সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচনের জন্য এখন ক্যাম্পাসে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এখন নির্বাচন হলে প্রতিযোগিতা নয়; বরং অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মন্তব্য করেছে ছাত্রদল। আজ রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাঈম সরকার এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন ছাত্রদলের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যেসব সংগঠন প্রশাসনের ছায়ায় বা গোপনে কার্যক্রম চালিয়ে গেছে, তারাই সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে। ফলে প্রতিযোগিতা নয়; বরং অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হবে। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। কিন্তু প্রশাসনের সিদ্ধান্তে দেখা যাচ্ছে, কিছু নির্দিষ্ট পক্ষের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। আমরা চাই, শাকসু নির্বাচন হোক এমন এক পরিবেশে, যেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থী সংশয়মুক্ত হয়ে নিজের ইচ্ছায় অংশ নিতে পারেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে নাঈম সরকার বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বর্তমানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। দীর্ঘ ১০ মাস ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ছিল। আমরা কর্মসূচি পালন করতে পারিনি। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের জন্য আমরা বারবার দাবি জানিয়ে আসছি। চলমান সময়ে আমরা ছোট ছোট কর্মসূচি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেশার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। যে সমস্যাগুলো উঠেছে, তা সমাধানের মাধ্যমে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি হবে। পরীক্ষার পর একটি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হবে, তখনই ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদের কার্যক্রম শুরু করতে হবে।’

এর আগে লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সম্প্রতি শাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্ররাজনীতির আংশিক অনুমোদন দেওয়া হলেও তাঁরা বাস্তবে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাননি। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে, সেখানে ৫ আগস্টের পর ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল না। কিন্তু শাবিপ্রবি প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্ররাজনীতি স্থগিত রাখার পর যৌক্তিক সময় না দিয়ে কাদের স্বার্থে নির্বাচন আয়োজন করতে চাইছে, সেটি এখন সবার প্রশ্ন। এ ছাড়া এখন সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কাজে ব্যস্ত। এখন নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করায় শিক্ষার্থীদের ওপর অপ্রয়োজনীয় মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে।

আবাসিক হলে আসন বণ্টনে প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে নাঈম সরকার বলেন, যে প্রশাসন আসন বরাদ্দে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে পারে না, তারা কীভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করবে? সময়োপযোগী প্রস্তুতি ও সমান সুযোগ নিশ্চিত না করে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়।

সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরে ছাত্রদল। নাঈম সরকার বলেন, চলমান সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর, যখন ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হবে, তখন শাকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। হলের আসন বরাদ্দ, কোটার প্রক্রিয়া ও প্রশাসনিক নীতিমালা স্বচ্ছ ও সবার জন্য সমানভাবে রাখতে হবে।

এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে স্মার্ট ও সুরক্ষিত ক্যাম্পাস সনদ-২০২৫ প্রণয়ন, প্রশাসন ও শিক্ষক সমাজ রাজনৈতিক পক্ষপাতমুক্ত থেকে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে ছাত্রদল উত্থাপিত সব দাবি বাস্তবায়ন, সহাবস্থানমূলক ও নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা, ছাত্রদলের আদর্শিক অবস্থান ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি রাহাত জামান, সহসভাপতি উসামা ইব্রাহিম ও মাহির আসিফ, দপ্তর সম্পাদক শামসুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক আদনান মোহন, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মুনতাসির মামুন ও ছাত্রদল কর্মী সামিন ইশমাম উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র পর ব শ র জন য র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

১৩ দিনে পাঁচবার ভূমিকম্পে কাপল নরসিংদী

নরসিংদীতে আবারো ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা ১৪ মিনিটে জেলার শিবপুর উপজেলায় ৪ দশমিক ১ মাত্রার হালকা ভূমিকম্পে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

গত ১৩ দিনের মধ্যে পাঁচটি ভূমিকম্প জেলার মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তারা জানান, কখন আবার ভূমিকম্প হয় সেই আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

আবারো ভূমিকম্প অনুভূত, উৎপত্তিস্থল নরসিংদী

ঢাবিতে রবিবার থেকে অনলাইনে চলবে ক্লাস কার্যক্রম

গত ২১ নভেম্বর সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে দেশে। এর উৎপত্তিস্থলও ছিল নরসিংদীর মাধবদীতে। এতে বিভিন্ন ভবনে ফাটল ধরে এবং ১০ জনের প্রাণহানী হয়। ২২ নভেম্বর জেলার পলাশ ও মাধবদীতে ৪ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ২৭  নভেম্বর পলাশে ৩ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল।

শিবপুরের বাসিন্দা রাশেদা বেগম বলেন, “আজ বৃহস্পতিবার সকালে হওয়া ভূমিকম্পে খুব ভয় পেয়ে যাই। বুঝতেই পারছিলাম না কী হচ্ছে। আগের দিনগুলোতেও নরসিংদীতে ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিকম্প আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে।”

ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, “কম্পনটা খুব বেশি সময় ছিল না, কিন্তু কয়েক সেকেন্ডই মনে হয়েছে অনেক লম্বা। পরিবার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম।”

স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষার্থী আফসানা বলেন, “নভেম্বর মাস থেকে ভূমিকম্প হচ্ছে। আমরা আতঙ্কে আছি।”

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা জানান, “এটি ৪ দশমিক ১ মাত্রার হালকা ভূমিকম্প। উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায়।”

নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, “আজকে সকালের দিকে ভূমিকম্প হয়েছে। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপত্তা নির্দেশনা অনুসরণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। মানুষের নিরাপত্তায় প্রয়োজনে আমরা সব ব্যবস্থা গ্রহণ করব।” 

গত এক মাসে দেশে উল্লেখযোগ্যভাবে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সর্বশেষ গত ১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ৪ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যার উৎপত্তিস্থল ছিল মায়ানমারের মিনজিন এলাকায়। 

আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) জানায়, ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ট থেকে ৩০ কিলোমিটার। উৎপত্তি স্থল ছিল টঙ্গী থেকে ৩৩ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরপূর্বে ও নরসিংদী শহর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে।

ঢাকা/হৃদয়/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ