নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি কোয়ার্টার থেকে এক শিক্ষানবিশ নার্সের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মরদেহটি নার্স কোয়ার্টারের দ্বিতীয়তলা থেকে উদ্ধার করা হয়। পরিবারের সদস্যরা জানান, অসুস্থতার কারণে শিক্ষানবিশ সনদ না পাওয়ার হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

মারা যাওয়া তরুণের নাম মোহাম্মদ শাহিন আলী (২২)। তিনি লালপুর উপজেলার বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের মহরকয়া গ্রামের মরহুম সাজদার রহমানের ছেলে। শাহিন রাজশাহীর মির্জা নার্সিং কলেজ থেকে নার্সিং ডিপ্লোমা পাস করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে শিক্ষানবিশ ছিলেন। তাঁর বোন মেহেরুন্নেসা বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স হিসেবে কর্মরত। তাঁর সঙ্গে নার্স কোয়ার্টারে থাকতেন শাহিন।

মেহেরুন্নেসা জানান, তাঁর ভাই শাহিন আলী নার্সিং ডিপ্লোমা পাস করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয় মাস মেয়াদি ইন্টার্নশিপ শুরু করেছিলেন। তবে অসুস্থতার কারণে তিন মাস পর ইন্টার্নশিপ বন্ধ করে বাড়ি ফিরে যান। গতকাল সকালে ইন্টার্নশিপের সার্টিফিকেট আনতে রাজশাহীতে যান শাহিন। কিন্তু ইন্টার্নশিপ পুরোপুরি শেষ না করায় তাঁকে সার্টিফিকেট দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতে তিনি মন খারাপ করে বাসায় ফিরে আসেন। গতকাল সন্ধ্যার পর খবর পেয়ে বাসায় ফিরে একটি কক্ষে গামছা পেঁচিয়ে ঝুলতে দেখেন মেহেরুন্নেসা। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে। তাঁর ধারণা, সার্টিফিকেট না পাওয়ার হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছেন শাহিন।

শাহিনের মরদেহটি উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে বাগাতিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাঁর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানানো সম্ভব হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক ষ নব শ মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

‘খবরদার, আমি শাহজাহান চৌধুরী, আমাকে যারা চিনে না, তারা এখনো মাটির নিচে বসবাস করে’

চট্টগ্রামের আলোচিত জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীর আরও একটি বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও চট্টগ্রাম–১৫ (সাতকানিয়া–লোহাগাড়া) আসনে জামায়াতের মনোনীত এই প্রার্থীর বক্তব্য আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে। ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দেন তিনি। এ সময় তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘খবরদার, খবরদার; আমি শাহজাহান চৌধুরী। আমাকে যারা চিনে না, তারা এখনো মাটির নিচে বসবাস করে...। আমার জন্য আল্লাহ আছে। আল্লাহর মেহেরবানি, সূর্য আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে। আল্লাহ তাআলা আমাকে এ রকম মর্যাদা দিয়েছেন। আপনারা দোয়া করবেন।’

স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৩ নভেম্বর চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার চরতী ইউনিয়নের তুলাতলী এলাকায় জনসংযোগের সময় শাহজাহান চৌধুরী এই বক্তব্য দিয়েছিলেন। তবে বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা শুরু হয়। শাহজাহান চৌধুরী চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় হুমকির সুরেও কথা বলেন। তবে কার উদ্দেশে এসব বলেছেন, তা স্পষ্ট হয়নি। তিনি বলেন, ‘চুদুরবুদুর (উল্টাপাল্টা) করিও না। লুলা (পঙ্গু) হয়ে যাবে।’

আরও পড়ুন‘প্রশাসন আমাদের কথায় উঠবে’: জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ২৫ নভেম্বর ২০২৫

ভিডিওতে শাহজাহান চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমার চোখের পানি বৃথা যায়নি। এই এলাকা আমার শায়খ, আমার ওস্তাদ মাওলানা মমিনুল হক চৌধুরীর জন্মস্থান। এই এলাকা মাওলানা চৌধুরীর এলাকা। আমি এলাকাকে সম্মান করি, এই এলাকার মাটিকে সম্মান করি। এখানে কোনো রাজনীতি নেই। এখানো আর কোনো মার্কা নেই, সাতকানিয়া–লোহাগাড়ার মার্কা একটা, সেটা হলো দাঁড়িপাল্লা মার্কা।’

বক্তব্যের এক পর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আমি যদি চোখের পানি ফেলি, লুলা (পঙ্গু) হয়ে যাবে। আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। ১৮ বছরের মধ্যে ৯ বছর জেল খেটেছি। আমি টাকাপয়সা, ধনদৌলত, কাপড়চোপড়, পরিবার দেখিনি। আমি আপনাদের দুয়ারে আজকে এসেছি। আমরা স্বার্থপর নই। আমি দুইবারের এমপি। কোনো দিন এক কড়া জমিও নিইনি।’

এর আগে গত শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের জিইসি কনভেনশন হলে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ‘নির্বাচনী দায়িত্বশীল সম্মেলন’–এ প্রশাসনকে নিয়ে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন শাহজাহান চৌধুরী। এতে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে নয়...যার যার নির্বাচনী এলাকায় প্রশাসনের যারা আছে, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেপ্তার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে। পুলিশকে আপনার পিছনে পিছনে হাঁটতে হবে।’

এ বক্তব্যের পর গত মঙ্গলবার শাহজাহান চৌধুরীকে শোকজ (কারণ দর্শানোর নোটিশ) করেছে জামায়াতে ইসলামী। আগামী সাত দিনের মধ্যে তাঁকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে তাঁকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পেলে তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার স্বাক্ষরিত নোটিশে এ কথা বলা হয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজাহান চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) মো. আরমান উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে শাহজাহান চৌধুরী বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। চিঠির বিষয়ে তিনি বলতে পারবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ