Prothomalo:
2025-10-08@09:38:34 GMT

কবিতাবিদ্বেষী

Published: 8th, October 2025 GMT

লিখনকে পই পই করে হেলাল আহমেদ বলে দিয়েছিলেন, মেলায় ঢোকার আগে যেন তাঁর অফিসে একটু ঢুঁ মেরে যায়। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন বড় কর্মকর্তা। বসেন শিক্ষা ভবনে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বড়জোর পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ। তবু মেলায় তাঁর নাকি আসা হয়ে উঠছে না। আলস্য ও নানা কারণে।

আলস্য—কথাটা সত্যি। আরেকটা ব্যাপার হয়তো, একটা বয়সের পরে শুধু শুধু একাকী মেলার মতো একটা জায়গায় ঘোরাফেরা করা যায় না। বিশেষ করে যখন তিনি একজন সরকারি বড়কর্তা, বিশেষ করে তিনি যখন একসময়ের সাড়া ফেলে দেওয়া কবি। ফলে তিনি মেলায় বিচরণের সময় যেটা মিস করেন তা হলো, সঙ্গ। এ জন্যই লিখনকে এমন তাগিদ দেওয়া। হেলাল ভাই লিখনদের কাছে, মানে যারা এখন লেখালেখির চেষ্টা করছে বা লেখালেখি করছে, তাদের কাছে—কিছুটা রহস্যাবৃত মানুষ। তাঁর প্রথম বই প্রকাশিত হওয়ার পর দারুণ সাড়া পড়ে গিয়েছিল। পরের বছর আরেকটি। তাঁর বইয়ের কবিতা রেকর্ড করে আবৃত্তিকাররা সিডি প্রকাশ করলেই সেটি হট কেকের মতো বিক্রি হয়ে যেত। তারপর তিনি লিখলেন, অণুকাব্য। আহা, প্রতিটি অণুকাব্যে এমন ইনসাইট লুকিয়ে থাকত, চমকে দেওয়ার মতো।

সেই হেলাল আহমেদ শাহবাগ, আজিজ, হাকিম চত্বর, লিটলম্যাগ, পাঞ্জাবি ছেড়ে বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরিতে থিতু হবেন কেউ কি ভাবতে পেরেছিল! কিন্তু সেটাই সত্যি। কত প্রকাশক ফিরে এল; সাহিত্যপাতার সম্পাদকেরা লেখা চেয়ে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে চাওয়া বাদই দিয়েছেন। হেলাল ভাই আর লিখলেন না। তাঁর নতুন কবিতা আর পাওয়া যায় না সাহিত্যাকাশে। রহস্যই বটে!

একটা বয়সের পরে শুধু শুধু একাকী মেলার মতো একটা জায়গায় ঘোরাফেরা করা যায় না। বিশেষ করে যখন তিনি একজন সরকারি বড়কর্তা, বিশেষ করে তিনি যখন একসময়ের সাড়া ফেলে দেওয়া কবি। এ জন্যই লিখনকে এমন তাগিদ দেওয়া।

এসব ক্ষেত্রে যা হয় আরকি, কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন ‘ফ্লুক’, কেউ বলেছেন ‘ঝড়ে বক’ (দুটোর অর্থ আসলে একই, যে যেটা পারে ব্যবহার করেছে), কানে গেছে হেলাল ভাইয়েরও, কিন্তু তিনি কিছুই বলেননি। তাঁর অপরিসীম ধৈর্যের কারণে, সে আলোচনাও এখন বন্ধ। লিখনরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করত। সে একদিন দুঃসাহসী কাজ করে। কাঁটাবন দিয়ে আসার সময় রাস্তায় তাঁকে দেখে পাকড়াও করে। আলাপ–আলোচনায় সেদিন যা বুঝেছিল, তাজ্জব লেগে যাবার মতো। তিনি কবিতা থেকে দূরে তো নেই-ই, বরং অন্য অনেকের থেকেও আপডেটেড। তারপর তাঁর সঙ্গে লিখনের টুকটাক কথা হয়েছে। অন্য অনেকের সঙ্গে তাঁর তেমন আলাপ না হলেও লিখনের সঙ্গে মাসে–দুমাসে দেখা হয়েই যায়। সম্পর্কটা এখন আন্তরিকতার পর্যায়ে পৌঁছেছে বলা যায়। ফলে হেলাল ভাই, মেলায় যাওয়ার আগে লিখনকে তাঁর অফিসে ঢুঁ মেরে যেতে বলতেই পারেন এবং লিখনও অফিস শেষে তাঁকে নিয়ে বইমেলায় যেতেই পারে।

চ্যামেরি হাউসের স্মৃতিধন্য শিক্ষাভবনে তাঁর নির্দিষ্ট কক্ষে গিয়ে লিখন দেখল, হেলাল ভাই একপ্রকার তৈরি হয়েই আছেন। ওকে দেখেই বললেন, তোমার নতুন কবিতাটা পড়লাম। খুব সুন্দর।

প্রশংসা শুনে লিখন খুশিই হলো। খুশি হলে সেটি ও সেটা লুকিয়ে রাখতে পারে না। তার একটা কারণ হলো লুকিয়ে রাখার যৌক্তিকতা খুঁজে পায় না। তা ছাড়া হেলাল আহমেদের মতো প্রথিতযশা কবি ও বিদগ্ধ পাঠকের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়া খুশির ব্যাপারই। উনি বাড়িয়ে বলেন না।

‘তবে.

..’

লিখন শঙ্কিত হয়ে উঠল। এই রে, সেরেছে! শংসাবাক্যের পরে কি এবার সমালোচনা করবেন নাকি? তা করতে পারেন। তবে প্রশংসাটা উপভোগ ও হজম করতে কিছুটা (বা কিছুদিন) সময় দেবেন তো!

ওর মুখ থেকে বের হয়ে গেল, ‘তবে?’

‘তবে তোমার নিজেকে একটু লুকিয়ে রাখতে হবে?’

‘লুকিয়ে রাখতে হবে?’

‘বা তুমিই একটু গার্ড নিয়ে থাকলে!’

‘গার্ড নিয়ে?’

‘কী ব্যাপার ট্যাগ কোশ্চেনের মতো সবকিছু রিপিট করছ কেন?’

উষ্মা শুনে লিখনও একটু বিরক্তি নিয়ে বলল, কারণ আপনার কথা শুনে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না!

‘বলছি। চলো বের হই। হাঁটতে হাঁটতে বলব। অফিসের চা আর তোমাকে না খাওয়াই। বাইরে ভালো চা দেখলে দুজনে মেরে দেব।’

কী যে বলবেন, সেটা শুনতেই উদ্‌গ্রীব ছিল বলে লিখন আর হ্যাঁ–না কিছুই বলল না।

পাঁচ মিনিটের পথ। এর মধ্যে কোথায়ই-বা তিনি দাঁড়াবেন আর কোথায়ই-বা চা খেতে খেতে যে জট বাঁধালেন তা ছাড়াবেন তার কিছুই ওর মাথায় আসছিল না। চ্যামেরি হাউস থেকে বের হলেন প্রেসক্লাবের দিকের গেট দিয়ে না। ঠিক অপজিটে আরেকটা যে গেট আছে, সেভাবে খেয়াল করেনি লিখন আগে। সেই গেট দিয়ে দ্রুত ওকে নিয়ে বের হয়ে চললেন উল্টো দিকে। ওসমানী মিলনায়তন পার হয়ে ঢুকে পড়লেন পার্কে। এত দ্রুত এলেন যে ওর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হলো না। এবার তার মুখে একটু হাসি ফুটল, একটু বিব্রতভাবসহ। হয়তো পরিচিত পরিবেশটা এড়াতে চাইছিলেন।

‘এখানে মাঝে মাঝে আমি হাঁটাহাঁটি করি। আমার ‘মি টাইম’ বলতে পারো।’ কেমন যেন কৈফিয়তের মতো শোনায়। ‘আসো হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি।’

‘আপনি না মেলায় যাবেন!’

‘তা যাব। তবে প্রসঙ্গ যখন উঠল, তখন এই ব্যাপারটা বলেই ফেলি। মেলায় আরেক দিন যাওয়া যাবে।’

লিখন চুপ করে থাকল, চোখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি। অপেক্ষা একটি ব্যাখ্যার।

তোমার কবিতা ভালো। সমগ্র সত্তা দিয়ে তুমি কবিতাটা লেখো। বলতে লজ্জা নেই যে এই তোমাকে এই আমি হিংসাই করি। হিংসা করি কারণ, একসময় আমিও সমগ্র সত্তা দিয়ে কবিতা লিখতাম। সেই আমিকে হারিয়ে ফেলেছি।

‘তোমার কবিতা ভালো। সমগ্র সত্তা দিয়ে তুমি কবিতাটা লেখো। বলতে লজ্জা নেই যে এই তোমাকে এই আমি হিংসাই করি। হিংসা করি কারণ, একসময় আমিও সমগ্র সত্তা দিয়ে কবিতা লিখতাম। সেই আমিকে হারিয়ে ফেলেছি।’

লিখন কোনো কথা না বলে পাশাপাশি হাঁটতে থাকে।

‘সে জন্যই তোমাকে সতর্ক করা। তুমি কখনো কামরুল ভাইয়ের সঙ্গে বেশি আলাপে যাবা না। বেশি আলাপের প্রশ্ন আসছে কেন? কথাই বলবা না। কামরুল ভাইকে তো চিনছই, তাই না?’

‘চিনেছি! ওনাকে কে না চেনে!’

‘আলাপ-পরিচয় আছে? কথাবার্তা হয়?’

‘জি না। এমনি লেখার সূত্রে পরিচয় আছে।’

‘তাহলে তো হয়েই গেল। ব্যক্তি আলাপ পরিচয়ে যাবা না। আজ হোক, কাল হোক তিনি নিজেই আসবেন তোমার সঙ্গে পরিচিত হতে। কিন্তু বেশি আলাপে যাবা না।’

এমন সৃষ্টিছাড়া অনুরোধে লিখনের বেশ রাগই হলো। লিটলম্যাগের তরুণ কবিরা অপেক্ষাই করে কখন কোন পত্রিকায় কোন কবিতা পড়ে কবি ও কাব্য সমালোচক কামরুল আহসান তার সঙ্গে আলাপ করবেন আর তার কবিতা নিয়ে লিখবেন। যত তরুণ কবির বই বের হয়, তারা সবাই এক কপি আলাদা করে রাখে কামরুল ভাইয়ের জন্য। আর এই যে হেলাল ভাই, কামরুল ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ করতে নিষেধ করছেন তাঁর যে খ্যাতির বিস্ফোরণ, সেটাও তো তাঁর ‘আগুনের সাম্পান’ বইয়ের ওপর কামরুল ভাইয়ের কাব্যালোচনার পরেই ঘটে। আর লিখনকে কি না...—আসলে কবির শত্রু কবিই।

‘আমি জানি তুমি কী ভাবছ। তবে আমার কথা শেষ করতে দাও। তারপর সিদ্ধান্ত তোমার।

কামরুল ভাই কিন্তু আমার দুটো বইয়েরই রিভিউ করেছিলেন। রিভিউ বললে সে লেখার প্রতি অবিচার করা হয়। এমন দারুণ আলোচনা তরুণ কবির স্বপ্ন বলা যায়। তারপরে কামরুল ভাইয়ের সঙ্গে কত যে আড্ডা হলো, তার কোনো গোনাগুনতি নেই। তারপরে একদিন কামরুল ভাই আমাকে সবক দিলেন, আর তার ফলে দেখো আজ আমি লেখালেখি বাদ দিয়ে চাকরিই করছি। আর কবিতা নেই।’

‘কী বলছিলেন তিনি আপনাকে?’

‘আমার তখন চাকরি নেই। কবিতা লিখব বলে পণ করেছি। বই বের করব, রয়্যালটি দিয়ে জীবনযাপন করব। এমনই ইচ্ছে। কী সব দিন! এদিকে তোমাদের ভাবির সঙ্গে রিলেশন। বিয়ের কথা সে–ও কিন্তু কিছু বলেনি। দুজনেই সেই জীবন নিয়ে খুশি ছিলাম। এখন বুঝি আমাদের ক্লিয়ারিটি ছিল না।’

আমি যদি লেখাটা চালিয়ে যেতাম, তাহলে হয়তো হেলাল আহমেদ হয়ে যেতাম। এখন আমাকে ভয় পেতে হয় আমি দ্বিতীয় কামরুল আহসান হয়ে যাই কি না। তাই বলছি, যা মনে হয় তাই করো। কিন্তু কামরুল ভাই থেকে একটু দূরে থাকবা।

কামরুল ভাই একদিন আলাপে আলাপে বললেন, কী করবা কিছু ভেবেছ?

আমি বললাম, কী বিষয়ে?

উনি বললেন, এই চাকরি বাকরি।

আমি বললাম, ভাই, চাকরি করব না। কবিতা লিখব।

আমি মনে করেছিলাম, উনি খুশি হবেন।

উনি বললেন, আসো হিসাব করি। প্রতি মাসে একটা বই লিখতে পারবা, কবিতার?

কী বলেন? প্রতি মাসে একটা কবিতার বই বের করতে গেলে তো রবীন্দ্রনাথ হওয়া লাগবে।

তা–ও, ধরে নিলাম তুমি রবীন্দ্রনাথ। তা আশা করছ কয় কপি বই বিক্রি হবে? এক হাজার?

কেউ কি পড়ে কবিতার বই? কয়টাই–বা?

তা–ও মনে করো তোমার কবিতা পাঠকের রুচি বদলায়ে দিল। তারা প্রতি মাসে বই কেনে। এমন কয়জন পাঠক পাবা বলে আশা করো? এক হাজার?

নাহ্‌!

পাঁচ শ ধরে নিলাম। হিসাবের সুবিধার্থে, ওকে?

ওকে।

বইয়ের দাম কত রাখবা? দুই শ?

না ভাই। হাইয়েস্ট এক শ!

(হেলাল আহমেদ লিখনকে ব্যাখ্যা করলেন, দুই হাজার আট সালে কবিতার বইয়ের জন্য এক শ টাকা খরচ করতে চাওয়া কম কথা নয়।)

কামরুল ভাই বললেন, ঠিক আছে। তাহলে মোট হলো, পঞ্চাশ হাজার টাকা। এর ফিফটিন পারসেন্ট কত? সাড়ে সাত হাজার টাকা।

আমার মুখে আর কথা সরল না। দুই রুমের বাসার ভাড়া তখনই আট হাজার টাকা। সরকারি চাকরি স্টার্টিং তখন খুব সহজেই আঠারো হাজার, বিশ হাজার। আর কিছু বলার দরকার ছিল না। কোথায় কোথায় বাড়িয়ে এই হিসাব তা তো আমি জানিই। প্রতি মাসে একটি করে কবিতা লেখা সম্ভব না। প্রতি মাসেই আমার বই কিনবে, এমন পাঠক আমার পাঁচ শ জন নেই। আর সাড়ে সাত হাজার টাকায় শোভার মতো মেয়েকে মাস চালাতে বলা যায় না। সে তার থেকে বেশি কিছু ডিজার্ভ করে।

কামরুল ভাই বললেন, দেখো, তোমার পাঠক পাঁচ শ কেন? পাঁচ হাজার, পঞ্চাশ হাজার হওয়াও অসম্ভব নয়। কিন্তু সেটা কি আজকালের মধ্যেই হচ্ছে? কিন্তু দিনের পর দিন টেবিলে মুখ গুঁজে থেকে হঠাৎ যেদিন শুনবে প্রেমিকার বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে, তখন? কবিতার বইয়ের আনসার্টেনিটি নেই চাকরিতে। যত চাকরিজীবী আছে, তার মধ্যে কয়জন তোমার মতো প্রতিভাবান? তারা যদি দুবেলা দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করে ফেলতে পারে, তাহলে তুমি পারবে না? কবিতা কোনটা? কাগজে লিখলে যেটা নাকি প্রিয় মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যা রচনা করে চলবে আপন গৃহে, সেটা?

আমি কথা ফেলতে পারিনি। কামরুল ভাই আর সূচনা ভাবিকে আমি দেখেছি। তাদের জীবনযাপন ছিল কবিতার থেকেও নান্দনিক। আমি ভাবলাম, শোভা আর আমাকে। আমি একদম ভেঙেচুরে গেলাম। সেদিন থেকে কবিতা লেখার খাতা বন্ধ করে বইপত্র আবার ধরলাম। তারপরের জীবন কামরুল ভাইয়ের বলা জীবনের মতো। সরকারি চাকরি, শোভাকে পেলাম, ছোট্ট সুন্দর ঘর, বাচ্চারা। একদিন কবিতার কথা মনে পড়ল। পড়া শুরু করলাম। দেখলাম কবিতার প্রতি ভালোবাসাটা আছে। কিন্তু লিখতে গেলেই মনে হয়, আরও পড়া দরকার। সেই স্বতঃস্ফূর্ত সাহস আর তার প্রকাশ, নেই রে!’

‘কিন্তু কামরুল ভাই তো এখনো লিখছেন? গদ্য-পদ্য সব?’

‘সেটাই তো! হয়তো কামরুল ভাই আমার জন্য সেটাই চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি তো পারছি না। তা ছাড়া ভেবে দেখলাম, আরেকটা কামরুল আহসান কি বাংলা সাহিত্যের দরকার আছে? আমি যদি লেখাটা চালিয়ে যেতাম, তাহলে হয়তো হেলাল আহমেদ হয়ে যেতাম। এখন আমাকে ভয় পেতে হয় আমি দ্বিতীয় কামরুল আহসান হয়ে যাই কি না। তাই বলছি, যা মনে হয় তাই করো। কিন্তু কামরুল ভাই থেকে একটু দূরে থাকবা। আমার কখনো কখনো মনে হয় কামরুল ভাই একটা কবিতাবিদ্বেষী লোক।’

‘যা বললেন ভাই, আমার তো মনে হচ্ছে তিনি কবি ও কবিতাপ্রেমী মানুষই।’

‘দুটো তো একই রে!’

লিখন মনে মনে বলল, বটে!

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ ল ল আহম দ ব শ ষ কর ই বলল ন র জন য প রক শ একদ ন সরক র ত রপর বইয় র

এছাড়াও পড়ুন:

শিবিরের ভিপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ছাত্রদলের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী মো. ইব্রাহীম হোসেনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে ছাত্রদল। আজ বেলা পৌনে দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনের দ্বিতীয় তলায় নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।

ছাত্রদলের অভিযোগ, ভিপি প্রার্থী মো. ইব্রাহীম হোসেন আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনে (নতুন কলা ভবন) গিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। শ্রেণিকক্ষের সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে প্রায় ২০ মিনিট ধরে ইতিহাস বিভাগের ৩২৩ নম্বর কক্ষে প্রচারণা চালানো হয়। এতে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে।

অভিযোগ জানানোর সময় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান; চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী শাফায়েত হোসেন, দপ্তর সম্পাদক পদপ্রার্থী তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনী আচরণবিধিমালার ৪–এর ‘ঙ’ বিধিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি ফ্যাকাল্টিতে যেখানে ক্লাস-পরীক্ষা হয় সেখানে কিংবা আশপাশে সভা-সমাবেশ করা যাবে না। ক্লাস-পরীক্ষাসহ শিক্ষা কার্যক্রমে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এমন কোনো কাজ, যেমন কোনো ধরনের সাউন্ড সিস্টেম বা মাইক ব্যবহার করা যাবে না। সেদিকে সকল প্রার্থী বা তার সমর্থকদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রশিবির প্যানেলের ভিপি প্রার্থীর আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। আমরা নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই।’

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক প্রধান মনির উদ্দিন অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আচরণবিধি দেখাশোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক কমিটি রয়েছে। তাঁদের কাছে লিখিত অভিযোগটি হস্তান্তর করা হবে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের শাখা সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইব্রাহীম প্রচারণা চালাতে ইতিহাস বিভাগে যাননি। নিজ বিভাগ হওয়ায় জুনিয়রদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছেও অভিযোগ রয়েছে একটি প্যানেলের প্রার্থীরা শ্রেণিকক্ষের দরজা বন্ধ করে প্রচারণা চালিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে অভিযোগ জানাব।’

ভিপি প্রার্থী মো. ইব্রাহীম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটি নির্বাচন কমিশনে যে কেউ জানাতে পারে। আমার কাছে নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যাখ্যা চাইলে আমি জবাব দেব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ