আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রচারের কৌশল ঠিক করেছে বিএনপি। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এবার দলের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে দেশের নারী, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ এ ধরনের সাতটি বিষয়ভিত্তিক পোস্টার প্রকাশ করা হবে। এর খসড়া গতকাল সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভায় অনুমোদন হয়েছে। তার আগে বিষয়ভিত্তিক পোস্টার তৈরির দায়িত্বে থাকা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নেতাদের বৈঠক হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

ওই সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করছে, সেটি পুস্তক আকারে ছাপা হবে। এত বড় ইশতেহার সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছায় না বা তারা সেভাবে পড়ে না। তাই আগামী নির্বাচনের জন্য যে ইশতেহার তৈরি করা হবে, সেটির মূল বিষয়গুলো সারসংক্ষেপ আকারে আগেভাগে তুলে ধরার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেমন ফ্যামিলি কার্ড, হেলথ কার্ড, কৃষি কার্ড, কীভাবে কৃষকদের ডিজিটাল নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে এসে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা যায়, এ বিষয়গুলো নিয়ে বিএনপির ভাবনা তুলে ধরা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ইশতেহারের মূল বিষয়গুলো, যেগুলোতে সাধারণ মানুষের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে বিএনপি নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত করার কাজে হাত দিয়েছে। এবারের ইশতেহার গঠিত হবে বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা, জুলাই সনদ এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার সমন্বয়ে। নির্বাচনী শাসনব্যবস্থা পুনর্গঠন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ, মানবাধিকার রক্ষা ও দুর্নীতিবিরোধী কাঠামো শক্তিশালীকরণ ইশতেহারের কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

দলের নীতিনির্ধারকেরা জানিয়েছেন, ইশতেহারে বিএনপির ৩১ দফার মূল বিষয় অবাধ নির্বাচন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোট, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, মানবাধিকার সুরক্ষা, বাক্‌স্বাধীনতা, স্বচ্ছ প্রশাসন এবং জাতীয় অর্থনীতি পুনরুদ্ধার বিশদভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া জুলাই সনদের আলোকে নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা দেওয়ার পরিকল্পনাও ইশতেহারে গুরুত্ব পাবে।

বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের জন্য প্রতিশ্রুতি

এবারের নির্বাচনী প্রচারে বিএনপি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য আলাদা প্রতিশ্রুতি রাখছে। এ তালিকায় রয়েছে আলেম-ওলামা, হিন্দু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, যুবক, কৃষক, নারী ও প্রবীণ নাগরিক। ইশতেহারে কওমি মাদ্রাসার উন্নয়ন, ইসলামিক গবেষণা তহবিল গঠন, ধর্মীয় শিক্ষার আধুনিকায়ন ও ধর্মচর্চার বাধাহীন পরিবেশ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার থাকবে। সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল রোধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন, নিরাপত্তা সেল, উৎসবে রাষ্ট্রীয় সহায়তা এবং সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধে কঠোর কার্যক্রম চালুর প্রতিশ্রুতি যুক্ত হবে।

যুব সমাজকে লক্ষ্য করে বিএনপি বড় পরিসরে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি যুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে এক কোটি নতুন কর্মসংস্থান, স্টার্টআপ ফান্ড, আইটি প্রশিক্ষণ, বিদেশে নতুন শ্রমবাজার ও মাদকবিরোধী টাস্কফোর্স।

কৃষকদের গুরুত্ব দিয়ে কৃষি উপকরণের দাম কমানো, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, কৃষিঋণ সহজ করা এবং ধান-চাল কেনার স্বচ্ছ ব্যবস্থা। এ ছাড়া নারীর নিরাপত্তা, কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ, নারী উদ্যোক্তা তহবিল, মাতৃত্বকালীন ভাতা বৃদ্ধি এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল—এগুলোও ইশতেহারের অংশ হচ্ছে। ইশতেহারে ফ্যামিলি কার্ড, বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধি, গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি শক্তিশালী করার অঙ্গীকারও যুক্ত হবে।

দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার প্রকাশ করা হবে। নেতারা আশা করছেন, ৩১ দফা, জুলাই সনদ ও গ্রুপভিত্তিক প্রতিশ্রুতি—এই তিনের সমন্বিত ইশতেহার বিএনপির নির্বাচনী প্রচারে নতুন গতি এনে দেবে।

গতকাল রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সভা হয়। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভায় অংশ নেন। সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ অন্য সদস্যরা অংশ নেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর ইশত হ র র স ব ধ নত ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

আল্লাহকে নিয়ে বাউলের করা ‘কটূক্তি’র অভিযোগের প্রতিবাদ দ্য রেড জুলাইয়ের

আল্লাহকে নিয়ে ‘বাউলের করা কটূক্তি’র অভিযোগে প্রতিবাদ জানিয়েছে দ্য রেড জুলাই নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। একই সঙ্গে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে কোরআন তেলাওয়াতের আয়োজন করে প্ল্যাটফর্মটি। এরপর সেখানে বক্তব্য দেন প্ল্যাটফর্মটির সাধারণ সম্পাদক মো. সজীব হোসাইন। তিনি বলেন, ‘এই বাউল আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করেছে, কোনোভাবেই যেন তাঁকে মুক্তি দেওয়া না হয়। যদি মুক্তি দেওয়া হয়, তাহলে সারা দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিয়ে আমরা মাঠে নামব।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদ্দেশে মো. সজীব হোসাইন বলেন, ‘আপনারা আপনাদের ভুল স্বীকার করবেন কি না, তা জানান।’ প্রতিবাদী বাউল সন্ধ্যা আয়োজন নিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের একজন সেখানে এসে গান গেয়েছেন এবং পক্ষ নিয়েছেন। আমরা তাঁর কাছে জানতে চাই, কোন উদ্দেশ্যে তিনি ওনার পক্ষ নিয়েছেন।’

ছাত্রশিবির ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের উদ্দেশে করে মো. সজীব হোসাইন বলেন, ‘আপনারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করেন। অথচ আল্লাহকে নিয়েই গালি দেওয়া হলো, কিন্তু আপনারা পক্ষেও গেলেন না, বিপক্ষেও গেলেন না। আপনারা যাবেন কোন দিকে?’ তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি অভিযুক্ত তাদের শাস্তি দিন। অন্যদের ওপর মব করবেন না। একজনের শাস্তি আরেকজনকে দেবেন না।’

পরে দ্য রেড জুলাইয়ের পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে মহান আল্লাহর শানে জঘন্য শব্দ ব্যবহার করে ধর্ম অবমাননার সুস্পষ্ট অভিযোগে আবুল সরকার নামক এক বাউলকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তারের ঘটনায় এক শ্রেণির লোক পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করছি, এটি কেবল ফৌজদারি অপরাধ নয়, বরং বাংলাদেশের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলিমের হৃদয়ে আঘাত হানার শামিল। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের এই গুরুতর অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ আইনি শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অপরিহার্য দায়িত্ব। আমরা আরও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে মূল অপরাধকে আড়াল করে “কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার” এমন শিরোনাম ব্যবহার করে মিডিয়ায় পরিকল্পিত বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিষয়টিকে “সংস্কৃতি”, “বাক্‌স্বাধীনতা” বা “শিল্প ও শিল্পীর ওপর আঘাত” হিসেবে দেখানোর অপচেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তাঁর সমর্থকেরা ‘ভিক্টিম কার্ড’ ব্যবহার করে অপরাধ ঢাকতে এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিছু প্রভাবশালী মিডিয়া ও গোষ্ঠী এ ধরনের অপপ্রয়াসে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে, যা ন্যায়বিচারের পথে বড় বাধা তৈরি করছে। আমরা এই দায়িত্বহীনতা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণার তীব্র নিন্দা জানাই।’

এতে আরও বলা হয়, ‘দ্য রেড জুলাই সুস্পষ্টভাবে জানাচ্ছে, আমরা কোনোভাবেই আইন হাতে নেওয়ার প্রবণতাকে সমর্থন করি না। যদি কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, তা–ও রাষ্ট্রের সুশাসনের ঘাটতির কারণে ঘটেছে। আমাদের অবস্থান হলো, রাষ্ট্রে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি অপরাধীর বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অপরাধীকে রক্ষা করা, তার দোষ লঘু করা কিংবা জনতার ন্যায়সংগত ক্ষোভকে উল্টো দোষারোপ করার চেষ্টা—এসবই ন্যায়বিচার থেকে সরে আসার শামিল।’

এতে বলা হয়, ‘আমরা রাষ্ট্রের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, সমস্ত বিভ্রান্তি ও ভ্রান্ত প্রচারণার অবসান ঘটিয়ে, কোনো রাজনৈতিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর চাপ বিবেচনা না করে মহান আল্লাহর অবমাননাকারীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক, কঠোর ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে অত্যন্ত সংবেদনশীল এই বিষয়কে কেন্দ্র করে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর যেসব অপপ্রয়াস চলছে, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ