ধ বুঝতে পারছি না। অন্যদের মতো আমাকেও ফিরে যেতে হচ্ছে।’
ধর্মঘটের কারণ
সারা দেশের মোবাইল বিক্রি বন্ধের এই ঘোষণার নেপথ্যে রয়েছে স্মার্টফোন ও গ্যাজেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ (এমবিসিবি)। আজ (বুধবার) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘এনইআইআর বাস্তবায়ন: মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন থেকে তাঁরা এ ধর্মঘটের ঘোষণা দেন।
এর আগে গত রাতে এমবিসিবির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ পিয়াস এবং সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বাসা থেকে নিয়ে যায়। এই ‘আটকের’ প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে ডিবি কার্যালয় ঘেরাও করে দেন। মিজানুর রহমানকে সকালে ছেড়ে দিলেও আবু সাঈদ পিয়াস এখনো ডিবি হেফাজতে আছেন।
এমবিসিবির একাধিক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কোনো অভিযোগ ছাড়াই রাতে তুলে নিয়ে যাওয়াটা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। আমরা ব্যবসায়ী, আমাদের ওপরেই কেন এত চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে? আমাদের সঙ্গে বসে কথা বলুক। কী করতে হবে, কোন নিয়মে করতে হবে—আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিক। কিন্তু এভাবে ২০-২৫ হাজার ব্যবসায়ীকে পথে বসিয়ে কী প্রমাণ করতে চায়?’
ফোনের দাম বাড়ার শঙ্কা ও ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ
সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিদ্যমান করনীতি অনুসারে এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার) বাস্তবায়িত হলে দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফোনের দাম অনেক বেড়ে যাবে, ফলে সাধারণ মানুষের জন্য মোবাইল কেনা কঠিন হয়ে পড়বে।
মুঠোফোন বিক্রেতা সাইম প্লাসের স্বত্বাধিকারী মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাগেজ ফোনের ওপর প্রস্তাবিত ৫৭ শতাংশ ভ্যাট ও কর আরোপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’ তিনি জানান, প্রায় ৩০-৩৫ হাজার ব্যবসায়ী লাগেজ ফোনের (আনঅফিশিয়াল) ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এসব ফোন কিন্তু নকল নয়। এই উচ্চ শুল্ক আরোপ হলে ফোন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে, অবৈধ উপায় অবলম্বনকে উৎসাহিত করবে। ফলে সরকার রাজস্ব হারাবে।
মো. কামাল হোসেন আরও বলেন, ৯টি কোম্পানির সংযোজন করা ফোন বাজারে সব পছন্দের ব্র্যান্ডের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। লাগেজ ফোন বিক্রেতারা অতি সামান্য লাভে (১০০-২৫০ টাকা) বিক্রি করে কোনোমতে টিকে থাকেন। দোকানভাড়া ও কর্মী খরচ মেটাতে না পারায় তাঁরা সেকেন্ড অপশন (লাগেজ ফোন) অবলম্বন করতে বাধ্য হন। তিনি সরকারের নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান, তাঁরা যেন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে ভ্যাট–ট্যাক্স কমিয়ে আনেন। এটি করা হলে সরকার ও ব্যবসায়ীরা উভয়ই উপকৃত হবে এবং সরকারের ভালো রাজস্ব আসবে।
প্রসঙ্গত, অনিবন্ধিত মুঠোফোন হ্যান্ডসেটের ব্যবহার রোধ ও টেলিযোগাযোগ খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে চালু করতে যাচ্ছে এনইআইআর ব্যবস্থা। এটি চালু হলে দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে নিবন্ধনবিহীন, চুরি হওয়া বা আমদানি অননুমোদিত ফোনের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হবে বলে আশা করছে সরকার।