মতিঝিলের ভিড়ভাট্টা, অফিস পাড়ার হইহট্টগোল পেরিয়ে নটর ডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে (এনডিইউবি) পা রেখেই একটু বুক ভরে দম নেওয়া গেল। ক্যাম্পাসজুড়ে গাছপালা। এই প্রাঙ্গণকে আরও সবুজ করেছে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয়েছিল। এক যুগ পেরিয়ে এখন এখানে পড়ছেন প্রায় ১ হাজার ৮২৭ জন শিক্ষার্থী।

কেউ ক্লাসে ছুটছেন, কেউ আবার বন্ধুদের নিয়ে দল বেঁধে ‘গ্রুপ স্টাডি’ করছেন। কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী প্রিসিলা সরকার বলেন, ‘বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে সিএসই খুব সম্ভাবনাময় একটি বিষয়। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে ডেটা সায়েন্টিস্ট, ওয়েব ডেভেলপার, সিস্টেম অ্যানালিস্ট বা গবেষক হিসেবেও কাজ করার সুযোগ আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রামিং শেখানোর পাশাপাশি কীভাবে বাস্তব জীবনের সমস্যা প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা যায়, সেসবও শেখানো হয়। ব্যবহারিক কোর্সের জন্য আধুনিক ল্যাব আছে। ক্লাসের বাইরেও বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও ক্লাব কার্যক্রমে অংশ নিয়ে আমরা দক্ষ হয়ে ওঠার সুযোগ পাই।’

আরও পড়ুনমহাশূন্য থেকে ছুটে আসা এই অতিকায় পাথরখণ্ডটি এখন জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র২২ ঘণ্টা আগে

মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী অহনা হোসেন বলেন, ‘আমাদের ক্লাস ও ল্যাব দুটিই প্রাণবন্ত। শিক্ষকেরা খুব যত্ন নিয়ে পড়ান। আমাদের বিভাগে গবেষণার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে নিয়মিত সেমিনার, প্রদর্শনী ও অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। এই বিভাগ আমার মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা ও সমাজে অবদান রাখার মানসিকতা গড়ে তুলছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ফাদার সুবাস আদম পেরেরা, সিএসসি বলেন, ‘আমাদের মূল কর্মপ্রেরণা হলো শিক্ষার্থীর সার্বিক গঠন, দৈহিক, মানসিক ও আত্মিক বিকাশ। শিক্ষার্থীরা যেন মানবিক ও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় জ্ঞান লাভ করে দেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতির আলোকে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে ও বিজ্ঞ ব্যক্তিতে পরিণত হয়ে দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত হতে পারে, এটিই আমাদের শিক্ষার মূল দর্শন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্রুত বাণিজ্যিকীকরণের এই যুগে এনডিইউবি একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। যেহেতু এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, তাই অনেক অগ্রগামী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে এখানকার খরচ প্রায় অর্ধেক। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য আছে বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা। এ ছাড়া শারীরিক প্রতিবন্ধী, আপন ভাইবোন, মিশনারি প্রতিষ্ঠান এবং বিবাহিত দম্পতিসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ওয়েভার সুবিধা দেয় এনডিইউবি।’

শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের জন্য প্রস্তুত করতে শৃঙ্খলা, সহশিক্ষা কার্যক্রম ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় এনডিইউবিতে। বিজনেস ক্লাব, কালচারাল ক্লাব, ইংলিশ ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, ড্রামা অ্যান্ড ফিল্ম ক্লাব, ল ক্লাব, কম্পিউটার ক্লাবসহ নানা সংগঠন সক্রিয় আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ল ক্লাবের প্রেসিডেন্ট পিয়াস হেবল কর্মকার বলেন, ‘ক্লাবগুলোই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা, ভ্রাতৃত্ব, নেতৃত্ব ও সামাজিক দায়বদ্ধতা বিকাশের অনন্য ক্ষেত্র তৈরি করে।’

ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন সৌরভ চিসিক। পাশাপাশি ইন্টার্নশিপ করছেন মার্কেন্টাইল ব্যাংকে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা খুবই আন্তরিক। তাঁরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি পরিদর্শন করতে নিয়ে যান। ইন্ডাস্ট্রিতে কীভাবে কাজ হয়, আমরা কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাই।’

শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা দিতে ক্যাম্পাস জবের সুযোগও রেখেছে এনডিইউবি। প্রশাসন, গ্রন্থাগার বা তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) মতো বিভিন্ন বিভাগে কাজ করে শিক্ষার্থীরা দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ব্রাদার সুবল লরেন্স রোজারিও, সিএসসি বলেন, ‘এনডিইউবির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বেশ সুদূরপ্রসারী। আমরা গবেষণায় বিশেষ জোর দিচ্ছি। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নটর ডেম এবং ভারতের মার্টিন লুথার খ্রিষ্টিয়ান ইউনিভার্সিটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম, যৌথ গবেষণা ও ফ্যাকাল্টি ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

আরও পড়ুনদুবাই রাজকন্যা শেখ মাহরার সম্পদের পরিমাণ কত?১৭ ঘণ্টা আগে

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো–ভিসি ফাদার চার্লস বি.

গর্ডন, সিএসসি বলেন, ‘আমি ও আমাদের উপাচার্য দুজনই যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নটর ডেমে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছি। সেই সুবাদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আমাদের বেশ ভালো সম্পর্ক আছে। দুই নটর ডেমের পারস্পরিক সহযোগিতা থেকে শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ফাদার সুবাস আদম পেরেরা, সিএসসি বলেন, ‘শিক্ষকদের মেধা, দক্ষতা, শিক্ষাদানের নানান কৌশল ও সুহৃদয়তার ওপর নির্ভর করে আমাদের শিক্ষার্থীরা কত বেশি লাভবান হবে—তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন শিক্ষকদের জন্য ওরিয়েন্টশন কর্মসূচি দিয়ে যাত্রা শুরু করে। তাঁদের জন্য প্রতি সেমিস্টারেই বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ, সেমিনার, কর্মশালা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।’

একনজরে এনডিইউবি

প্রতিষ্ঠা: ২৯ এপ্রিল ২০১৩

শিক্ষার্থী: ১ হাজার ৮২৭ জন।

শিক্ষক: ৭৯ জন।

গবেষণাগার: ১০টি

অনুষদ: ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ, আইন অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদ, কলা ও মানবিক অনুষদ।

ওয়েবসাইট: ndub.edu.bd

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট আম দ র ব নটর ড ম র জন য স এসস ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশ যেতে ঋণ না পেয়ে মাইক ভাড়া করে গালাগাল, ভিডিও ভাইরাল

কিশোরগঞ্জ হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পানান গ্রামের বাসিন্দা সারোয়ার হোসেন রাব্বি। অনেকদিন ধরেই বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। তবে, বিদেশ যাত্রায় যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন, তা তার কাছে নেই।

বাধ্য হয়ে বিভিন্ন এনজিওসহ এলাকাবাসীর দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও কেউ তাকে ঋণ দিয়ে সাহায্য করেননি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়া এই ব্যক্তি ক্ষোভ থেকে মাইক ভাড়া করে এলাকাবাসীকে গালাগাল করেছেন। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যেমে প্রচার হলে তা মুহূর্তে ভাইরাল হয়।

আরো পড়ুন:

১৬ দিন ধরে বন্ধ আটলংকা বাজারের ২০টি দোকান

৩ শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগ, শিক্ষককে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

গত শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরের দিকে ৫০০ টাকায় মাইক ভাড়া করে এ কাণ্ড ঘটান রাব্বি। ফেসবুকে সেই ভিডিও নিজেই পোস্ট করেছেন তিনি। 

ভিডিওতে রাব্বি অভিযোগ করেন, গত তিন-চার মাস ধরে সৌদি আরবে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এক লাখ টাকা জোগাড় করতে না পারায় তিনি যেতে পারছেন না। বিভিন্ন সমিতির কাছে লোনের আবেদন করলেও কেউ দেয়নি। উল্টো তার নামে এলাকার মানুষজন খারাপ কথা ছড়িয়েছে। 

রাব্বি দাবি করেন, এলাকার কিছু মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে তার বিদেশযাত্রায় বাধা দিয়েছে। এজন্যই উত্তেজনার বশে তিনি মাইক ভাড়া করে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় কথা বলেছেন।

অবশ্য, এরপর রাব্বি ভিডিওর ক্যাপশনে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, “প্রথমে ক্ষমা চাইছি- আমি অনেক খারাপ ভাষায় গালাগাল করেছি। আমি কেন এমন করেছি শুনুন।”

রাব্বি জানান, তিনি বিবাহিত, তার একটি ছোট ছেলে আছে। পরিবারের দেখাশোনা ও ছেলের ভবিষ্যৎ গড়ার আশায় বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছেন। 

ভিডিওতে তিনি ভিসার কাগজ দেখিয়ে জানান, ভিসা ও মেডিকেলের মেয়াদ ৩০ অক্টোবর শেষ হবে। মানুষের কারণে আগে দুইবার ভিসা নষ্ট হয়েছে। বিদেশ যাওয়ার অর্থ জোগাড় করতে রাব্বি অটোরিকশা চালাচ্ছেন,পাশাপাশি বিকাশের কাজ করছেন।

এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তাদের অনেকে ভিডিওটি দেখে কিছুটা অপমানিত ও বিস্মিত হয়েছেন। কেউ কেউ আবার রাব্বির মানসিক কষ্ট ও পারিবারিক চাপের প্রতি সহানুভূতিও প্রকাশ করেছেন।

ঢাকা/রুমন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ