ভারতের কিছু শোধনাগার রাশিয়ার তেল কেনা থেকে সরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে
Published: 16th, October 2025 GMT
ভারতের কিছু তেল শোধনাগার রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। গতকাল বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধে সাহায্য করতে ভারত রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করার আশ্বাস দিয়েছে। এরপরই বৃহস্পতিবার তিনটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর ইউরোপে বিক্রি কমে যাওয়ায় রাশিয়া ছাড়মূল্যে তেল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এ সুযোগে ভারত ও চীন রাশিয়ার সমুদ্রবাহিত অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হয়ে ওঠে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানে এমন কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতের জ্বালানি তেল শোধনাগারগুলো রাশিয়ার তেল কেনা থেকে সরে আসার প্রস্তুতি শুরু করেছে। নভেম্বরের ক্রয়াদেশ ইতিমধ্যে দেওয়া হয়ে যাওয়ায় ডিসেম্বর মাস থেকে তেল কেনা কমানো হতে পারে।
সূত্রগুলো বলছে, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শোধনাগারগুলোকে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে বলেনি। তবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুমোদিত নয় বলে সূত্রগুলো নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের জ্বালানি সহযোগিতা বৃদ্ধি
ভারতীয় কর্মকর্তারা বাণিজ্য আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ভারতীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করেছে।
মার্কিন আলোচকেরা ভারতের আমদানি শুল্ক কমাতে বলেছেন। পাশাপাশি একটি বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত করতে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল কেনা কমানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেছেন, বর্তমান (মার্কিন) প্রশাসন ভারতের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা গভীর করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা চলছে।
ট্রাম্প গতকাল বুধবার বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তিচুক্তির জন্য মস্কোর ওপর চাপ বৃদ্ধির প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভারতের রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা নিয়ে কথা বলেছেন।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারত যে তেল কিনছিল, তাতে আমি অসন্তুষ্ট। তিনি (মোদি) আজ (বুধবার) আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, রাশিয়া থেকে ভারত তেল কিনবে না।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘এটি বড় এক পদক্ষেপ। এখন আমরা চীনকেও একই কাজ করাতে যাচ্ছি।’
তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ বৃহস্পতিবার দাবি করেছে, বুধবার মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে টেলিফোনে কোনো কথা হয়নি।
ভারত সরকারের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় শোধনাগারগুলো সম্ভব হলে রাশিয়ার তেলের আমদানি কমিয়ে দেবে এবং তার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অপরিশোধিত তেল কিনবে।
তবে সূত্রটি আরও যোগ করেছে, ভারত ও চীন উভয়ই রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দিলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম অনেক বেড়ে যাবে এবং বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে।
বৃহস্পতিবার তেলের দাম স্থিতিশীল ছিল। কারণ, বাজারের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ভারত রাশিয়ার তেল কেনা কমালে অন্য জায়গা থেকে সরবরাহের চাহিদা বাড়বে।
বাণিজ্য তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ভারতের মোট তেল আমদানির ৩৬ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে, যা প্রতিদিন প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল।
কেপলারের তথ্যানুসারে, ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার শোধনাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর দেশটি রপ্তানি বৃদ্ধি করায় অক্টোবরে ভারতে এই আমদানি বেড়ে ১৯ লাখ ব্যারেলে পৌঁছানোর কথা।
ভারতের সঙ্গে জ্বালানি অংশীদারত্বে রাশিয়া এখনো আত্মবিশ্বাসী
রাশিয়া আজ বৃহস্পতিবার বলেছে, ভারতের সঙ্গে তাদের জ্বালানি অংশীদারত্ব অব্যাহত থাকবে বলে তারা আত্মবিশ্বাসী।
রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক ভারতের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের জ্বালানি সম্পদের চাহিদা রয়েছে, এটি অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক ও বাস্তবসম্মত। আমি আত্মবিশ্বাসী, আমাদের অংশীদারেরা আমাদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে।’
ভারতের ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারিজ অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস (এমআরপিএল) বলেছে, তারা ছাড়ে তেল কিনতে বিকল্প উৎস খুঁজছে। তবে একই সঙ্গে রাশিয়ার তেল কেনা চালিয়ে যাওয়ারও আশা করছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, যেসব দেশকে ট্রাম্প রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন, মস্কো তাদের কম দামে তেল সরবরাহ করতে সক্ষম।
পেসকভ বলেন, এ ধরনের দেশগুলোকে যদি তাদের পছন্দের জিনিস কেনার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, তবে মুক্তবাণিজ্যের নীতির লঙ্ঘন হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন বল ছ ন আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
এসব খাবার আপনাকে সারা দিন চনমনে রাখবে
কাজের চাপে ক্লান্ত লাগলে বা দুপুরের পর অফিসে ঘুম পেলে অনেকেই কফি বা মিষ্টি কিছু খেয়ে ক্লান্তি কাটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো আপনাকে সারা দিন চনমনে রাখতে পারে, আবার কিছু খাবার আছে যেগুলো উল্টো আপনাকে দুর্বল করে দেয়!
সকালের নাশতা বাদ দেওয়া আমাদের অন্যতম বড় ভুল। এতে ক্লান্তি ও মানসিক চাপ তুলনামূলক বেশি হয়। তাই সকাল শুরু হোক এমন খাবার দিয়ে, যা ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করবে; যেমন ওটস, চিড়া, ডিম ও পূর্ণ শস্যের টোস্ট, দুধ বা দইয়ের সঙ্গে ফল ও বাদাম—এই খাবারগুলো শরীরে শর্করা, প্রোটিন ও ফাইবার সরবরাহ করে, যা আপনাকে দীর্ঘ সময় সতেজ রাখবে।
সারা দিন শক্তি ধরে রাখার কৌশলবাদাম, বীজ আর শস্যজাতীয় খাবার শক্তির অন্যতম বড় উৎস। এগুলোতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন ও ভিটামিন—যা রক্তে চিনির মাত্রা স্থির রাখে এবং হঠাৎ এনার্জি ড্রপ থেকে বাঁচায়। একমুঠো কাজু, আখরোট বা সূর্যমুখীর বীজের মতো স্ন্যাক হতে পারে আপনার দুপুরের ‘এনার্জি ব্রেক’।
প্রোটিন: ঠিকভাবে দেহের প্রতিটি কোষের কাজ চালাতে প্রোটিন অপরিহার্য। মাছ, মুরগি, ডিম, ডাল ও ছোলা হলো এমন কিছু প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যা দ্রুত ক্লান্তি দূর করে। বিশেষ করে মাছ (যেমন ইলিশ, রুই, টুনা) শুধু প্রোটিন নয়, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও দেয়, যা মস্তিষ্ককেও সক্রিয় রাখে।
জটিল শর্করা: সাদা চাল বা পরিশোধিত ময়দা শরীরে দ্রুত শক্তি দেয়, কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়েও যায়। এর পরিবর্তে বেছে নিন লাল চাল, ব্রাউন রাইস, গমের রুটি বা ওটস—এগুলো ‘কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট’, যা ধীরে হজম হয় এবং সারা দিন স্থিতিশীল এনার্জি দেয়।
শাকসবজি ও ফল: নিয়মিত রঙিন শাকসবজি ও ফল খান। আপেল, কলা, কমলা, পালংশাক, ব্রকলি, গাজর—এগুলোর ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরকে চাঙা রাখে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।
আরও পড়ুনকৈশোরে সঠিক পুষ্টি না পেলে যা হয়, যেসব খাবার খেতে হবে১৬ নভেম্বর ২০২৫যেগুলো এড়িয়ে চলা ভালোঅতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টিজাত খাবার দ্রুত শক্তির জোগান দিলেও খুব দ্রুতই ক্লান্ত করে ফেলে।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন সাময়িকভাবে মনোযোগ বাড়ায়, কিন্তু ঘুমের ছন্দ নষ্ট করে দেয়।
অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত বা ভারী খাবার। এগুলো হজমে সময় নেয়, ফলে ঘুম ঘুম লাগে।
ছোট ছোট টিপসপানিশূন্যতা ক্লান্তি ডেকে আনে, নিয়মিত পানি পান করুন।
দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকবেন না।
পর্যাপ্ত ঘুম ও হালকা ব্যায়াম প্রাকৃতিকভাবে আপনার শক্তি বাড়াবে।
শক্তি ধরে রাখার কোনো ‘জাদুকরি খাবার’ নেই, তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসই পারে আপনাকে সারা দিন প্রাণবন্ত রাখতে। তাই পরেরবার শক্তি কমে গেলে চিনি বা সফট ড্রিংকের দিকে না ছুটে, বেছে নিন প্রকৃতির দেওয়া সঠিক খাবারগুলো।
আরও পড়ুনএকবারে কতটা বাদাম খাওয়া নিরাপদ২১ অক্টোবর ২০২৫