উপদেষ্টা আসবেন, তাই রঙিন কাপড়ে ঢাকল আবর্জনার স্তূপ
Published: 8th, October 2025 GMT
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আসবেন। তাই কিশোরগঞ্জের ভৈরব স্টেশন সড়কের পাশের ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ঢেকে দেওয়া হয়েছে রঙিন কাপড়ে। বিশেষ ব্যবস্থায় আবর্জনা আড়াল করা গেলেও দুর্গন্ধ আটকাতে না পারায় বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।
ভৈরব পৌর শহরের ঘোড়াকান্দা এলাকায় একটি বেসরকারি স্কুলের পরিচালক আক্তারুজ্জামান। আবর্জনার দুর্গন্ধে স্টেশন সড়ক লাগোয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আক্তারুজ্জামান দুঃখ করে বললেন, ‘উপদেষ্টা যাবেন বিলাসবহুল গাড়িতে। গাড়ির জানালা বন্ধ থাকার কথা। দুর্গন্ধ তাঁর নাক পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ নেই। সত্য আড়াল করতে স্থানীয় প্রশাসনের কত তৎপরতা। অথচ প্রতিকার পেতে আমরা কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করেও কিছুই হয়নি; বরং দিন দিন আবর্জনার স্তূপ বড় হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভৈরব পৌর শহরের প্রধান সড়কের একটি স্টেশন সড়ক। প্রতিদিন অসংখ্য ট্রেনের যাত্রাবিরতি দেয় ভৈরব স্টেশনে। সড়কের এক পাশে রেলওয়ের বড় পুকুর। পুকুরের মধ্যভাগ দিয়ে একটি সড়ক আছে। সড়কের এক পাশের পুকুরে কয়েক বছর ধরে পৌর কর্তৃপক্ষ আবর্জনা ফেলার স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে। মূল শহরের প্রধান সড়কের পাশে আবর্জনা ফেলায় পথচারীদের নাক চেপে চলতে হয়। প্রতিকার পেতে স্থানীয় লোকজন আন্দোলনও করেছেন। শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করলেও প্রতিকার মেলেনি। সরকারি কাজে আজ বুধবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে গিয়েছেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সরাইলে যেতে তিনি ঢাকা থেকে ট্রেনে প্রথমে ভৈরবে আসেন। তাঁর আগমন উপলক্ষে পৌর কর্তৃপক্ষ আবর্জনার স্তূপ রঙিন কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলে।
বিকেল পৌনে চারটায় গিয়ে দেখা যায়, উপদেষ্টা চলে গেলেও পর্দা নামানো হয়নি। আসা-যাওয়ার পথে অনেকের নজর পড়ছে সেখানে। তবে আবর্জনা ঢাকা থাকলেও দুর্গন্ধের কারণে বেশির ভাগ পথচারীকে নাক চেপে সড়ক পার হতে দেখা যায়।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব স্টেশন সড়কের ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। বিশেষ ব্যবস্থায় আবর্জনা আড়াল করা গেলেও দুর্গন্ধ আটকানো সম্ভব হয়নি। বুধবার বিকেলে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট নভেম্বরের মধ্যে চায় জামায়াত
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আগামী মাসেই গণভোট চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে অর্থাৎ নভেম্বরের মধ্যেই গণভোটের পক্ষে তাঁদের অবস্থান।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ চলাকালে সভা থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে দলীয় অবস্থান প্রকাশ করেন জামায়াতের নায়েবে আমির।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর স্ট্যান্ডিং পরিষ্কার—ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে এবং নভেম্বরের ভেতরেই জুলাই চার্টারের ওপরে আমাদের গণভোট হবে। দেশ অত্যন্ত স্থিরতা, দৃঢ়তা, স্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে ৫৪ বছরের ভেতরে সবচেয়ে বেশি জন–অংশগ্রহণমূলক আনন্দ-উৎসবের নির্বাচনে যাবে।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হলেও তা কবে হবে, তা নিয়ে মতভেদ কাটেনি। বিএনপি ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটে রাজি হলেও তাতে আপত্তি রয়েছে জামায়াতের।
সৈয়দ আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ‘এখন আমরা সবাই একমত হয়েছি যে গণভোটের মাধ্যমেই জুলাই চার্টার এক্সেপ্টেড হবে...অনেকে বলেছেন গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে হবে। আমরা বলেছি, না, গণভোট একটি আলাদা বিষয়, জাতীয় নির্বাচন একটি আলাদা বিষয়।
গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হলে তা জটিলতা তৈরি করবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দুটি ইলেকশন একসঙ্গে হওয়ার একটা ভালো দিক আছে, কিন্তু মন্দ দিক আছে অনেক বেশি...আপার হাউসের মতো কিছু ইস্যু আছে, যা আগামী নির্বাচনের অংশ হবে। যদি একই দিন করেন, তাহলে জনগণ গ্রহণ করবে কি করবে না—এটা আনডিসাইডেড রয়ে গেল।’
ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ছাত্র সংসদ নির্বাচনের উদাহরণ টেনে সৈয়দ আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত তিনটা–চারটা পর্যন্ত আমাদের টেনশনে ঘুম আসে নাই... জাহাঙ্গীরনগর নির্বাচনে ৪৮ ঘণ্টা পরে রায় দিয়েছে...তাহলে দুটি নির্বাচন আমাদেরকে এ রকম একটি আশঙ্কা দেয়।’
‘ইলেকশন (নির্বাচন) যদি প্রশ্নবোধক হয়, তাহলে আপনার গণভোটের চার্টারও প্রশ্নবোধক হয়ে যাবে,’ সতর্ক করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের কি আলাদাভাবে দুটি নির্বাচন করার আর্থিক সক্ষমতা আছে কি না—এ প্রশ্নে জামায়াতের এ নেতা বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি আমাদের নিতে হবে...এটা আমি মনে করি মোটেই খুব বড় খরচ নয়, বরং জাতিকে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে।’
বিএনপির ভিন্ন অবস্থান নিয়ে সৈয়দ তাহের বলেন, ‘মূলত একটি দলই কিছুটা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে—বিএনপি। তারা মানুষকে বলছে সংস্কার মানে কিন্তু আবার অফিশিয়ালি নোট অব ডিসেন্ট দিচ্ছে। তাহলে জাতিকে পরিষ্কার করার জন্য তাদের বলতে হবে, মানে কি না।’
নোট অব ডিসেন্টকে অতটা গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করেন না তিনি। তাহের বলেন, ‘নোট অব ডিসেন্ট ইজ নট আ পার্ট অব ডিসিশন—ইউ মাস্ট মেক শিউর। কনসাস কমিটির পক্ষ থেকে যদি কোনো নোট অব ডিসেন্ট থাকত, তাহলে সেটা আমরা গণভোটে সাবজেক্ট করে মানুষের কাছে নিয়ে যেতাম...কিন্তু একটা দলের নোট অব ডিসেন্ট তো জাতির ভোটের ম্যান্ডেটের জন্য কোনো সাবজেক্ট হতে পারে না।’
উদাহরণ টেনে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘যেমন হাইকোর্টে তিনজনের বেঞ্চে দুজন যদি রায় দেন, সেটাই রায়। আরেকজন নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারেন, সেটা ইতিহাসে রেকর্ড থাকবে। সুতরাং নোট অব ডিসেন্ট মানে সিদ্ধান্ত নয়।’