ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের ‘বিবেকবর্জিত’ কর্মকাণ্ডকে গণহত্যার শামিল আখ্যায়িত করে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বের খ্যাতিমান ইহুদি ব্যক্তিরা। একটি খোলাচিঠিতে জাতিসংঘ ও বিশ্বনেতাদের প্রতি তাঁরা এ আহ্বান জানিয়েছেন।

এই চিঠিতে সাবেক ইসরায়েলি কর্মকর্তা, অস্কারজয়ী, লেখক, বুদ্ধিজীবীসহ ৪৬০ জন সই করেছেন। তাঁরা গাজা, দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।

আজ বুধবার এমন সময় চিঠিটি প্রকাশ পেল, যখন পরদিনই ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা বৈঠকে বসছেন। ইইউ নেতারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাবগুলো স্থগিত রাখার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে।

খোলাচিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা লিখেছেন, ‘আমরা ভুলে যাই না যে হলোকাস্টের প্রতিক্রিয়ায় সব মানুষের জীবনের রক্ষাকবচ ও সুরক্ষার জন্য অনেক আইন, সনদ এবং কনভেনশন প্রণীত হয়েছে। ইসরায়েল সেই সুরক্ষামূলক ব্যবস্থাগুলো ক্রমাগত লঙ্ঘন করে চলেছে।’

স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলের সাবেক পার্লামেন্ট (নেসেট) স্পিকার আব্রাহাম বুর্গ, সাবেক ইসরায়েলি শান্তি আলোচক দানিয়েল লেভি, ব্রিটিশ লেখক মাইকেল রোজেন, কানাডীয় লেখক নাওমি ক্লেইন, অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা জোনাথন গ্লেজার, মার্কিন অভিনেতা ওয়ালেস শন, এমিজয়ী ইলানা গ্লেজার ও হান্না এইনবাইন্ডার এবং পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী বেঞ্জামিন মোজার।

গত সেপ্টেম্বরে তথ্য-অনুসন্ধানমূলক এক মিশনে অঞ্চলটি পরিদর্শন শেষে যুক্তরাষ্ট্রের দুই ডেমোক্র্যাট সিনেটর-ক্রিস ভ্যান হলেন ও জেফ মের্কলি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে ইসরায়েল গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের ‘ধ্বংস ও জাতিগতভাবে নির্মূল করার জন্য একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন করছে। এই কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িত।

খোলাচিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা বিশ্বনেতাদের প্রতি আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রায় মেনে চলার, ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন থেকে বিরত থাকার, সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং গাজায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে শান্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে যাঁরা কথা বলছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করারও অনুরোধ জানান এই ইহুদি ব্যক্তিত্বরা।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘যখন প্রমাণ জড়ো হতে শুরু করেছে যে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার আইনি সংজ্ঞার সঙ্গে মিলে যায়, তখন অপরিমেয় শোকে আমাদের মাথা নত হয়ে আসে।’

আরও পড়ুনগাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল: বলছে ইসরায়েলভিত্তিক দুই মানবাধিকার সংস্থা২৮ জুলাই ২০২৫

এমন সময় ইহুদি ব্যক্তিত্বরা এ আহ্বান জানালেন, যখন গত কয়েক বছরে মার্কিন ইহুদি এবং ভোটারদের বৃহত্তর অংশের মধ্যে ইসরায়েল সম্পর্কে জনমতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ওয়াশিংটন পোস্টের এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ মার্কিন ইহুদি বিশ্বাস করেন, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধাপরাধ করেছে আর ৩৯ শতাংশ মনে করেন, দেশটি গণহত্যা চালাচ্ছে।

আমেরিকান জনগণের বৃহত্তর অংশের মধ্যে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনকে ৪৫ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে। অন্যদিকে আগস্ট মাসে চালানো কুইনিপিয়াকের এক জরিপে দেখা যায়, মার্কিন ভোটারদের অর্ধেকই একই মত পোষণ করেন, যাঁদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ ডেমোক্র্যাট।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আরও রয়েছেন আমেরিকান কৌতুক অভিনেতা এরিক আন্দ্রে, অস্কারজয়ী সাংবাদিক ও ডকুমেন্টারিয়ান ইয়ুবাল আব্রাহাম এবং ইসরায়েলি দার্শনিক ওমরি বোয়েম।

গাজার জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে খাবার সংগ্রহে ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়। এ শরণার্থীশিবিরে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজা উপত্যকা, ১৮ মার্চ, ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ক ষরক র আহ ব ন জ ন ইসর য় ল র গণহত য

এছাড়াও পড়ুন:

ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর বাংলাদেশ প্রীতি

আর্জেন্টিনার একজন প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবী, লেখিকা ও নারীবাদী নেত্রী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের কারণে তিনি বাংলাভাষী মানুষের কাছে বিশেষভাবে আলোচিত ও সমাদৃত। বলা হয়ে থাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর কাব্যিক ও আত্মীক সম্পর্ক ছিলো। ওকাম্পো শুধু রবীন্দ্রনাথকেই ভালোবাসতেন তা কিন্তু নয়, না, তিনি ভালোবাসতেন বাংলা ভাষা ও বাঙালিকেও। ভিক্টোরিয়া সেই প্রমাণ রাখেন একাত্তুরে। সেই কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই গুরুত্ববহ। 

১৯৭১-এ ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ না নিলেও তিনি ছিলেন হয়ে উঠেছিলেন একজন শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ওকাম্পোর বয়স ছিল ৮১ বছর। বয়সের ভারে তিনি তখন দুর্বল, কিন্তু এরপরেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে তিনি পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত নৃশংস গণহত্যার প্রতিবাদে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে একটি মিছিলের আয়োজন করেছিলেন, শুধু তাই না ওকাম্পো ছিলেন মিছিলের পুরোভাগে। সেদিনের সেই মিছিলেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো ছাড়াও আরও ছিলেন— হোর্হে লুইস বোর্হেস, এদুয়ার্দো সাবাতো, এদোলফো ওবোইতাসহ আরও অনেকে।

আরো পড়ুন:

আজ শত্রুমুক্ত ফেনীতে প্রথম উড়েছিল লাল সবুজের পতাকা

বাংলাদেশের এক পাগলাটে বন্ধু জঁ ক্যা

একাত্তরের ১১ জুন আর্জেন্টাইন লেখক, বুদ্ধিজীবী, মানবতাবাদী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের শরণার্থীদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইস মারিয়া ডি পাবলো পারডোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি স্মারকলিপি দেন। সেই দাবিনামায় যারা স্বাক্ষর করেছিলেন, তাদের মধ্যে প্রথমেই ছিল ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর নাম। 

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি গণহত্যার প্রতিবাদে আর্জেন্টাইন সরকারের কাছে তিনি আবেদন জানান এবং বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখেন।

ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো শুধু প্রতিবাদ করেই থেমে থাকেননি, বরং নিজের প্রভাব খাটিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত তৈরিতে সহায়তা করেন। তার সম্পাদিত বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা ‘সুর’-এর মাধ্যমে তিনি বিশ্ব সাহিত্য অঙ্গনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার খবর তুলে ধরেন, যা ছিল তার সমর্থনেরই একটি প্রকাশ। 

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর বাংলাদেশ প্রীতি
  • পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটে, মুক্তিকামীদের উল্লাস