নির্মাণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পরিবহন খাতে ঋণ বিতরণ কমে গেছে
Published: 13th, November 2025 GMT
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, নির্মাণ ও পরিবহনসহ প্রায় সব উৎপাদনমুখী খাতে ব্যাংকঋণ বিতরণ কমে গেছে। ফলে অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগের মতো এখন চাইলেই ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতি ধীর হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি মানুষের চাহিদাও কমেছে। ফলে ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিবর্তে উল্টো কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ঋণ বিতরণ কমছে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের ঋণে বছরে ১০ শতাংশের বেশি সুদ যুক্ত হচ্ছে।
ঋণ কমেছে যেসব খাতেবিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা একদিকে নতুন ঋণ নিচ্ছেন না, অন্যদিকে তাঁদের ওপর পুরোনো ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে নির্মাণ ও ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে টানা তিন প্রান্তিক ঋণ কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত অধিকাংশ খাতে ঋণের স্থিতি কমেছে। অর্থাৎ এসব খাতে যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি আদায় হয়েছে। ফলে ঋণের স্থিতি বাড়েনি। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে মেয়াদি ঋণ বৃদ্ধি পেলেও পরের প্রান্তিক এপ্রিল-জুনে হ্রাস পেয়েছে। মার্চে মেয়াদি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, যা জুনে কমে হয়েছে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মানে এখন নতুন প্রকল্প নেই বললেই চলে। মেয়াদি ঋণ মূলত নতুন প্রকল্প করার ক্ষেত্রে নেওয়া হয়।
***নির্মাণ ও ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে টানা তিন প্রান্তিক ধরে ঋণ কমে আসছে। ***পরিবহন খাতেও নতুন বিনিয়োগ নেই, বরং ঋণ কমেছে।নির্মাণ খাতের ঋণ ধারাবাহিকভাবে কমে আসছে। গত বছরের ডিসেম্বরে এই খাতে ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা কমে মার্চে ১ লাখ ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকায় ও জুনে ১ লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামে। সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতেই নির্মাণ কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। এর প্রভাবে রড-সিমেন্টের দাম ও বিক্রি দুটোই কমেছে। পরিবহন খাতেও নতুন বিনিয়োগ নেই। উল্টো গত মার্চ থেকে জুনে ঋণ কমেছে ১০০ কোটি টাকা। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য খাতের চিত্রও একই রকম। এই খাতে ডিসেম্বরে ঋণ ছিল ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, যা মার্চে বেড়ে ৫ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা হলেও গত জুনে কমে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নেমে যায়।
কেন ঋণ কমছেএদিকে ঋণ বিতরণ যেমন কমছে, তেমনি খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে ব্যাংকগুলোর কাছে ঋণযোগ্য তহবিল কমে আসছে। দেশে গত জুন মাসের শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। দেশে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি।
জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানির পরিচালক আবুল কাসেম খান বলেন, ‘অর্থনীতির গতি বেশ আগেই কমে গেছে। সে জায়গা থেকে বের হতে পারেনি। শুধু রপ্তানি খাত আগের ধারা ধরে রেখেছে। মূল্যস্ফীতিও প্রত্যাশা অনুযায়ী কমেনি। এ জন্য মানুষের চাহিদা কমে এসেছে। কখন নির্বাচন হবে তার জন্যও সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ী উভয় পক্ষ এখন অপেক্ষা করছেন। এ ছাড়া আগের মতো ভুয়া ঋণ বিতরণ হচ্ছে না। এটিও ঋণ কমে যাওয়ার একটি কারণ।’
আবুল কাসেম খান আরও বলেন, ‘আমরা সব সময় চাই খরচ বাড়ুক। সেটা সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে। তাতে কর্মসংস্থান হবে, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। তবে সেটা এখন হচ্ছে না। অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার এলেই বিনিয়োগ শুরু হবে।’
একাধিক ব্যাংকের ঋণ বিভাগের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন কমে গেছে। এর ফলে রড-সিমেন্টের বিক্রি কমেছে। সরকারি-বেসরকারি প্রায় ২৫টি ব্যাংক ব্যবসা-বাণিজ্যে ঋণ দেওয়া বন্ধ রেখেছে। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন কোনো ঋণ যাচ্ছে না। নির্বাচন হয়ে গেলেই পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে, বিষয়টা এত সহজ না। কারণ, ঋণ যারা দেবে তাদের কাছে ঋণযোগ্য তহবিল কম।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঋণ ব তরণ ব সরক র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
তাইপেতে অ্যাসোসিও ডিজিটাল সামিট ২০২৫ শুরু
এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর সংস্থা এশিয়ান-ওশেনিয়ান কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রি অর্গানাইজেশনের (অ্যাসোসিও) তিন দিনের ‘অ্যাসোসিও ডিজিটাল সামিট ২০২৫’ তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে আজ সোমবার শুরু হয়েছে। শহরের শেরাটন গ্র্যান্ড তাইপে হোটেলে এ শীর্ষ সম্মেলন চলবে আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত।
এবারের সামিটের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘এআই শেপিং দ্য ডিজিটাল এশিয়া (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ডিজিটাল এশিয়ার রূপদান)’। তাইওয়ানের ডিজিটাল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয় (মোডা), তাইওয়ান ইনোভেটিভ সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন (টিসসা) এবং সিসা ইনফরমেশন সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অব আরওসি যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
শীর্ষ পর্যায়ের অংশগ্রহণসামিটের প্রথম দিন আজ অ্যাসোসিও জেনারেল অ্যাসেম্বলি অনুষ্ঠিত হয়। মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে আগামীকাল ১১ নভেম্বর। এতে তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট সিয়াও বি-খিম, ডিজিটাল অ্যাফেয়ার্সমন্ত্রী ই-জিং লিন, অ্যাসোসিওর চেয়ারম্যান স্ট্যান সিং-জিত এবং টিসসার চেয়ারম্যান ব্রায়ান শেন বক্তব্য দেবেন বলে কথা রয়েছে। এবারের সামিটে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন পারফেক্ট করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অ্যালিস চ্যাং এবং এইচপিই এপ্যাকের এআই লিডার গোহ সুন হেং।
অ্যাসোসিও সামিটে অ্যাসোসিওর সদস্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা