মাদারীপুরে আবারও গাছ ফেলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে রাজৈর উপজেলার কামালদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় আধা ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।

এর আগে গত রোববার মহাসড়কের গোপালপুর, মেলকাইসহ প্রায় আটটি স্থানে ১২টি গাছ ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করেছিলেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ সকালে আমগ্রাম সেতু ও কামালদী সেতুর মাঝামাঝি স্থানে দুর্বৃত্তরা বড় একটি গাছ কেটে মহাসড়কে ফেলে রাখে। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাত্রী ও চালকেরা ভোগান্তিতে পড়েন। পরে টেকেরহাট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে খবর দেওয়া হলে রাজৈর থানা, মস্তফাপুর হাইওয়ে থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস মিলে গাছ অপসারণে কাজ শুরু করে। প্রায় ৩০ মিনিট পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

পুলিশ বলছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মস্তফাপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন আল রশিদ বলেন, ভোরের দিকে দুর্বৃত্তরা গাছ ফেলে পালিয়ে যায়। পরে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছটি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে হাইওয়ে পুলিশ সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে।

টেকেরহাট পোর্ট স্থল কাম নদী ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কে গাছ কাটার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করি। এ সময় কিছুক্ষণ যান চলাচল বন্ধ ছিল। গাছটি অনেক বড় ও মোটা ছিল। অপসারণে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন সহযোগিতা করেছেন।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মশালমিছিল বিএনপির, ভারতের রিপাবলিক বাংলা টিভিতে দেখাচ্ছে আওয়ামী লীগের

বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের একটি মশালমিছিল দেখিয়েছে ভারতের টিভি চ্যানেল ‘রিপাবলিক বাংলা’য়। তবে দাবি করা হয়েছে, এটি আওয়ামী লীগের ‘শাটডাউন’–এর কর্মসূচি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিও ভারতের আরও গণমাধ্যম তাদের এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা ছড়ানোর ইঙ্গিত হিসেবে দেখানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ ঘোষণার পর ‘লকডাউন’, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির প্রচার অনলাইনে চালাতে শুরু করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। এরপর বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ এবং গাড়ি পোড়ানোর ঘটনাও ঘটে।

এর মধ্যেই ভারতের বেসরকারি টেলিভিশন রিপাবলিক বাংলা ১৩ নভেম্বর ভিডিওটি প্রকাশ করে। ‘এক্সক্লুসিভ’ খবরে বর্ণনা দিয়ে সংবাদ উপস্থাপক বলেন, ‘বাংলাদেশকে স্তব্ধ করার অভিযান শুরু’, ‘আওয়ামী লীগের লকডাউনের ডাক’, ‘ঢাকার রাস্তায় নেমে পড়েছে মানুষ মশাল হাতে।’

লিংক: এখানে, এখানে

একই ভিডিও ভারতের আরেক প্রধান সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮ হিন্দি ভিন্ন দাবি জুড়ে প্রচার করে। চ্যানেলটির সাংবাদিক হার্শিতা প্যাটেল ১৩ নভেম্বর ভিডিওটিকে ঢাকায় ‘ছাত্ররা বইপত্র ফেলে রেখে মশাল হাতে রাস্তায় নেমে এসেছে’ বলে উপস্থাপন করেন।

লিংক: এখানে

ভিডিওটির ক্যাপশনে আরও দাবি করা হয়, নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ঢাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে; সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকদের পদ বাতিলের সিদ্ধান্তে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র আন্দোলনের নতুন স্ফুলিঙ্গ দেখা দিয়েছে।

স্বদেশ নিউজ, এশিয়া নেট নিউজ (তামিল) এবং ভারতের আরও কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল ভিডিওটির স্থিরচিত্র ব্যবহার করে দাবি করে যে বাংলাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। কারও কারও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ঢাকায় লকডাউন চলছে এবং রাজধানী অগ্নিগর্ভ।

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে

একই ভিডিও ১৩ নভেম্বর এক্স–প্ল্যাটফর্মে একাধিক অফিশিয়াল ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে ভাইরাল করা হয়, যার মধ্যে ছিল @NewsAlgebraIND, @RealBababanaras, @FrontalForce, @IndiaWarMonitor, @nabilajamal_ এবং @AadiAchint। এসব অ্যাকাউন্টে ভিডিওটির সঙ্গে যুক্ত করা হয় বিস্ফোরণ, সহিংস বিক্ষোভ, অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন কিংবা শেখ হাসিনার পক্ষে বিক্ষোভ—এমন নানা বিপরীত দাবি।

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে

ভিডিওটি বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে লক্ষাধিকবার দেখা হয়েছে। এর মধ্যে @RealBababanaras–এর পোস্ট করা ভিডিও ২ লাখ ৮৬ হাজার বার এবং @NewsAlgebraIND–এর পোস্ট ২ লাখ ২৫ হাজার বার দেখা যায়।

লিংক:এখানে, এখানে

এ ছাড়া @nabilajamal নামের এক্স অ্যাকাউন্ট, যেখানে ব্যবহারকারী নিজেকে টিভি৯ নেটওয়ার্কের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, সেখানে ভিডিওটিকে ‘বাংলাদেশে নতুন ছাত্র আন্দোলন’ দাবি করে ২৫ হাজার ভিউ পায়।

লিংক: এখানে

দাবি করা ভিডিওটি কি–ফ্রেমে ভাগ করে রিভার্স ইমেজে সার্চে স্পষ্ট হয়, ভিডিওটি কুমিল্লায় বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে এক নেতার সমর্থকদের মশালমিছিলের সময় ধারণ করা।

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

কি–ওয়ার্ড সার্চ করে ১১ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ঘটনার একাধিক ভিডিও ও স্থানীয় অনলাইন পোর্টালের সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। ইউটিউবেও সময় টিভি এবং কুমিল্লার কাগজ চ্যানেলে একই দিনের মশালমিছিলের প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

লিংক: এখানে, এখানে

প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, কুমিল্লা–৬ (সদর) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে স্থানীয় নেতা–কর্মীরা টানা ৯ দিন ধরে বিক্ষোভ করছে। এর অংশ হিসেবে ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় কুমিল্লা নগরীতে মশালমিছিল হয়, যেখানে কয়েক হাজার নেতা–কর্মী অংশ নেন। মিছিলটি কুমিল্লা শহরের টাউন হল মাঠ থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পূবালী চত্বরে এসে শেষ হয়।

প্রথম আলোর কুমিল্লা প্রতিনিধি আবদুর রহমান ভিডিওর ঘটনাস্থল যাচাই করে নিশ্চিত করেন, এটি ১১ নভেম্বর টাউন হল মাঠের মশালমিছিলের।

মিছিলে থাকা কুমিল্লা মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ভিডিওটি টাউন হল মাঠের পূর্ব–দক্ষিণ পাশ থেকে ধারণ করা হয়েছে।

একই কর্মসূচির আরও ভিডিও রয়েছে। রিপাবলিকে প্রচারিত ভিডিও সঙ্গে আরেকটি ভিডিওর তুলনা করে দেখা যায়, দুটিরই বাম পাশে একটি বহুতল ভবন, ডান পাশে কুমিল্লা টাউন হলের বীরচন্দ্র গণ–পাঠাগার ও মিলনায়তন এবং পাশে বিদ্যুতের খুঁটি দেখা যাচ্ছে।

আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি দুই শতাধিক আসনে তাঁদের প্রার্থী মনোনীত করার পর বিভিন্ন স্থানেই ক্ষোভ–বিক্ষোভ চলছে। তার মধ্যে কুমিল্লা–৬ আসন একটি। সুতরাং প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে এটা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, এই ভিডিও কুমিল্লায় বিএনপির এক পক্ষেরই মশালমিছিলের, এটি ঢাকার কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচির নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ