রাকসু নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার, অনাবাসিক ৫ ছাত্রকে হল ত্যাগের নির্দেশ
Published: 13th, October 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্রপ্রতিনিধি নির্বাচন সামনে রেখে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ সদস্যদের দেখা গেছে।
এদিকে রাতে নিরাপত্তা নিশ্চিতের অংশ হিসেবে দুটি আবাসিক হলে তল্লাশি চালানো হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয়-২৪ এবং মতিহার হলে যৌথ অভিযান চালায় পুলিশ, প্রক্টরিয়াল বডি ও হল প্রশাসন। এ সময় দুই হলে মোট পাঁচজন অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। তাঁদের আজ সোমবারের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় হল প্রশাসন।
আরও পড়ুনরাকসু নির্বাচনে তিনটি সম্পাদক পদে জোর লড়াইয়ের আভাস১১ অক্টোবর ২০২৫আবাসিক হলে পুলিশ দিয়ে তল্লাশি চালানোর সমালোচনা করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকার তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে পুলিশের কাজ কী? যদি পুলিশের কাজ থাকে তাহলে হল প্রভোস্টের কাজ কী? যেভাবে তল্লাশি হচ্ছে, মনে হয় হলগুলোতে শিক্ষার্থী থাকেন না, সন্ত্রাসী থাকে। কী গুরুতর অসম্মানজনক বিষয়! পুলিশকে হলে ঢুকিয়ে নর্মালাইজ করার চেষ্টা বিশেষ ভালো লক্ষণ না। আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। হলের নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রভোস্টের, সে জন্যই তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হইছে। দুই দিন পরপর হলে চুরি হয়, যা ঠেকানোর ন্যূনতম মুরোদ তাঁদের নাই। এখন পুলিশগিরি দেখাচ্ছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান গতকাল মধ্যরাতে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে দুটি হলে যৌথ তল্লাশি চালানো হয়েছে। মতিহার হলে অভিযান চালিয়ে তিনজন এবং বিজয়-২৪ হলে দুজন অনাবাসিক শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে। তাঁরা সবাই সংশ্লিষ্ট হলেরই ছাত্র। তবু আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, আগামীকালের (আজ) মধ্যে হল ত্যাগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা খুবই দায়িত্বশীল আচরণ করেছেন। আগের অবস্থা থেকে এখন হল অনেক ভালো আছে।
আরও পড়ুনরাকসু নির্বাচন: কয়েকটি প্যানেলের ‘আকাশকুসুম’ ইশতেহার০৯ অক্টোবর ২০২৫এদিকে রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্রপ্রতিনিধি নির্বাচন ঘিরে গতকাল রাত থেকে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অন্তত ৩০ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের ফটকগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। নির্বাচনের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে ভোট গ্রহণের দিন ২ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব জানিয়েছেন, নির্বাচনের দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদাপোশাক ও ইউনিফর্ম মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার পুলিশ সদস্য ক্যাম্পাসে মোতায়েন থাকবেন। এ ছাড়া অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও সার্বিক সহযোগিতায় থাকবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গতক ল র
এছাড়াও পড়ুন:
মর্জিনা হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মর্জিনা বেগম হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। বুধবার (২৬ নভেম্বর) আখাউড়া সড়কবাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
নিহত মর্জিনা বেগম (৪৫) পৌর এলাকার দেবগ্রাম গ্রামের ইসমাইল মিয়ার স্ত্রী। তিনি সড়কবাজারে পরিচ্ছন্নতার কাজ করতেন এবং সন্ধ্যায় পিঠা বিক্রি করতেন। তিনি তার দৃষ্টিহীন স্বামীর সঙ্গে নয়াবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
আরো পড়ুন:
ময়মনসিংহে পুলিশ বক্সের সামনে যুবদলকর্মীকে হত্যা
গজারিয়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় যুবক নিহত
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগরের শহিদুল ইসলাম (৪৩), হবিগঞ্জের রানীগঞ্জের শফিক (৪০) এবং গয়েরপুরের রুমান মিয়া (২৪)। তারা আখাউড়া পৌর এলাকার মসজিদপাড়া লাল মিয়া হাজীর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
পিবিআই জানায়, গত ২৫ নভেম্বর মধ্যরাতে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন করে ‘মালের গাড়ি এসেছে’ মর্মে মর্জিনা বেগমকে ডেকে নেওয়া হয়। পরদিন সকাল থেকে তার খোঁজ না পেয়ে পরিবার খোঁজাখুঁজি শুরু করে। বিকেল ৫টার দিকে আখাউড়া পৌরসভা কার্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনের পাশে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
তদন্তে উঠে আসে, বাজার এলাকার দারোয়ান শহিদুল ইসলাম কৌশলে ফোন করে মর্জিনাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ফোন করার ১৪ মিনিটের মধ্যেই মর্জিনা সেই পথে ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছেন। শহিদুল ইসলাম প্রথমে তাকে ধর্ষণ করেন। এরপর তার সহযোগী শফিক ও রুমান মিয়া ধর্ষণের চেষ্টা করলে ভুক্তভোগী বাধা দেন। পরে তিনজন মিলে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। একপর্যায়ে একজন গলা চেপে ধরে এবং অন্য দুইজন হাত–পা চেপে শ্বাসরোধে মর্জিনার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
ঘটনার পর শহিদুল ইসলাম মোবাইল হারানোর নাটক করলেও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে তার অবস্থান শনাক্ত হয়। পরে ২৬ নভেম্বর আখাউড়া সড়কবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভোরে মসজিদপাড়া এলাকা থেকে শফিক ও রুমানকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
পিবিআই জানায়, গ্রেপ্তার তিনজনই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন। তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলমান।
পিবিআই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের সুপার শচীন চাকমা বলেন, “এটি একটি নৃশংস ও পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। প্রযুক্তি ও সিসিটিভি ফুটেজের সহায়তায় আমরা দ্রুত আসামিদের শনাক্ত করতে পেরেছি।”
ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মাসুদ