কেন্দ্রীয় ব্যাংকে শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি বোর্ড গঠনে নীতিমালা অনুমোদন
Published: 16th, October 2025 GMT
দেশে প্রচলিত শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক, ব্যাংকের শরিয়াহ শাখা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে আস্থাশীল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি বোর্ড’ (এসএবি) নামে তদারিক পর্ষদ গঠন করতে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তার নীতিমালা অনুদোন দেওয়া হয়েছে।
এই নীতিমালায় অধীনে এসএবির সদস্যদের নিয়োগ ও অপসারণ এবং দায়িত্ব, কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাতের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৪৪৪তম সভায় এসএবির নীতিমালা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ইসলামী ব্যাংক: অবৈধ নিয়োগ বাতিল ও পাচার অর্থ ফেরত চায় ব্যবসায়ী ফোরাম
পাচারের অর্থ উদ্ধারে ব্যাংকগুলোকে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির নির্দেশ
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরেছে।
এতে বলা হয়েছে, ইসলামি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শরিয়াহভিত্তিক অর্থ-শিল্প সম্পর্কিত ‘সন্দেহযুক্ত বিষয়’ নিষ্পত্তি, মানদণ্ড নির্ধারণ, নতুন প্রডাক্টের শরিয়াহ মান যাচাই ও প্রয়োজনীয় রেজুলেশন প্রদানে এই বোর্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর অনুচ্ছেদ ১৬ অনুযায়ী ইসলামি ব্যাংকগুলোর রেজুলেশনের বিষয়ে পরামর্শ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নিজস্ব শরিয়াহ বোর্ড গঠনের ক্ষমতা দেওয়া আছে।
নীতিমালায় বোর্ড সদস্যদের যোগ্যতা ও মেয়াদ
দেশের স্বনামধন্য শরিয়াহ স্কলার ও ইসলামি শিক্ষাবিদদের নিয়ে সাত সদস্যের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ এসএবি করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এর মধ্যে অন্তত পাঁচজন হতে হবে শরিয়াহ স্কলার।
সদস্যরা সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য নিয়োগ পাবেন এবং মেয়াদ শেষে কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে আবার বোর্ডের সদস্য হতে পারবেন। তবে কোনো সদস্য টানা ছয় বছর দায়িত্বে থাকলে দুই বছর বিরতি ছাড়া বোর্ডে ফেরার যোগ্য হবেন না।
শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি বোর্ডের সদস্য হওয়ার যোগ্যতায় বলা হয়েছে, দাওরায়ে হাদিস, কামিল, ইসলামি অর্থনীতি, ফিকহ, ইসলামি ব্যাংকিং বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা বা ফতোয়া বোর্ডে অন্তত দুই বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং ইসলামি ফাইন্যান্স বিষয়ে গবেষণা নিবন্ধ বা বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
বোর্ডের কাঠামো ও কার্যক্রম
এসএবির চেয়ারম্যানের মেয়াদ হবে তিন বছর, যাকে মনোনীত করবেন গভর্নর। ইসলামি ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের পরিচালক সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন চেয়ারম্যান, তবে তার ভোটাধিকার থাকবে না।
বোর্ড বছরে অন্তত তিনটি সভা করবে এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানাতে পারবে। সদস্যদের অন্তত ৭৫ শতাংশ সভায় উপস্থিত থাকতে হবে, না হলে পদ শূন্য বলে গণ্য হবে।
শরিয়াহ কমপ্লায়েন্স প্রতিবেদন
প্রতি বছর এসএবির কার্যক্রম ও সুপারিশগুলোর ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ একটি বার্ষিক শরিয়াহ কমপ্লায়েন্স প্রতিবেদন পরিচালনা পর্ষদের কাছে দাখিল করবে। পরবর্তীকালে প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
গোপনীয়তা রক্ষা
সব সদস্যকেই তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনডিএ) সই করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, নতুন এই নীতিমালা ইসলামি ব্যাংকিং খাতে বিশ্বাসযোগ্যতা ও জবাবদিহি বাড়াবে, শরিয়াহ অনুশাসনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে সম্মান জানিয়ে আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।
ঢাকা/নাজমুল/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সদস য ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা-১ আসনে জামায়াতের চমক, চূড়ান্ত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী
প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে খুলনা-১ আসনে বড় চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। প্রাথমিক পর্যায়ে মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন করে সংগঠনটির হিন্দু শাখার নেতা কৃষ্ণ নন্দীকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
খুলনা জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা এমরান হোসাইন বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রার্থী পরিবর্তনের এ কৌশলের মধ্যে দিয়ে আসনটিতে নিজেদের বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী দলটি।
আরো পড়ুন:
‘আমি রাজমিস্ত্রির ছেলে, খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছি’
লটারির মাধ্যমে ৫২৭ থানার ওসি পদে রদবদল
এর আগে বুধবার বিকেলে খুলনা মহানগর জামায়াতের কার্যালয়ে জেলার কর্মী সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি জেনারেল ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক।
জামায়াতের হয়ে প্রার্থিতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কৃষ্ণ নন্দীও। জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাসে এবারই প্রথম অন্য ধর্মের কোনো ব্যক্তিকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলো, যা স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এক মাস ধরে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কৃষ্ণ নন্দীর নাম রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে অবশেষে তাকে প্রার্থী করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীর গ্রামের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকায়। তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার ‘জামায়াতে ইসলাম সনাতনী‘র সভাপতি। এ উপজেলা ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। প্রায় এক বছর ধরে গোলাম পরওয়ারের ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় বিভিন্ন সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীর সক্রিয় উপস্থিতি দেখা গেছে। তার নেতৃত্বে হিন্দু নারী-পুরুষের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো।
মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কৃষ্ণ নন্দী বলেছেন, ‘আমাকে কেন্দ্রে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে জামায়াতের আমিরসহ উচ্চ পর্যায়ের নেতারা ছিলেন। তারা আমাকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। আমি তাদের নির্দেশনা পেয়েছি। এলাকায় গিয়ে কাজ শুরু করব।”
এর আগে এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন মাওলানা আবু ইউসুফ। তাকে নিয়ে প্রশ্ন করলে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, “বুধবার জামায়াতের আমির আমাদের দুজনকে বুকে বুক মিলিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি নিজেই আমার জন্য প্রচারণায় নেমেছেন। জামায়াতের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।”
ডুমুরিয়ার চুকনগর গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ নন্দী ২০০৫ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার সভাপতি এবং স্থানীয় সনাতন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “কঠোরভাবে আদর্শভিত্তিক জামায়াত হলো ন্যায় ও সততার দল। এখানে দুর্নীতি নেই, চাঁদাবাজি নেই, মাদক নেই। শান্তি-সমৃদ্ধি আনার দল বলে আমি জামায়াতকে বেছে নিয়েছি। ২০০৫ সাল থেকে এটি করছি, হঠাৎ নয়।”
আগের সরকারের আমলে কোণঠাসা ছিলেন বলে অভিযোগ তার। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দাপটে থাকা এই এলাকায় তিনি জামায়াত করার কারণে বিভিন্নভাবে চাপের মুখে ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন।
এর আগে খুলনা-১ আসনে মাওলানা মো. আবু ইউসুফকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল জামায়াত।
কৃষ্ণ নন্দী বলেন, “গত ১ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান খুলনায় এলে আমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। পরে আগের প্রার্থী মাওলানা ইউসুফকে নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে আমাকে প্রার্থী হিসেবে কাজ করতে বলা হয়। মাওলানা ইউসুফও আমার সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।”
খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুন্সী মঈনুল ইসলাম বলেন, “খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে। বাবু কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী করা হয়েছে। দলের সিদ্ধান্তে সবাই দাঁড়িপাল্লার হয়ে কাজ করবেন।”
সাবেক প্রার্থী মাওলানা আবু ইউসুফ বলেছেন, “দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমাকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পরিচালক করা হয়েছে। আমি কৃষ্ণ নন্দীর বিজয়ের জন্য সর্বাত্মক কাজ করব। তার পক্ষে আমি প্রচারণা শুরু করেছি। যেহেতু আমাকেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পরিচালক করা হয়েছে, সেহেতু সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি যথাসম্ভব কাজ করব, ইনশাআল্লাহ।”
ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক