বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। কিন্তু আবাসনের ব্যবস্থা আছে মাত্র ৪৪৬ জন শিক্ষার্থীর। কলেজের ৯৯ ভাগ শিক্ষার্থীকে বাইরে মেসে থাকতে হচ্ছে। এতে তিন থেকে চার গুণ টাকা খরচ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপের মধ্যে থাকছেন। তবে নিরাপত্তা, বখাটের উৎপাতসহ নানা কারণে মেসে থাকতে ছাত্রীদের সমস্যা বেশি হচ্ছে। হলে থাকতে না পারায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাও ব্যাহত হচ্ছে।

হলে থাকতে না পারায় শিক্ষার্থীদের যে নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে, তা প্রকাশ পেয়েছে কলেজের ইংরেজি বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেনের কথায়। তিনি বলেন, ‘সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা থেকে এখানে এসে পড়ালেখা করছি। হল বন্ধ থাকায় কলেজ–সংলগ্ন জহরুলনগর এলাকায় একটি ছাত্রাবাসে থেকে পড়ালেখা করছি। ছাত্রাবাসে থাকা ও খাওয়া বাবদ প্রতি মাসে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়। কলেজের আবাসিক হল চালু হলে থাকা-খাওয়াসহ ব্যয় হতো সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা। লেখাপড়ার পেছেন শুধু তিন গুণের বেশি ব্যয় গুনতেই হচ্ছে না, মেসে বহিরাগতদের উৎপাত, চাঁদাবাজির মতো বিড়ম্বনা সহ্য করতে হচ্ছে।’

কলেজ প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রীদের জন্য চালু হওয়া নতুন হলসহ সরকারি আজিজুল হক কলেজে আবাসিক হল আছে ছয়টি। এর মধ্যে ছাত্রীদের দুটি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর চালু হওয়া হলটিতে ৮০ জন ছাত্রী থাকছেন। আর বেগম রোকেয়া হলে ২৫০ আসনের বিপরীতে ৪৫০ জনের বেশি ছাত্রী গাদাগাদি করে থাকছেন। কলেজের পুরোনো ক্যাম্পাসে চালু আছে ১০০ আসনের ফখরুদ্দীন আহমদ হল। সেখানে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা থাকেন। ২০০৯ সালে ছাত্রশিবির ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর কলেজের শের-ই-বাংলা, শহীদ তিতুমীর ও শহীদ আকতার আলী মুন হল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে কোটি টাকা ব্যয় করে দুটি হল সংস্কার করা হলেও সেগুলো আর চালু হয়নি।

সংস্কার হলেও চালু হয়নি

কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আকতার আলী মুন হলে ৯৬টি, তিতুমীর হলে ৮০ ও শের-ই-বাংলা হলে আসনসংখ্যা ৪০। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় এসব হলের আসবাব থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিস চুরি হয়ে যায়। পরে শের-ই-বাংলা হল পরিত্যক্ত ঘোষণা করে অন্য দুটি হল সংস্কার করে চালুর উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আকতার আলী মুন হল ও শহীদ তিতুমীর হল সংস্কারের জন্য কয়েক দফায় ১ কোটি টাকার বেশি ব্যয় দেখানো হয়। ২০১৬ সালে আকতার আলী হলের সংস্কার শেষ হয়। সংস্কার শেষে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে শহীদ তিতুমীর হল হস্তান্তর করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এরপরও চালুর উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন।

কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, ছাত্রদের তিনটি আবাসিক হল ১৬ বছর ধরে বন্ধ। এর মধ্যে দুটি চালু করা সম্ভব কি না, যাচাই করতে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা প্রতিবেদন দিলে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের ভবন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কল জ র

এছাড়াও পড়ুন:

মর্জিনা হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মর্জিনা বেগম হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। বুধবার (২৬ নভেম্বর) আখাউড়া সড়কবাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

নিহত মর্জিনা বেগম (৪৫) পৌর এলাকার দেবগ্রাম গ্রামের ইসমাইল মিয়ার স্ত্রী। তিনি সড়কবাজারে পরিচ্ছন্নতার কাজ করতেন এবং সন্ধ্যায় পিঠা বিক্রি করতেন। তিনি তার দৃষ্টিহীন স্বামীর সঙ্গে নয়াবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

আরো পড়ুন:

ময়মনসিংহে পুলিশ বক্সের সামনে যুবদলকর্মীকে হত্যা

গজারিয়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় যুবক নিহত

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগরের শহিদুল ইসলাম (৪৩), হবিগঞ্জের রানীগঞ্জের শফিক (৪০) এবং গয়েরপুরের রুমান মিয়া (২৪)। তারা আখাউড়া পৌর এলাকার মসজিদপাড়া লাল মিয়া হাজীর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

পিবিআই জানায়, গত ২৫ নভেম্বর মধ্যরাতে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন করে ‘মালের গাড়ি এসেছে’ মর্মে মর্জিনা বেগমকে ডেকে নেওয়া হয়। পরদিন সকাল থেকে তার খোঁজ না পেয়ে পরিবার খোঁজাখুঁজি শুরু করে। বিকেল ৫টার দিকে আখাউড়া পৌরসভা কার্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনের পাশে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

তদন্তে উঠে আসে, বাজার এলাকার দারোয়ান শহিদুল ইসলাম কৌশলে ফোন করে মর্জিনাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ফোন করার ১৪ মিনিটের মধ্যেই মর্জিনা সেই পথে ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছেন। শহিদুল ইসলাম প্রথমে তাকে ধর্ষণ করেন। এরপর তার সহযোগী শফিক ও রুমান মিয়া ধর্ষণের চেষ্টা করলে ভুক্তভোগী বাধা দেন। পরে তিনজন মিলে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। একপর্যায়ে একজন গলা চেপে ধরে এবং অন্য দুইজন হাত–পা চেপে শ্বাসরোধে মর্জিনার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

ঘটনার পর শহিদুল ইসলাম মোবাইল হারানোর নাটক করলেও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে তার অবস্থান শনাক্ত হয়। পরে ২৬ নভেম্বর আখাউড়া সড়কবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভোরে মসজিদপাড়া এলাকা থেকে শফিক ও রুমানকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

পিবিআই জানায়, গ্রেপ্তার তিনজনই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন। তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলমান।

পিবিআই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের সুপার শচীন চাকমা বলেন, ‍“এটি একটি নৃশংস ও পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। প্রযুক্তি ও সিসিটিভি ফুটেজের সহায়তায় আমরা দ্রুত আসামিদের শনাক্ত করতে পেরেছি।”

ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ