যশোরে চাঁদা না পেয়ে কৃষককে কুপিয়ে জখম, অভিযোগ বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে
Published: 10th, October 2025 GMT
যশোরের মনিরামপুরে চাঁদা না পাওয়ায় এক কৃষককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখমের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার পাড়দিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
আহত কৃষকের নাম আহাদ আলী দফাদার (৭০)। তিনি শ্যামকুড় ইউনিয়নের পাড়দিয়া গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পরিবারের অভিযোগ, ছেলে সবুজ আহম্মেদের কাছে চাঁদা না পেয়ে স্থানীয় বিএনপির কর্মীরা তাঁর বাবা আহাদ আলীকে কুপিয়ে জখম করেছেন। সবুজ আহম্মেদ শ্যামকুড় ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের (ইউপি) সদস্য। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে দলে তাঁর কোনো পদ-পদবি ছিল না।
সবুজ আহম্মেদ বলেন, ‘আড়াই মাস আগে কাশীপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম ওরফে শফি (৪৫), পাড়দিয়া গ্রামের আনোয়ার পারভেজসহ (৩০) কয়েকজন বিএনপি কর্মী আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেয়ে তাঁরা আমার বাড়ির কাচের জানালা ভাঙচুর করেন। চাঁদা দিতে না পেরে তাঁদের ভয়ে আমি বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকছি। মাঝেমধ্যে বাড়িতে যাই।’
সবুজ আহম্মেদের অভিযোগ, গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শফিকুল ইসলাম ও আনোয়ার পারভেজসহ নূর আলী (২৪), নাঈম হোসেন (২৭), রাকিব হোসেন (২৫) ও মশিয়ার রহমান (৪৬) সবুজের খোঁজে বাড়িতে আসেন। তিনি ও তাঁর বাবা তখন বাড়িতে ছিলেন না। সবুজকে না পেয়ে তাঁর স্ত্রী ও চার বছরের সন্তানের উপস্থিতিতে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে তাঁরা ঘেরের মাছের খাবারের ৭০ হাজার টাকা নিয়ে যান এবং সবুজের স্ত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। চলে যাওয়ার সময় তাঁরা সাত লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করেন।
গতকাল সন্ধ্যায় সবুজের বাবা আহাদ আলী বাজারে যাওয়ার পথে শফিকুল ইসলাম ও আনোয়ার পারভেজের নেতৃত্বে ৮–৯ জন তাঁকে পাশের বিদ্যালয় মাঠে ডেকে নিয়ে রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। পরে স্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। রাতে অভিযুক্তরা আহাদের ভাই জালাল উদ্দিনকেও (৭২) মারধর করেন। তিনি মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। সবুজ আহম্মেদের দাবি, চাঁদা না দেওয়ায় তাঁর বাবার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় তাঁরা মামলা করবেন।
মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক অনুপ বসু বলেন, আহাদ আলীর পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শ্যামকুড় ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, আনোয়ার পারভেজ বিএনপির কর্মী। শফিকুল ইসলাম, নূর আলী, নাঈম হোসেন, রাকিব হোসেন ও মশিয়ার রহমান আগে আওয়ামী লীগে ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে নিজেদের বিএনপি কর্মী দাবি করলেও তাঁরা দলের কেউ নন।
এ বিষয়ে মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলুর রহমান খান বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে সবুজ আহম্মেদের বিরুদ্ধে এলাকার লোকদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সবুজ আহম্মেদকে খুঁজতে গিয়ে। তাঁকে না পেয়ে তাঁর বাবাকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় চাঁদাবাজির কোনো খবর পাওয়া পায়নি। সবুজের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সব জ আহম ম দ র ব এনপ র সব জ র
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক আলী রীয়াজ ওই নারীকে চেনেন না: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
এক নারী প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজকে নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ভিডিও বক্তব্য প্রচার করছেন এবং তাঁর চরিত্র হননের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। অধ্যাপক আলী রীয়াজ ওই নারীকে চেনেন না জানিয়ে প্রেস উইং বলেছে, সরকার বিষয়টির দিকে গভীরভাবে নজর রাখছে এবং এই মর্মে ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয় বিবেচনা করবে।
আজ বুধবার ‘মানহানিকর বক্তব্য প্রচার বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজের বিবৃতি’ শিরোনামে এক বার্তায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এসব কথা বলেছে। অতন্দ্রানু রিপা নামের ওই নারী গতকাল মঙ্গলবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে এই অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছে প্রেস উইং।
বার্তায় বলা হয়েছে, ‘অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, তিনি এ বক্তব্য প্রচারকারী নারীকে চেনেন না। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বা সম্পর্কের বিষয়ে যেসব দাবি করা হয়েছে, তা সর্বৈব মিথ্যা। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই ধরনের মিথ্যা বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে।’
এ ধরনের বক্তব্য অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। অন্যথায় এসব মানহানিকর, আপত্তিকর ও চরিত্র হননের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আলী রীয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর। গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার প্রথমে ছয়টি ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয়েছিল অধ্যাপক আলী রীয়াজকে।
ওই ছয়টি কমিশন প্রতিবেদন দেওয়ার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়, তার সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রায় আট মাস আলোচনা করে গত অক্টোবরে জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ কমিশন গত ২৮ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিকল্প দুটি সুপারিশ জমা দেয়। তার ভিত্তিতে আজ বৃহস্পতিবার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ জারি করে সরকার।