অন্তর্বর্তী সরকার তাদের প্রায় সব লক্ষ্য অর্জন করেছে: প্রেস সচিব
Published: 18th, November 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকার ‘বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্বল প্রশাসন’ কিছু মানুষের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, “বাস্তবে সরকার মাত্র ১৫ মাসেই তাদের প্রায় সব লক্ষ্য অর্জন করেছে।”
শফিকুল আলম মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বলছি—এটি গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সরকারগুলোর একটি। তারা তাদের প্রায় সব লক্ষ্যই অর্জন করেছে।”
আরো পড়ুন:
হাসিনার বিরুদ্ধে রায় প্রমাণ করে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়: প্রধান উপদেষ্টা
শেখ হাসিনার রায় ঘিরে বিশৃঙ্খলা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে
কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের অদক্ষতার অভিযোগ করলেও তা নাকচ করে শফিকুল আলম বলেন, “দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরেছে।”
বিপ্লব-পরবর্তী প্রতিশোধমূলক হামলা বন্ধ হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র এই সরকারের দুর্বলতার কারণে ‘পাল্টা শুল্ক সুবিধা দেবে না’ এমন সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি করা হয়েছে কোন লবিং ফার্ম ভাড়া না করেই।”
সরকারের আইন প্রণয়ন বিষয়ক কাজের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মাত্র ১৫ মাসে রেকর্ডসংখ্যক আইন পাস হয়েছে, যার মধ্যে বিস্তৃত শ্রম সংস্কার আইনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”
জুলাই ঘোষণা ও সনদের প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, “জুলাই ঘোষণা একটি ঐতিহাসিক নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে এবং জুলাই চার্টার এমন এক রাজনৈতিক সমঝোতা গড়ে তুলেছে যা আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিকে পুনর্গঠন করতে পারে।”
সরকারের অন্যান্য অর্জনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, ফলে ভবিষ্যতে কোনো সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জামিন বা মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে।”
তিনি বলেন, “বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বন্দর অপারেটর লালদিয়া টার্মিনাল চুক্তি স্বাক্ষর করেছে-যা বাংলাদেশের শিল্প রূপান্তরের ভিত্তি স্থাপন করেছে। এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ইউরোপীয় বিনিয়োগ।”
এছাড়া নতুন পররাষ্ট্রনীতি কাঠামো বাংলাদেশের অবস্থানকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কেন্দ্রে নিয়ে গেছে বলেও তিনি জানান।
অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়ে পুনরায় প্রবৃদ্ধির পথে ফিরেছে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, “ব্যাংকিং খাতের লুটপাট রোধ করা হয়েছে, টাকা স্থিতিশীল এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে নেমে ৭ শতাংশ হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আদালতের কার্যক্রম অনুযায়ী, অতীতের নিপীড়নের জন্য জবাবদিহিতা শুরু হয়েছে এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ন্যায়বোধের আবির্ভাব ঘটেছে। শেখ হাসিনাকে তার অবস্থান দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “গুম বন্ধ হয়েছে। এক সময়ের জাতীয় জীবনে আধিপত্যকারী বিএএল চরমপন্থী রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে এবং একটি সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ এসেছে। পূর্ববর্তী নির্যাতনের ওপর নির্মিত জনপ্রিয় প্রামাণ্যচিত্রগুলো এর প্রমাণ। এটি এক ফারুকি-ইফেক্ট।”
র্যাব এখন আইনের অধীনে পরিচালিত হয়, আর কোনো অনানুষ্ঠানিক মতবাদে নয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ভিন্নমতাবলম্বীদের হয়রানি থেকে সরে এসেছে বলে শফিকুল আলম জানান।
গত ১৬ মাসে একটিও সাজানো ‘ক্রসফায়ার’ ঘটনার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
সরকারের আরো অনেক সাফল্য রয়েছে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, “ইতিহাসের এক আগ্রহী পাঠক হিসেবে আমার বিশ্বাস-বাংলাদেশের ইতিহাসে এত অল্প সময়ে কোনো সরকার এত কিছু অর্জন করতে পারেনি, যতটা অন্তর্বর্তী সরকার এই ১৫ মাসে করেছে।”
ঢাকা/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত ক সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
বরিশালে অপসো স্যালাইন কারখানার শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান, সড়ক অবরোধ
বরিশালে অপসো স্যালাইন লিমিটেড কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পর চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে এক পক্ষের আন্দোলনের মধ্যে নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে কারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে মালিকপক্ষ। আজ মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে গেলে চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরা তাঁদের বাধা দেন। এ সময় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।
২০ দিন ধরে চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে নগরের কবি জীবনানন্দ দাশ (বগুড়া রোড) সড়কে অবস্থিত অপসো স্যালাইন কারখানার সামনের সড়ক অবরোধ করে লাগাতার আন্দোলন করে আসছে শ্রমিকদের একটি পক্ষ। মালিকপক্ষ কারখানা চালুর উদ্যোগ নিলে আজ সকালে শ্রমিকদের অপর একটি পক্ষ কাজে যোগ দিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, নতুন শ্রমিকেরা কারখানায় ঢুকতে চাইলে চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরা তাঁদের বাধা দেন। এরপর তাঁরা ব্যানার নিয়ে চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের আন্দোলনকে ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে সড়কে অবস্থান নেন। দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকলে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে জীবনানন্দ দাশ সড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে।
কাজে যোগ দিতে যাওয়া শ্রমিকেরা বলছেন, সকালে তাঁরা কোম্পানিতে ঢুকতে গেলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। যাঁদের চাকরি আছে, তাঁরা যেন কাজ করার সুযোগ পান, সে দাবি জানান তাঁরা। অন্যদিকে চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরা বলছেন, চাকরি পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
অপসো স্যালাইন কারখানা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিব মিয়া বলেন, ‘স্টোরিপ্যাক (সিরিঞ্জ ও স্যালাইন সেট প্রস্তুতকারক) শ্রমিকদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করে নতুন শ্রমিকদের দিয়ে কারখানা চালু করার চেষ্টা চালাচ্ছে মালিকপক্ষ।’
এ ঘটনার পর সংবাদ সম্মেলন করেছে অপসো স্যালাইন লিমিটেড কারখানা কর্তৃপক্ষ। সংবাদ সম্মেলনে অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা অনিন্দ কুমার সরকার বলেন, শ্রম আইন মেনে অপসোনিনের স্টোরিপ্যাক বিভাগের ৪৪৪ জন শ্রমিককে অবসান দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ শ্রমিক অবসানকালীন বেতন–ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার টাকা বুঝে নিয়েছেন। কিন্তু কিছু শ্রমিক ও বহিরাগত ব্যক্তিরা অন্য বিভাগের শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধা দিচ্ছেন। এতে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ আছে। যেহেতু বর্তমানে সারা দেশে ডেঙ্গুর বিস্তার বেড়েছে, তাই উৎপাদন বন্ধ থাকলে সামনে স্যালাইনের সংকট প্রকট হতে পারে।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন দিনের ছুটি ঘোষণা দিয়ে ডাকযোগে ৫৭০ জন শ্রমিককে চাকরিচ্যুতির চিঠি পাঠানো হয়। গত ২৯ অক্টোবর চিঠি পাওয়ার পর থেকেই তাঁরা লাগাতার বিক্ষোভ-সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি করছেন। তাঁরা কারখানাটির সামনের সড়কে ২০ দিন ধরে অবস্থান নিয়ে আছেন। এতে যান চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
শ্রমিকদের আন্দোলনে শুরু থেকেই সংহতি জানিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) জেলা সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, সম্প্রতি অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিতে ট্রেড ইউনিয়ন চালু হয়েছে। মূলত এ কারণে শ্রমিকদের অপসারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কম বেতনে নতুন শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে কারখানা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেটা শ্রম আইনের পরিপন্থী ও অমানবিক।