পরিবারের অভাব ঘোচাতে ঢাকায় রিকশা চালাতেন শওকত মণ্ডল (৪৮)। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শাহবাগ এলাকায় আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে আনা-নেওয়ার সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। গত ঈদুল ফিতরের আগে অসুস্থ স্ত্রী আকলিমার ডান পায়ে লোহা বিঁধে পচন ধরলে হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়। একমাত্র কন্যাসন্তানও মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। আহত এই জুলাই যোদ্ধার আকুতি, ‘স্ত্রীর জন্য একটি পা চাই।’

শওকত মণ্ডল রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের কাঁচারাঁধা ভরাত গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামের বাড়িতে জায়গাজমি না থাকায় রাজবাড়ী পৌরসভার লোকোশেড ছোট নূরপুর এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে শাশুড়িকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

গত সোমবার দুপুরে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরের আম্রকাননে শওকত মণ্ডলের সঙ্গে দেখা হয়। অনেকটা আবেগপ্রবণ হয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে নিজের কষ্টের কথা বলছিলেন তিনি।

শওকত মণ্ডল বলেন, প্রায় ১৫ বছর ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন, রিকশা চালাতেন। খরচ সামলাতে না পেরে ২০১৫ সালে স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামে পাঠিয়ে দেন। গত বছর জুলাই আন্দোলনে শাহবাগ এলাকায় রিকশায় করে আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে আনা-নেওয়ার সময় তাঁর শরীরে আটটি গুলি লাগে। স্থানীয় লোকজন তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জুলাই যোদ্ধার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে প্রথমে ১ লাখ টাকার চেক এবং পরে ২০ হাজার ও ১০ হাজার টাকা পেয়েছেন।

হাত-পায়ে গুলির চিহ্ন দেখিয়ে শওকত মণ্ডল বলেন, এখন ঠিকমতো রিকশা চালাতে পারেন না। সুযোগ পেলে পুরোনো লোহা-টিনের ব্যবসা করেন। গত রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে স্ত্রী আকলিমার ডান পায়ে লোহা বিঁধে ঘা হয়ে যায়। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দুই সপ্তাহ পর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে পাঠানো হয়। পায়ে পচন ধরায় ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়। প্রায় দুই মাস স্ত্রীর চিকিৎসা করতে গিয়ে ধারদেনা করে চার লাখ টাকা খরচ করেন। গ্রামের বাড়ি জায়গা না থাকায় আশ্রয় নেন শ্বশুরবাড়িতে।

রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া মেরাজুল মাজিদ বলেন, শওকত মণ্ডল একজন জুলাই যোদ্ধা। এখন অনেকটাই অসুস্থ। তাঁর স্ত্রী একটি পা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। স্ত্রীর চলার জন্য একটি কৃত্রিম পা সংযোজন করতে পারলে অন্তত রান্নার কাজ সামলাতে পারতেন।

শওকত মণ্ডলের কথা শুনে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে লোকোশেড ছোট নূরপুরে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে যান এ প্রতিবেদক। রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে মাঠে একটি চৌচালা টিনশেড ঘর দেখা যায়। উঠানের পাশে জরাজীর্ণ ঘরে রান্নার চেষ্টা করছেন স্ত্রী তাঁর আকলিমা। কোনোভাবে তাঁকে কিছুটা গুছিয়ে দুই হাতে ক্রাচে ভর দিয়ে স্ত্রীকে সামনে নিয়ে আসেন শওকত মণ্ডল। তাঁকে সহযোগিতা করছেন বৃদ্ধা শাশুড়ি।

আবেগপ্রবণ হয়ে আকলিমা বলেন, বিয়ের প্রায় ৯ বছর পর একটি মেয়েসন্তানের জন্ম হয়। ৯-১০ বছর বয়সে মেয়েটির একদিন জ্বর হলে খুব অসুস্থ হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। প্রায় চার বছর আগে মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন মেয়ের বয়স ২১ বছর। তাঁকেও মাঝেমধ্যে সামাল দিতে হয়। কিন্তু তিনি নিজেই আর চলতে পারছেন না।

আকলিমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পায়ে ঘা হয়ে পচন ধরায় ক্যানসারের ঝুঁকি থাকায় ডাক্তার হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলেন। নিজের শরীরে ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। এখন রান্নাবান্নাও করতে পারি না। বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। বৃদ্ধ মা মাঝেমধ্যে কোনোমতে রান্না করে দেয়। নিজেই চলতে পারছি না; স্বামী ও বৃদ্ধ মাকে দেখব কীভাবে? এখন চলার মতো একটি পা লাগানোর ব্যবস্থা হলে অন্তত তাঁদের রান্না করে খাওয়াতে পারতাম।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সন ত ন এল ক য় করছ ন আকল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ধানের শীষ আর দাঁড়িপাল্লার বাইরে ভোট করে জেতা কি কঠিন হয়ে গেল

জোট করলেও ভোট করতে হবে নিজ দলের প্রতীকে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের পর এখন বিধান এমনই দাঁড়িয়েছে। তাতে আগামী জাতীয় সংসদে দুই–তিনটি দল কর্তৃত্ব করবে কি না, এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে নৌকার অনুপস্থিতিতে প্রতীক হিসেবে ধানের শীষ ও দাঁড়িপাল্লার প্রাধান্য বিস্তারের ইঙ্গিতও স্পষ্ট হচ্ছে।

এত দিন জোট গড়লে বড় শরিক দলের প্রতীকে অন্যদের ভোট করার সুযোগ ছিল। এবার সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সংশোধিত আইন অনুসারে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অন্য কোনো দলের প্রতীকে অংশ নিতে পারবে না।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভোটের মাঠে সবচেয়ে বেশি তৎপর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দল। বিএনপি প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেও ৩৭টি আসন ফাঁকা রেখেছে। বলা হচ্ছে—এগুলোতে জোটের শরিকদের ছাড় দেওয়া হবে। জামায়াত সারা দেশেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তবে তারাও ইসলামী সাতটি দলকে নিয়ে একধরনের জোট করার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো কোনো জোটে ভিড়ে কি না, সেই আলোচনা আছে।

২০০১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে প্রধান দলগুলো জোটবদ্ধ হয়েই অংশ নেয়। এসব নির্বাচনে সবাই না হলেও জোটের শরিক দলগুলোর অনেক প্রার্থীই নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করে জয়ী হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। মূলত নিজ দলের প্রতীকে ভোট করে জয়ী হওয়া কঠিন ভেবেই জোটের বড় দলের জনপ্রিয় প্রতীকে ভোট করা হতো।

বিএনপির ধানের শীষ এবং জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা পুরোনো প্রতীক। অন্যদিকে অনেক আলোচনা-জটিলতার পর শাপলা কলি প্রতীক পেয়েছে এনসিপি। জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙল রয়েছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় নৌকা থাকবে না ভোটে।

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংশোধন করেছে। জোটবদ্ধ দলের প্রতীক বরাদ্দ প্রসঙ্গে সংশোধিত আরপিওতে বলা হয়েছে, যদি দুই বা ততোধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে যৌথ প্রার্থী দিতে সম্মত হয়, তবে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। তবে ভোট করতে হবে প্রার্থীর নিজ দলের জন্য সংরক্ষিত প্রতীকেই।

গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়া নীতিগত অনুমোদন পায়। দলীয় প্রতীকে ভোটের বাধ্যবাধকতাকে জামায়াত ও এনসিপি স্বাগত জানালেও বিএনপি আপত্তি তুলেছিল। সেই আপত্তি উপেক্ষা করেই ৩ নভেম্বর অধ্যাদেশ জারি হয়।

তরুণ ও যুবকদের নিয়ে গত মে মাসে ঢাকায় তারুণ্যের উৎসব করেছিল বিএনপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ