সরকারি পানির লাইনে পোকা, শামুক, দুর্গন্ধ
Published: 18th, October 2025 GMT
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের যাত্রা সাত বছর আগে শুরু হলেও এখনো সুপেয় পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিকেরা। প্রায় দেড় লাখ নিম্নআয়ের মানুষের চাহিদা থাকলেও সংযোগ আছে মাত্র সাত হাজার পরিবারের। বিকল্প উপায়ে বাসিন্দারা সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে পানি তুলছেন, যা ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামিয়ে দিচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজীদ বলেন, ‘পৌরসভা থাকার সময় যে সব পানির গ্রাহক ছিলেন, এখনো তাঁরাই আছেন। পানির সংযোগ ও পাম্পহাউসগুলো পৌরসভার সময়ের পুরোনো। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর জনগণ বেড়েছে, কিন্তু পানি সরবরাহের সক্ষমতা বাড়েনি। আমাদের রাজস্ব আয় খুব সামান্য, সরকার থেকে বিশেষ প্রকল্প দেওয়া না হলে বড় কোনো প্রকল্প নেওয়ার সক্ষমতা নেই।’
টাকায় কেনা দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত পানিনগরের বাসিন্দাদের প্রতি মাসে পানি সংযোগের জন্য ১৫০ টাকা বিল দিতে হয়। এর সঙ্গে হোল্ডিং ট্যাক্সে যোগ হয় পানির রেইট খাতে মোট বিলের ৩ শতাংশ চার্জ। তবু সরকারি লাইনে আসে দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত পানি। এই পানি ব্যবহারে শরীরে চুলকানিসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের।
ময়মনসিংহ নগরের বাঁশবাড়ি কলোনিতে প্রায় তিন হাজার নিম্নআয়ের পরিবারের বসবাস। সেখানে আছে সিটি করপোরেশনের পানির সংযোগ। প্রতিদিন সকাল ৭টা, দুপুর ১২টা ও বিকেল ৪টায় লাইনে পানি আসে। পানি পেতে বাসিন্দারা আগেভাগেই বালতি-বোল পেতে রাখেন। ময়লা পানি আসায় পাইপ ও কলের মুখে কাপড় বা টিস্যু ব্যাগ বেঁধে রাখেন, যাতে কিছুটা ছেঁকে নেওয়া যায়।
ময়না বেগম নামের এক বাসিন্দা বলেন, পানিতে পোকা ও শামুক পর্যন্ত আসে। এ থেকে ভয়ানক দুর্গন্ধ বের হয়। এই পানি ব্যবহার করলে শরীরে চুলকানি হয়।
আম্বিয়া খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেড় শ টাকা বিল দিই, আবার পচা পানি পাই—এইডা আমরা চাই না। আমরা ভালা পানি চাই।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, ‘বর্তমানে সিটি করপোরেশন বিষয়টিকে একেবারে অবহেলা করছে। দূষিত পানি ঘরে ঘরে যাচ্ছে। আমরা চাই, প্রতিটি ওয়ার্ডে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হোক।’
তুলনামূলক পরিষ্কার পানি পেতে পাইপের মুখে কাপড় বাঁধছেন এক নারী। সম্প্রতি নগরের বাঁশবাড়ি কলোনিতে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে পানি সরবরাহ খাতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১ হাজার ৬শ ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্প পাস হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
সোমবার একনেকের সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় ‘নারায়ণগঞ্জ গ্রিন অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প’ অনুমোদন দেয়া হয়।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে সিটি কর্পোরেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি চলতি অর্থ বছরে শুরু হয়ে ২০৩১ সালের মধ্যে শেষ হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে-গোদনাইল পানি শোধনাগার বর্ধিতকরণ ও পুনর্বাসন, ২০ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন ও ২৮০ কিলোমিটার ডিস্ট্রিবিউশন লাইন স্থাপন, ১৪টি ডিএমএ স্থাপন, নতুন করে ২০টি গভীর নলকূপ ও ২০টি নলকূপ পুনর্বাসন, ৩৫ হাজার হোল্ডিং-এ পানি লাইন ও স্মার্ট মিটার সংযোগ, ২৭টি ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপন, ২৭ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কার ৫ হেক্টর ভূমিতে পার্ক, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত গণপরিসর নির্মাণের কথা রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরবাসীর জন্য টেকসই ও নিরাপদ পানিসরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নে নাগরিকদের সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়ে নিয়মিত পানি বিল ও হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের আহ্বান জানান।