ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী: সুরে-তালে মুখর লালবাগ কেল্লা
Published: 9th, October 2025 GMT
ঢাকার ঐতিহাসিক মোগল স্থাপনা লালবাগ কেল্লা গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মুখর হলো সুর-তালের লহরিতে। কিংবদন্তি সংগীতজ্ঞ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী ছিল গতকাল। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁর উত্তরসূরি সাধক ও নবীন প্রজন্মের শিল্পীরা প্রয়াত ওস্তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন। আর মোহনীয় সুরের বিস্তারে মুগ্ধ করলেন শ্রোতাদের।
লাল ও সবুজ আলোর সজ্জায় সাজিয়ে তোলা হয়েছিল কেল্লার ভেতরের স্থাপনা ও প্রাচীর। মঞ্চ করা হয়েছিল পরীবিবির সমাধিসৌধের সামনে। কেল্লার প্রধান ফটক থেকে মঞ্চ পর্যন্ত পথের দুই পাশে মোগল আমলের সৈনিকদের পোশাকে সজ্জিত অভ্যর্থনাকারীরা দাঁড়িয়েছিলেন। ধূপের সুগন্ধি ধোঁয়া ভেসে যাচ্ছিল শরতের সান্ধ্য বাতাসে। মনোরম ছিল পরিবেশ।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এ আয়োজনের বিশেষ আকর্ষণ ছিল ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর প্রপৌত্র সিরাজ আলী খানের সরোদবাদন পরিবেশনা। অনুষ্ঠানে সিরাজ আলী খানকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভারত থেকে এসেছেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের একটি ভিডিও বার্তার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তিনি বলেন, ‘ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ শাস্ত্রীয় সংগীতকে বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করেছিলেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনদের নিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা আরও সমৃদ্ধ হতে পারব।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এ আয়োজন থেকে ফিলিস্তিনের জনগণের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে শহিদুল আলমসহ সবার মুক্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, ফিলিস্তিন একদিন মুক্ত হবেই। সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় গুণীজনদের নিয়ে এমন আয়োজন করে যাবে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অভিনেতা আফজাল হোসেন ও মারিয়া সারাহ্ উপমা।
মূল অনুষ্ঠান
উদ্বোধনীর পরে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিবপুর গ্রামে ১৮৬২ সালের ৮ অক্টোবর তাঁর জন্ম। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে তিনি ছিলেন এক যুগান্তকারী ব্যক্তিত্ব। সুরের ভুবনে তাঁর অবস্থান অত্যন্ত উচ্চস্তরে। অন্তত ১৫টি মৌলিক রাগ সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। মাইহার ঘরানার প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন খাঁ যেমন ছিলেন অসামান্য সুরস্রষ্টা, তেমনি বহু যন্ত্রবাদনে পারদর্শী। একই সঙ্গে সংগীতশিক্ষক হিসেবেও ছিলেন অনন্য। তাঁর ছাত্রদের অনেকে জগৎজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও পণ্ডিত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, সরোদবাদক পুত্র ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, সুরবাহারবাদক কন্যা অন্নপূর্ণা, বাঁশিবাদক পান্নালাল ঘোষসহ অনেকে।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ শতায়ু হয়েছিলেন। দীর্ঘ জীবন সুরের সাধনা করে প্রায় ১১০ বছর বয়সে প্রয়াত হন ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। আমৃত্যু সুরের সাধক আলাউদ্দিন খাঁ সর্বজনের শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।
প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের পর গানের পর্ব শুরু হয় মেঘ রাগে পণ্ডিত অসিত দের খেয়াল পরিবেশনা দিয়ে। খেয়ালের পরে ছিল একটি সমবেত পরিবেশনা। বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেন রাগ কিরওয়ানি। এতে কণ্ঠে ছিলেন অভিজিৎ কুণ্ডু, তবলায় প্রশান্ত ভৌমিক ও ফাহমিদা নাজনীন, এসরাজ বাদন করেছেন শুক্লা হালদার। সারেঙ্গিতে ছিলেন নিলয় হালদার, সরোদে ইসরা ফুলঝুরি খান ও ইলহাম ফুলঝুরি খান এবং সেতার বাজান সোহিনী মজুমদার ও মোহাম্মদ কাওছার।
সেতার ও সরোদের যুগলবন্দী ছিল পরের পরিবেশনায়। খাম্বাজ রাগে সেতার বাজান আফসানা খান ও সরোদ বাজান রুখসানা খান।
এ পর্যায়ে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁকে নিয়ে লেখা উপন্যাস হেম–বেহাগের মহারাজা নিয়ে কথোপকথনে অংশ নেন আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন।
অনুষ্ঠানে সিরাজ আলী খানকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, এই চমৎকার পরিবেশে এমন সুন্দর আয়োজন তাঁকে অভিভূত করেছে। যে সরোদটি তিনি এখন বাজাবেন, সেটি বড় বাবা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর। এটি প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো।
সুরসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন উপদ ষ ট হয় ছ ল পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে র্যালি ও আলোচনা সভা
নারায়ণগঞ্জে বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৬ অক্টোবর) জেলা প্রশাসন ও গণপূর্ত বিভাগের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের মেইন গেইট হতে এক বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। র্যালিতে জেলা প্রশাসন ও গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগন অংশগ্রহণ করেন।
র্যালি শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় স্বাগতম বক্তব্য দেন গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।
আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিয়া বলেন, পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য সকলকে সচেতন হতে হবে। নিজের ধারা অন্যের কোন ক্ষতি হবে এমন চিন্তা ত্যাগ করতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ রক্ষায় একমত পোষন করতে হবে।