গুগল এবার শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়ে এসেছে ফ্রি গুগল জেমিনি প্রো প্ল্যান। এটি এক বছরের জন্য সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে। এই অফারের আওতায় জেমিনি ২.৫ প্রো মডেল, ডিপ রিসার্চ, অডিও ওভারভিউ, কুইজ তৈরির টুল ও অপরিসীম ছবি আপলোডের সুবিধাসহ নানা প্রিমিয়াম ফিচার ব্যবহার করতে পারবেন; সঙ্গে থাকছে ২ টেরাবাইট ক্লাউড স্টোরেজ। গুগলের এ অফার শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য। এ অফারের সুযোগ আগামী ৯ ডিসেম্বর শেষ হবে।

যাঁরা এই অফার পাবেন

অফারটি পেতে শিক্ষার্থীদের কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে—

–বয়স হতে হবে অন্তত ১৮ বছর।

–শেয়ারআইডির মাধ্যমে শিক্ষার্থী হিসেবে সফলভাবে যাচাই করতে হবে।

–ব্যক্তিগত গুগল অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে (বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত নয়)।

–গুগল পেমেন্ট অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে এবং গুগল প্লে স্টোরের মাধ্যমে গুগল এআই প্রো (Google AI Pro) সাবস্ক্রাইব করতে হবে।

বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশ, যেমন ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ঘানার শিক্ষার্থীরা এই অফারের আওতায় আসবেন।

আরও পড়ুনঅনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের১৪ ঘণ্টা আগে

যেসব সুবিধা থাকছে

এই অফারে শিক্ষার্থীরা নিচের প্রিমিয়াম ফিচারগুলো ব্যবহার করতে পারবেন—

–অপরিসীম ছবি আপলোড: লেকচার নোট বা টেক্সট বুকের প্রশ্নের ছবি তুলে সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর পাওয়া যাবে।

–শিক্ষাসংক্রান্ত: কোর্স ম্যাটেরিয়াল, নোট ও প্রশ্নগুলো থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হবে প্র্যাকটিস কুইজ, ফ্ল্যাশকার্ড ও স্টাডি গাইড।

–ডিপ রিসার্চ: ওয়েবজুড়ে জটিল বিষয়ে রিসার্চ করে সোর্স, সাইটেশনসহ বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করবে জেমিনি।

–ভিও ৩.

১ ফাস্ট (Veo 3.1 Fast): টেক্সট ও ইমেজ থেকে কাস্টম অডিওসহ ভিডিও তৈরি করার সুযোগ।

–অডিও ওভারভিউ: লেকচার বা বইয়ের অধ্যায়কে অডিও আকারে শুনে নেওয়ার সুবিধা।

–জেমিনি লাইভ: রিয়েল টাইম কথোপকথনের মাধ্যমে ব্রেনস্টর্মিং, প্রেজেন্টেশন প্রস্তুতি ও জটিল বিষয় সহজভাবে বোঝার সুযোগ।

আরও পড়ুন১০ম গ্রেডে পাচ্ছেন প্রাথমিকের ৬৫ হাজার ৫০২ জন প্রধান শিক্ষক, অর্থ বিভাগের সম্মতি১১ নভেম্বর ২০২৫

অন্তর্ভুক্ত টুল ও অ্যাপ্লিকেশন

–জেমিনি অ্যাপ: প্রোডাক্টিভিটি ও ক্রিয়েটিভিটির জন্য উন্নত ফিচার।

–জিমেইল, ডকস, শিটস, স্লাইডস ও মিট (Gmail, Docs, Sheets, Slides ও Meet)–এ সরাসরি এআই সহায়তা।

–নোটবুক এলএম: রিসার্চ ও লেখার কাজে উন্নত এআই টুল।

–২ টিবি ক্লাউড স্টোরেজ: গুগল ফটোজ, ড্রাইভ ও জিমেইলে বাড়তি জায়গা।

আরও যা জানা গুরুত্বপূর্ণ

এ অফারটি শুধু ব্যক্তিগত জিমেইল অ্যাকাউন্টের জন্য প্রযোজ্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত গুগল ওয়ার্কস্পেস অ্যাকাউন্টে এই ফ্রি সাবস্ক্রিপশন পাওয়া যাবে না, যদিও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের জেমিনি ২.৫ প্রো (Gemini 2.5 Pro) বা নোটবুক এলএম সক্রিয় করে দিতে পারে।

আরও পড়ুনমানবিক বিভাগ থেকে পড়েও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, শাহীন আক্তারের গল্প যেন অনুপ্রেরণার ১১ নভেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনস্টাইপেন্ডিয়াম হাঙ্গেরিকাম স্কলারশিপ, ইউরোপে বিনা খরচে উচ্চশিক্ষা১২ নভেম্বর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অ য ক উন ট র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

নির্মাণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পরিবহন খাতে ঋণ বিতরণ কমে গেছে

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, নির্মাণ ও পরিবহনসহ প্রায় সব উৎপাদনমুখী খাতে ব্যাংকঋণ বিতরণ কমে গেছে। ফলে অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগের মতো এখন চাইলেই ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতি ধীর হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি মানুষের চাহিদাও কমেছে। ফলে ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিবর্তে উল্টো কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ঋণ বিতরণ কমছে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের ঋণে বছরে ১০ শতাংশের বেশি সুদ যুক্ত হচ্ছে।

ঋণ কমেছে যেসব খাতে

বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা একদিকে নতুন ঋণ নিচ্ছেন না, অন্যদিকে তাঁদের ওপর পুরোনো ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে নির্মাণ ও ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে টানা তিন প্রান্তিক ঋণ কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত অধিকাংশ খাতে ঋণের স্থিতি কমেছে। অর্থাৎ এসব খাতে যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি আদায় হয়েছে। ফলে ঋণের স্থিতি বাড়েনি। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে মেয়াদি ঋণ বৃদ্ধি পেলেও পরের প্রান্তিক এপ্রিল-জুনে হ্রাস পেয়েছে। মার্চে মেয়াদি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, যা জুনে কমে হয়েছে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মানে এখন নতুন প্রকল্প নেই বললেই চলে। মেয়াদি ঋণ মূলত নতুন প্রকল্প করার ক্ষেত্রে নেওয়া হয়।

***নির্মাণ ও ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে টানা তিন প্রান্তিক ধরে ঋণ কমে আসছে। ***পরিবহন খাতেও নতুন বিনিয়োগ নেই, বরং ঋণ কমেছে।

নির্মাণ খাতের ঋণ ধারাবাহিকভাবে কমে আসছে। গত বছরের ডিসেম্বরে এই খাতে ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা কমে মার্চে ১ লাখ ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকায় ও জুনে ১ লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামে। সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতেই নির্মাণ কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। এর প্রভাবে রড-সিমেন্টের দাম ও বিক্রি দুটোই কমেছে। পরিবহন খাতেও নতুন বিনিয়োগ নেই। উল্টো গত মার্চ থেকে জুনে ঋণ কমেছে ১০০ কোটি টাকা। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য খাতের চিত্রও একই রকম। এই খাতে ডিসেম্বরে ঋণ ছিল ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, যা মার্চে বেড়ে ৫ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা হলেও গত জুনে কমে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নেমে যায়।

কেন ঋণ কমছে

এদিকে ঋণ বিতরণ যেমন কমছে, তেমনি খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে ব্যাংকগুলোর কাছে ঋণযোগ্য তহবিল কমে আসছে। দেশে গত জুন মাসের শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। দেশে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি।

জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানির পরিচালক আবুল কাসেম খান বলেন, ‘অর্থনীতির গতি বেশ আগেই কমে গেছে। সে জায়গা থেকে বের হতে পারেনি। শুধু রপ্তানি খাত আগের ধারা ধরে রেখেছে। মূল্যস্ফীতিও প্রত্যাশা অনুযায়ী কমেনি। এ জন্য মানুষের চাহিদা কমে এসেছে। কখন নির্বাচন হবে তার জন্যও সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ী উভয় পক্ষ এখন অপেক্ষা করছেন। এ ছাড়া আগের মতো ভুয়া ঋণ বিতরণ হচ্ছে না। এটিও ঋণ কমে যাওয়ার একটি কারণ।’

আবুল কাসেম খান আরও বলেন, ‘আমরা সব সময় চাই খরচ বাড়ুক। সেটা সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে। তাতে কর্মসংস্থান হবে, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। তবে সেটা এখন হচ্ছে না। অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার এলেই বিনিয়োগ শুরু হবে।’

একাধিক ব্যাংকের ঋণ বিভাগের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন কমে গেছে। এর ফলে রড-সিমেন্টের বিক্রি কমেছে। সরকারি-বেসরকারি প্রায় ২৫টি ব্যাংক ব্যবসা-বাণিজ্যে ঋণ দেওয়া বন্ধ রেখেছে। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন কোনো ঋণ যাচ্ছে না। নির্বাচন হয়ে গেলেই পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে, বিষয়টা এত সহজ না। কারণ, ঋণ যারা দেবে তাদের কাছে ঋণযোগ্য তহবিল কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ