‘বাংলাদেশ-পাকিস্তান পুলিশ একাডেমির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হবে’
Published: 18th, November 2025 GMT
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান পুলিশ একাডেমির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার অফিস কক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা জানান।
আরো পড়ুন:
২২ বছর পর ভারতকে হারাল বাংলাদেশ
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তান হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ
বৈঠকে পুলিশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, অপরাধী হস্তান্তর, সেফ সিটি নির্মাণসহ দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক আত্মিক ও ঐতিহাসিক। গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পাকিস্তান সফর করেছেন। এর মাধ্যমে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো জোরদার হয়েছে।”
উপদেষ্টা আরো বলেন, “সিনিয়র সচিব পাকিস্তানের অবকাঠামো উন্নয়ন ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে তাদের ‘সেফ সিটি’ প্রকল্পের যেটা আমাদের দেশেও বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। এ বিষয়ে পাকিস্তান বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।”
তিনি বলেন, “দুই দেশের পুলিশ একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করতে একটি সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে। তাছাড়া অপরাধীদের পারস্পরিক বিনিময় বা হস্তান্তরে বর্তমানে কোনো লিগ্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট নেই। ২০০৪ সালে এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরবর্তীতে তা কার্যকর করা হয়নি। এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য পুনরায় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।”
হাইকমিশনার এ সময় বাংলাদেশ পুলিশের জন্য সাঁজোয়া নিরাপত্তা যাবাহন, ড্রোন সংগ্রহ ও ক্রয় এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণে পাকিস্তান সহযোগিতা করতে আগ্রহী বলে জানান।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) খন্দকার মো.
ঢাকা/এএএম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স বর ষ ট র সহয গ ত উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
মুশফিকুরের ‘সেঞ্চুরির’ রঙে রাঙানো ক্যানভাস
খোলসটা মুশফিকুর রহিমেরই ভাঙার প্রয়োজন ছিল। নিকট অতীতে তাকে পরিচিতরা কেউ নিজের মতো করে পাননি! অচেনা অভিমান, অজানা কারণে নিজেকে আটকে রেখেছিলেন। যেখানে শুধু প্রবেশাধিকারই নয়, উঁকি-ঝুঁকি দেওয়ার অলিখিত নিষেধাজ্ঞাও ছিল। সেই দেয়ালটা অবশেষে ভাঙল।
বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের ২৫ বছরে যা হয়নি, সেই উপলক্ষ পেয়েছে তার বদৌলতে। বাংলাদেশের কেউ একশ টেস্ট খেলবে এই বিশ্বাস অনেকেরই ছিল। কিন্তু কেউ তো ধারে কাছেও যেতে পারেননি! মুশফিকুর রহিম পেরেছেন। তার টেস্টের সংখ্যা এখন ৯৯।
আরো পড়ুন:
মুশফিকুরের শততম টেস্ট: যেসব আয়োজন রেখেছে বিসিবি
বিসিবির নারী বিভাগের প্রধান হলেন রুবাবা দৌলা
রাত পোহালেই তার সাফল্যের মুকুটে যোগ হচ্ছে শততম টেস্টের পালক। এমন একটি উপলক্ষ মুশফিকুর নিজেকে গুটিয়ে রাখবেন, খোলা মনে থাকবেন না তা কী করে হয়? নিজের প্রয়োজনে বা বাকিদের চাওয়াতে ওই খোলসটা ভাঙলেন তিনি।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার কিছু সময় পরে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এলেন চনমনে মুশফিকুর। চিকচিক করা সবুজ ঘাস, সোনামাখা রোদ স্বাগত জানায় তাকে। শততম টেস্ট খেলার মাহেন্দ্রক্ষণে থাকা মুশফিকুরের মুখে অন্য রকম এক হাসি। যে হাসি বলে দিচ্ছিল, এই ক্ষণ, এই সময়, এই অর্জন তার অযুত-নিযুত ঘামবিন্দু ঝরিয়ে কেনা।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এগিয়ে গিয়ে ওই মুহূর্তটা স্মৃতিবন্দি করে নিলেন। এরপর যখন যেখানে যার সঙ্গে দেখা হয়েছে মুশফিকুরের, হাত বাড়িয়ে মুখে চওড়া হাসি নিয়ে ওই মুহূর্তটা উপভোগ করেছেন। ছবি তুলেছেন আপন মনে।
গা গরমের পর সোজা ইনডোরের আউটার মাঠে অনুশীলনে চলে যান। সেখানে চলে ঘণ্টাখানেক অনুশীলন। ড্রাইভ, সুইপ, পুল, হুক কী খেলেননি…। অনুশীলনের ২২ গজকে মনে হচ্ছিল ম্যাচের ২২ গজই বানিয়ে ফেলেছেন। ঘর্মাক্ত মুখ নিয়ে অনুশীলন শেষে বেরিয়ে এলেন তখনো যেন ক্লান্তি নেই। অচেনা হাসি তার মুখে। সিনেমা ব্লকবাস্টার হিট হওয়ার পর হিরোর মুখে যেই হাসি, সেরকম।
কিন্তু আজকের এই অনুশীলন ছিল কেবল ট্রেইলার। আগামীকাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট হচ্ছে তার আসল পরীক্ষা। শততম টেস্টের মঞ্চ। যেখানে পুরো ক্যানভাস সাজছে শুধু তাকেই কেন্দ্র করে। বিসিবি তার এই উপলক্ষ রাঙিয়ে দিতে রেখেছে নানা আয়োজন। সতীর্থরাও দেবে ট্রিবিউট।
মুশফিকুরের এই অর্জন, তার খেলার মাঠের গর্জনে প্রধান কোচ ফিল সিমন্স তাকে কিংবদন্তিদের কাতারে রাখতে বাধ্য হন, ‘‘সে অবশ্যই একজন কিংবদন্তি। যতগুলো ডাবল সেঞ্চুরি সে করেছে, খুব বেশি ক্রিকেটার তা করেনি। সবকিছুর আগে তার পেশাদারিত্বের কথা বলতে হবে আমাদের। ওর সঙ্গে স্বল্প সময়ে কাজ করার যে অভিজ্ঞতা, তাতে বলতে পারি ওর পেশাদারিত্ব দারুণ উঁচুমানের এবং কালকে যখন উপলক্ষটি আসবে, আমার অনেক ভালো লাগবে ওর জন্য।”
মুশফিকুর শ্রদ্ধা পেয়েছেন প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড দল থেকেও। হ্যারি টেক্টর বলেছেন, ‘‘সে এত ভালো খেলোয়াড়…এটি (একশ টেস্ট) তার জন্য একটি চমৎকার অর্জন, প্রথম বাংলাদেশি খেলোয়াড় হিসেবে। অভূতপূর্ব অর্জন। এমন কিছু যার জন্য তার গর্বিত হওয়া উচিত। সে ২০ বছরের ক্যারিয়ারে এটি করেছে। যা আমার মনে হয় খুবই রোমাঞ্চকর। এজন্য তাকে অভিনন্দন।’’
বাংলাদেশের মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। তার ব্যাটে রান মানেই বাংলাদেশের মুখে হাসি। সেই হাসিটাই আরেকবার পাওয়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্টে সব আলো তার উপরই থাকবে। তবে মাঠে জয় চায় দুই দলই। মুশফিকুরের টেস্ট ছাপিয়ে কিছুটা আলোচনা মিরপুরের উইকেট নিয়ে।
বাংলাদেশ দল সকালে অনুশীলন করেছে। আয়ারল্যান্ড দুপুরে। দুই দল যখন মাঠ ছেড়েছে তারপর কিছুটা ঘাস কাটা হয়েছে। আগামীকাল সকালে আরো একবার ঘাস কাটা হবে। তবে আশার কথা, উইকেট কালচে নয়। তা বেশ হাসিমুখেই বললেন বাংলাদেশের কোচ সিমন্স,
‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডের উইকেটের মতো নয়। মোটামুটি ভালোই মনে হচ্ছে। কাল (বুধবার ) সকালে এসে আসল ছবিটা বুঝতে পারব। এখন যেটা দেখছি, প্রথম দুই দিন বা আড়াই দিন ব্যাটসম্যানদের জন্য যথেষ্ট ভালো থাকবে।”
আইরিশ অলরাউন্ডার টেক্টরও প্রায় একই কথা বললেন মিরপুরের উইকেট নিয়ে, ‘‘মিরপুরের উইকেট আসলে একরকম থাকে না। এখানে আমি চতুর্থ বা পঞ্চমবার খেলছি, যতদূর মনে পড়ে, প্রতিবারই ভিন্ন ধরনের পিচ পেয়েছি। মানে, এখানে সব রকমের উইকেটই দেখা যায়। সাম্প্রতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও দেখেছেন, উইকেট তো সময়ের সঙ্গে ক্রমে ভালো হচ্ছিল। যদিও ওটা ছিল ৫০ ওভারের ক্রিকেট।’’
এসব আয়োজন, সব প্রস্তুতি মুশফিকুরের শততম টেস্টকে ঘিরেই। তাকে গণমাধ্যম সংবাদ সম্মেলনে পায়নি। তবে, গণমাধ্যমের ডাকে সাড়া দিয়ে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। শততম টেস্ট খেলার এই মাহেন্দ্রক্ষণে সংবাদকর্মীরা তার সঙ্গে ছবি তোলার আবদার করেছিলেন। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে মুশফিকুর শুধু আবদারই মেটাননি। হাসিমুখে কথা বলেছেন, অটোগ্রাফ দিয়েছেন কার্ডে, ব্যাটে।
‘এমআরফিফটিন’ - মুশফিকুরের ব্র্যান্ডিং নেইম। যা ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে ছুঁয়ে ফেলবে সেঞ্চুরির ল্যান্ডমার্ক।
ঢাকা/ইয়াসিন