Prothomalo:
2025-10-09@08:00:09 GMT

নতুন বন্ধু

Published: 9th, October 2025 GMT

‘আমি আর বহ্নি মিলে নতুন একটা ব্যান্ড ফর্ম করতেছি। বহ্নির লেখা লিরিকগুলা ভালো। সাথে পলাশ, শিশির আর ঘাউড়া সজীবরে নিব, বুঝছিস! আমাদের ব্যান্ডের একটা নাম দিয়া দে তো।’ কথাটা শেষ করে অয়ন আয়েশ করে চুমুক দিল কফিতে। আমি চোখ গরম করে তার দিকে তাকায়া বললাম, ‘তুই কি এই জন্য আমারে ডাকছিস? তোদের ব্যান্ডফ্যান্ডে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই। আমি তোর সাথে আর নাই।’

অয়ন তার ম্যাগি নুডলসের মতো চুলগুলা হাত দিয়া মুখের সামনে থেকে সরাতে সরাতে বলল, ‘আমিও অনেক ভাবছি। আমি আসলেই ইনটলারেবল একজন মানুষ। তাও তুই এত দিন আমারে সহ্য করছিস, আমি গ্রেটফুল। তুই ঠিকই আছিস। আমার সাথে থাকিস না। আমি তোরে আটকামু না। এইটা কইতেই আমি তোরে ডাকছি।’

আমাদের টেবিলটা ক্যাফের কর্নারে। আমাদের সোজাসুজি উল্টাদিকে দুজন ছেলে–মেয়ে বসে আছে। মেয়েটা ঘন ঘন অয়নকে দেখতেছে। ক্যাফেতে কটকটা হলুদ রঙের আলো জ্বলতেছে। এই রকম বদসুরত আলোয় আমার মাথা ধরে যেতে থাকল। অয়ন ছেলেটা ‘রকস্টার’ সিনেমার রণবীরের মতো। গান গাইতে চেয়ে সে দুঃখ খুঁজতে বের হয়েছিল। দুঃখ তার কতটা পাওয়া হলো জানি না, তবে প্রেম যে তাকে পায় না, আমি তা জানি।

অয়ন আবার কথায় ফিরল, ‘কিন্তু আমি তোর সাথে যোগাযোগটা হারাইতে চাই না। তোর বন্ধু হয়ে থাকতে চাই।’ আমি অয়নের দিকে তাকায়া থাকলাম। আমার অয়নরে বলতে ইচ্ছা করল, আমি তো তোরে ভালোবাসি। এখন আমি তোর বান্ধবী না, বউ হইতে চাই।

অয়ন আবার কথায় ফিরল, ‘কিন্তু আমি তোর সাথে যোগাযোগটা হারাইতে চাই না। তোর বন্ধু হয়ে থাকতে চাই।’

আমি অয়নের দিকে তাকায়া থাকলাম। আমার অয়নরে বলতে ইচ্ছা করল, আমি তো তোরে ভালোবাসি। এখন আমি তোর বান্ধবী না, বউ হইতে চাই। তোরে ছাইড়া আমি থাকতে পারব না।

কিন্তু বলতে পারলাম না। অয়ন যত সহজে বলতে পারল, ‘আমি আটকামু না,’ তত সহজে আমি যাইতে পারব না জেনেই বলতে পারলাম না। আর বললেও অয়ন বুঝত না। তার বোঝার কথা না।

জেরিন সব সময় বলত, ‘এই সব লম্বা চুলের কানফোঁড়ানো হেভি রক গাওয়া ছেলেদের কিছুই কইয়া লাভ নাই। তারা ততটুকুই বোঝে, যতটুকুতে তাদের সুবিধা।’ তাই অসুবিধা না ঘটাইয়া আমি ক্যাফে থেইকা বাইর হইয়া রাস্তায় নামলাম। অয়ন আমারে ডাকল না। বলল না, চল, তোরে বাসায় দিয়া আসি। খালি কইল, ‘তুই যা। আমি ওয়েট করি। বহ্নি আসতেছে।’

আমি যাইতে থাকলাম। হাঁটতেছি তো হাঁটতেছি। সামনের পয়েন্টে বিশাল জ্যাম। মানুষ আর মানুষ। মনে হইলো, খুব পাতা উড়তেছে। পায়ের তলার রাস্তা ঢেউ হয়ে গেছে। রাস্তার সব মানুষের মুখ এক লাগতেছে। মনে হইলো, সবাই একমুখ। সবাই ঘোড়ার মতো দৌড়াইতেছে। মনে হইলো, সব যখন এক লাগতেছে, চশমা পইরা কী লাভ? খুইলা রাখলাম ব্যাগে। রিকশাওয়ালা জিগাইল, ‘আপা, কই যাইবেন?’ আমি কইলাম, জাহান্নামে, যাবা? ব্যাটা উত্তর না দিয়াই গেলগা। আমি হাঁটতে থাকলাম। যেন হাঁইটাই আজকে আমি অ্যান্টার্কটিকা পার করব। হাঁইটাই আমি আমারে ছাড়ায়া যাব।

কিন্তু অ্যান্টার্কটিকা পাড়ি দেওয়া আমার হইল না। ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট পরে আমি আমারে নিয়াই আমার বাড়ির গেটে দাঁড়াইলাম। হাত উল্টায়া ঘড়ি দেখলাম। সাতটা বাজে। দিন না রাত, কিছুই বুঝতেছি না। সব সেই ক্যাফের হলুদ রং হয়ে আছে। ঘরে ঢুইকাই রান্নাঘরে গেলাম। একথাল ভাত নিলাম। কাঁচা মরিচ না পাইয়া শুকনা মরিচ ভাজলাম একমুঠ। কী জানি তরকারি ডেকচিতে; খেয়াল না কইরাই একহাতা নিয়া নিলাম। টেবিলে বইসা খাইতেছি; আম্মা চিল্লায়া উঠল, ‘এই ভর সন্ধ্যাবেলায় এত ভাত নিয়া বসছোস! লগে এতডি মরিচ! কী খায়া আসছোস, হারামজাদি? নেশা ধরছোস? মিশোছ তো সব গাঁজাটি গো লগে! কী খাইছোস ক!’

শুকনা মরিচের ঝালে আমার চোখ বুইজা আসতে থাকল। আম্মার কথাগুলা ভাঙা ঢেউয়ের শব্দের মতোন নরম হয়ে আসতে থাকল আমার কানে। চোখের পানিতে সামনে দাঁড়ানো আম্মারে মনে হইল জলের ছায়া। আমি নাক টানতে টানতে কইলাম, ‘আম্মা, আমার নতুন একটা বন্ধু হইছে। নতুন বন্ধু।’

শুকনা মরিচের ঝালে আমার চোখ বুইজা আসতে থাকল। আম্মার কথাগুলা ভাঙা ঢেউয়ের শব্দের মতোন নরম হয়ে আসতে থাকল আমার কানে। চোখের পানিতে সামনে দাঁড়ানো আম্মারে মনে হইল জলের ছায়া। আমি নাক টানতে টানতে কইলাম, ‘আম্মা, আমার নতুন একটা বন্ধু হইছে। নতুন বন্ধু।’

আম্মা ঠাস কইরা চড় দিল মনে হইল। আমি ভাত শেষ কইরা নিজের ঘরে গেলাম। আমার নতুন বন্ধুরে খুব মনে পড়ল। ফোন দিতে ইচ্ছা করল। দিলাম পুরানা বন্ধু শাহেদরে ফোন। সে কইল, পনেরো মিনিট পর তার লাইভ আছে। সে এখন অ্যাভেইলেভল না। কী জানি একটা বিদেশি অর্গানাইজেশনের সেমিনার। নারী ও শিশু নিয়া। এরা বকবকাইলে টাকা দেয়। আজকের বকবকের জন্য তারা তারে দুই শ ডলার দিতেছে। কালকে শাহেদ ট্রিট দিব আমারে।

শাহেদরে নতুন বন্ধুর কথা না কইয়াই ফোন রাখতে হইল। ফোন দিলাম ইতিরে। ইতি শুইনাই চিৎকার দিল, ‘তোরে আগেই কইছিলাম, হারামজাদি, অই গাঞ্জুটিরে ছাড়। ওয় বহ্নির লগে ঘুইরা বেড়াইতেছে। চিপায়–চাপায় চুমু খাইতেছে। তোরে ছাড়ার আগে তুই ছাড়, তখনই কইছিলাম! চার বছর প্রেম কইরা এখন বন্ধু হওয়ার শখ হইছে। চুলগুলা আগুন দিয়া জ্বালায় দিতে পারলি না শালার?’

আমি কিছুই কইতে পারলাম না। ইতিই কইল, ‘শোন মৌ, আমি এখনই তোর বাসায় আসতেছি। তোর ব্রেকআপ নাইট গ্র্যান্ডওয়েতে সেলিব্রেট করব। আইম কামিং দোস্ত,’ বইলাই লাইন কেটে দিল।

আমার বুকের ভেতর কয়েক শ গ্রাম দাউদাউ কইরা পুড়তে থাকল। অসহায় মানুষের মতো অনুভূতিগুলা, বছর চারেকের মুহূর্তগুলা আহাজারি করতে থাকল। আমার নতুন বন্ধুরে আমার মনে পড়তে থাকল। চার বছরের পুরানা প্রেমিক আমার মাথার মধ্যে নতুন বন্ধু হয়া দপদপ করতে থাকল। আমি ঘুমায় গেলাম।

দেখলাম, একটা পাহাড়ে বেড়াইতে গেছি। জায়গাটা সুন্দর। মেঘ উড়তেছে। একটু আগাইতেই দেখলাম, অয়ন আর বহ্নি। অয়ন আমার দিকে হাত নাড়ল। আমি আগায় যাইতেই বহ্নিরে দেখায়া কইল, ‘সালাম কর, এইডা তোর ভাবি।’ আমি বহ্নির দিকে তাকাইলে হাইসা সে কইল, ‘নতুন বন্ধু, কেমন আছেন?’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র ন থ কল ম আম ম র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ডাক বিভাগের বেদখল সম্পদ পুনরুদ্ধার হবে’

ডাক বিভাগের বেদখল সম্পদ পুনরুদ্ধার করা হবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। 

তিনি বলেন, “ডাক বিভাগের মোট সম্পদের পাশাপাশি বেদখল সম্পদের তালিকা প্রস্তুত করেছি। দ্রুতই বিভাগীয় কমিশনার এবং ডিসিদের সমন্বয়ে ডাক বিভাগের বেদখল সম্পদ পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম শুরু করা হবে।”

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ঢাকার আগারগাঁওয়ে ডাক বিভাগের সভাকক্ষে  বিশ্ব ডাক দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। 

বিশেষ সহকারী বলেন, “এড্রেস ম্যানেজমেন্ট ( ঠিকানা ব্যবস্থাপনা)  এর বর্তমান স্ট্রাকচার ডিজিটাল ইকোনমিক জন্য উপযোগী নয় তাই বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসের অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে এড্রেস ম্যানেজমেন্টকে ডিজিটাল করার চেষ্টা করছি। যেখানে এরিয়া কোড, স্ট্রিট কোড এবং হাউজ কোড গুলো সমন্বিত করা হবে এবং একই সাথে এড্রেসের সাথে জিও ফেন্সিং করা হবে। আশা করছি, নভেম্বরের মধ্যেই ডাক এবং কুরিয়ারের সংশোধিত আইন মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করা যাবে।”

তিনি আরো বলেন, “মেইল এবং পার্সেল ট্রাকিং সিস্টেম এর আওতায় বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ট্র্যাকিং করা যায় তাই এই ট্রাকিং সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার এর মান উন্নয়নের মাধ্যমে ত্রুটিহীন করার কাজ শুরু হয়েছে। যার  মাধ্যমে মেইল এবং পার্সেল ট্রাকিং প্রায় শতভাগে উন্নীত হবে।”

ই-কমার্সের সাথে ডাক বিভাগকে সমন্বিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে যাতে শহর এবং গ্রামে মানুষ একইভাবে সেবা পায়। পাশাপাশি ই কমার্সের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়া আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানের শুরুতে ডাক ভবনের সামনের রাস্তায় এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। 


ডাক দিবস উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় “আগামীর ভাবনায় ডাক” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ডাক সেবার ডিজিটাল রূপান্তর ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা মতবিনিময় করবেন। 

দিবস উপলক্ষে ডাক ভবনের নিচ তলায় মেলার আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে ২০ স্টল রয়েছে পাশাপাশি অতি প্রাচীন ডাকটিকেটের প্রদর্শনীয় চলছে যা ১০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। 

আগামীকাল সকাল ১০টায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেলে সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান।

অনুষ্ঠানে বিশ্ব ডাক দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকেট উন্মোচন করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আব্দুন নাসের খান এর সভাপতিতে অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস এম শাহাবুদ্দিনসহ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/এএএম/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ