মহাকাশ অভিযান মানেই নতুন দিগন্তের উন্মোচন। তবে মহাকাশ অভিযানে নভোচারীদের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের জোগানসহ মহাকাশযানের চাপ নিয়ন্ত্রণ করা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের। পৃথিবীকে ছাড়িয়ে যত দূরে যাওয়া যায়, ততই এসব চ্যালেঞ্জ কঠিন হতে থাকে। ১৯৭১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পাঠানো সয়ুজ ১১ মহাকাশযান পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় দ্রুত ভেতরের চাপ কমে যাওয়ায় অক্সিজেনের অভাবে মারা যান তিন নভোচারী। এটিই মহাকাশে নভোচারীদের প্রথম ও একমাত্র মৃত্যুর ঘটনা। এর পর থেকে মহাকাশ অভিযানের সময় নভোচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে প্রেশার স্যুট পরতে হয়।

১৯৭১ সালের ৬ জুন উৎক্ষেপণ করা হয় সয়ুজ ১১ মহাকাশযান। এরপর নির্ধারিত কাজ শেষে ৩০ জুন তিনজন সোভিয়েত নভোচারী—জর্জি ডব্রোভলস্কি, ভ্লাদিস্লাভ ভলকভ ও ভিক্টর পাতসায়েভকে নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসছিল নভোযানটি। পৃথিবী থেকে প্রায় ১৬৮ কিলোমিটার ওপরে থাকা অবস্থায় মহাকাশযানটির মডিউল বিচ্ছিন্নের সময় ডিসেন্ট ক্যাপসুল থেকে অরবিটাল মডিউলকে আলাদা করার চেষ্টা করা হয়। তবে সে সময় চাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত একটি ভালভ অপ্রত্যাশিতভাবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই খুলে যায়। এর ফলে মহাকাশযানের ভেতরের বাতাস সরাসরি মহাকাশের শূন্যতায় বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে নভোচারীদের অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। ভালভটি ম্যানুয়ালি বন্ধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন নভোচারীরা। প্রেশার স্যুট না থাকায় নভোচারীরা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চেতনা হারিয়ে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেন তাঁরা।

সয়ুজ ১১ মহাকাশযানটি যখন কাজাখস্তানে অবতরণ করে, তখন উদ্ধারকারী দল তিন নভোচারীকেই অচেতন অবস্থায় খুঁজে পায়। সে সময় নভোচারীদের ত্বকে নীলচে ভাব, কান থেকে রক্তপাতসহ চাপজনিত বিভিন্ন প্রভাব ছিল। সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ প্রথমে নভোচারীদের মৃত্যুর তথ্য গোপনের মাধ্যমে মিশনের সাফল্য প্রচার করে। পরে তিন নভোচারীকে ক্রেমলিন ওয়ালের নেক্রোপলিসে সমাহিত করা হয়।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে মহাকাশে মারা যাওয়া প্রথম মানুষ হিসেবে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন নভোচারী জর্জি ডব্রোভলস্কি, ভ্লাদিস্লাভ ভলকভ ও ভিক্টর পাতসায়েভ। মহাকাশে ২৩ দিন থাকার সময় দীর্ঘ মেয়াদে মহাকাশজীবনের ওপর যুগান্তকারী সব গবেষণা করেন তাঁরা।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনে সশস্ত্র বাহিনীকে পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দক্ষতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শুক্রবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস–২০২৫ উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। একটি নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দক্ষতা ও পেশাদারত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।’

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ, যুদ্ধাহত এবং অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করেন এবং ২০২৪–এর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সব শহীদ, আহত এবং অংশগ্রহণকারী সর্বস্তরের জনগণের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম ১৯৭১ সালে রণক্ষেত্রে। সে সময় ২১ নভেম্বর সেনাবাহিনীর সঙ্গে নৌ ও বিমানবাহিনী সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিল বলে ২১ নভেম্বরকে মুক্তিযুদ্ধের একটি মাইলফলক হিসেবে গৌরবের সঙ্গে পালন করা হয়। তবে মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর সংগ্রামের সূচনা ঘটে ২৫ মার্চের রাত থেকেই। আমরা যদি বিজয় অর্জন না করতাম, তাহলে এই বীর সেনাদের মৃত্যুদণ্ড ছিল অনিবার্য, অসহনীয় হয়ে যেত তাঁদের পরিবারের সব সদস্যের জীবন।

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, মুক্তিকামী সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অকুতোভয় বীর সেনানীরা জীবনের পরোয়া না করে, পরিবারের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে এ দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁরাই এ দেশের আপামর জনসাধারণকে সাহস জুগিয়েছেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জল-স্থল ও আকাশপথে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলে দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে এনেছেন। যুদ্ধ বেগবান ও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে তখন বাংলাদেশ ফোর্সেস গঠন করা হয়েছিল। যার অধীনে ১১টি সেক্টরে দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি গেরিলা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এরই চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখি ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সম্মিলিত অভিযানে। পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে এই যৌথ অভিযানই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় এনে দিয়েছিল। তিনি উল্লেখ করেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনী সব সময় জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে এবং ২০২৪–এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও চলমান দেশ পুনর্গঠনের কাজে সশস্ত্র বাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আস্থার প্রতিদান দিয়েছে। তিনি গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক নেতৃত্বের প্রতি অনুগত থেকে বাহিনীর পেশাগত দক্ষতা ও দেশপ্রেমের সমন্বয়ে এই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে আমরা সকল বন্ধু রাষ্ট্রের সাথে সম্মানজনক সহাবস্থানে বিশ্বাসী। তথাপি যেকোনো আগ্রাসী বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদেরকে সদা প্রস্তুত এবং সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাহিনীগুলোতে যুগোপযোগী প্রযুক্তি সংযোজনের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, গত ৩৭ বছরে জাতিসংঘে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ৪৩টি দেশে ৬৩টি মিশন সম্পন্ন করেছে এবং বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ১০টি মিশনে অংশগ্রহণকারী রয়েছে। তিনি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সাফল্যের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা যাতে বিশ্বের চ্যালেঞ্জিং ও বিপজ্জনক অঞ্চলগুলোতে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে, সে জন্য তাদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রাপ্তির চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
  • নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনে সশস্ত্র বাহিনীকে পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার