কপ ঘিরে নানা দুর্বলতা, সংস্কারের আহ্বান
Published: 18th, November 2025 GMT
ব্রাজিলের বেলেমে এবারের কপ সম্মেলন ঘিরে মৌলিক একটি প্রশ্ন সামনে আসছে। সেটি হলো, প্রতিবছর জাতিসংঘের এই জলবায়ু সম্মেলন আসলে কী কারণে আয়োজন করা হয়?
৩০ বছর ধরে কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সময়ে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক পদক্ষেপ কিছুটা অগ্রগতি এনেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণ হয়েছে। জলবায়ু তহবিল বেড়েছে। তবে এগুলো যথেষ্ট নয়। এত আয়োজন, এত আলাপ–আলোচনার পরও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বাড়ছে। এর জেরে স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছে তাপমাত্রা।
এমন পরিস্থিতিতে কপ সংস্কারের দাবি জোরালো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ৩০ জনের বেশি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কূটনৈতিক, জাতিসংঘের সাবেক মধ্যস্থতাকারী, বিভিন্ন সরকারে মন্ত্রী ও অধিকারকর্মীরা। তাঁদের অনেকেই মনে করেন, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কপের হালনাগাদ করার প্রয়োজন রয়েছে।
যেমন পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ইউরোপীয় একজন মধ্যস্থতাকারী বলেন, কপ সম্মেলনগুলো মেলার মতো হয়ে পড়েছে। এখানে শুধু আলোচনাই হয়। এই অবস্থা থেকে সরে গিয়ে লক্ষ্য বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে। ইউরোপীয় এই মধ্যস্থতাকারীর সঙ্গে অনেকেই একমত হলেও, সংস্কারটি কেমন হবে, তা নিয়ে অনেকের দ্বিমত রয়েছে।
কারণ, বর্তমান সময়টাকে সংস্কারের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন না অনেকেই। পেরুর আবহাওয়া মন্ত্রী মানুয়েল পুলগার ভিদালের মতে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে জলবায়ুবিরোধী রাজনীতির উত্থান হয়েছে। বিভিন্ন দেশে পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন নীতি দুর্বল করার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। এসব পরিস্থিতিতে কপে বড় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে।
এ ছাড়া কপে যাঁরা পরিবর্তন চান, তাঁদের বড় হতাশা হলো, এই সম্মেলনে প্রায় ২০০ দেশের পূর্ণ ঐকমত্য ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। ফলে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রস্তাবগুলো বহুবার আটকে গেছে। উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে, কপ২৬-এ ‘কয়লা ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা’ নিয়ে আপত্তি তোলে ভারত। ফলে শেষ মুহূর্তে ‘পর্যায়ক্রমে কয়লার ব্যবহার কমানোর’ সিদ্ধান্ত হয়।
এ ক্ষেত্রে একটি সমাধান হতে পারে, কপে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সিদ্ধান্ত নেওয়া। কিন্তু সেটি চালু করতেও প্রথমে সব দেশের পূর্ণ সমর্থন প্রয়োজন, যা বড় একটি বাধা। কিছু সরকার প্রস্তাব করেছে, কপ যেন দুই বছর পরপর হয়। তবে ইন্টার-আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সভাপতির বিশেষ উপদেষ্টা অবিনাশ প্রসাদ বলেন, দুই বছর পরপর কপ হলে তা গতি হারাতে পারে।
জাতিসংঘ নিজেও কপের পরিবর্তন চায়। জাতিসংঘ জলবায়ুবিষয়ক সচিবালয়ের প্রধান সাইমন স্টিয়েল একটি ১৫ সদস্যের দল গঠন করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক বিশ্বনেতা, কূটনীতিক, মন্ত্রী, ব্যবসায়ী ও আদিবাসী প্রতিনিধিরা। তাঁরা আগামী দশকে কপকে কীভাবে আরও কার্যকর করা যায়, এ বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। স্টিয়েল বলেন, ‘নতুন যুগে আমাদের পরিবর্তিত ও উন্নত হতে হবে।’
নানা জটিলতা ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে হতাশা প্রকাশ করেছে এবারের কপ৩০–এর আয়োজন দেশ ব্রাজিলও। দেশটি বলেছে, নতুন প্রতিশ্রুতি নয়, বরং পুরোনোগুলো বাস্তবায়নে মনোযোগ দেওয়া উচিত। এমন পরিস্থিতিতে এবারের কপে একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। তা হলো, বিশ্বের জলবায়ু কূটনীতি যেন আলোচনাকেন্দ্রিক থেকে বাস্তবায়নকেন্দ্রিক করা যায়। এখন দেখার পালা, এই প্রস্তাব কতটা সফল হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কপ ঘিরে নানা দুর্বলতা, সংস্কারের আহ্বান
ব্রাজিলের বেলেমে এবারের কপ সম্মেলন ঘিরে মৌলিক একটি প্রশ্ন সামনে আসছে। সেটি হলো, প্রতিবছর জাতিসংঘের এই জলবায়ু সম্মেলন আসলে কী কারণে আয়োজন করা হয়?
৩০ বছর ধরে কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সময়ে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক পদক্ষেপ কিছুটা অগ্রগতি এনেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণ হয়েছে। জলবায়ু তহবিল বেড়েছে। তবে এগুলো যথেষ্ট নয়। এত আয়োজন, এত আলাপ–আলোচনার পরও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বাড়ছে। এর জেরে স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছে তাপমাত্রা।
এমন পরিস্থিতিতে কপ সংস্কারের দাবি জোরালো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ৩০ জনের বেশি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কূটনৈতিক, জাতিসংঘের সাবেক মধ্যস্থতাকারী, বিভিন্ন সরকারে মন্ত্রী ও অধিকারকর্মীরা। তাঁদের অনেকেই মনে করেন, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কপের হালনাগাদ করার প্রয়োজন রয়েছে।
যেমন পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ইউরোপীয় একজন মধ্যস্থতাকারী বলেন, কপ সম্মেলনগুলো মেলার মতো হয়ে পড়েছে। এখানে শুধু আলোচনাই হয়। এই অবস্থা থেকে সরে গিয়ে লক্ষ্য বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে। ইউরোপীয় এই মধ্যস্থতাকারীর সঙ্গে অনেকেই একমত হলেও, সংস্কারটি কেমন হবে, তা নিয়ে অনেকের দ্বিমত রয়েছে।
কারণ, বর্তমান সময়টাকে সংস্কারের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন না অনেকেই। পেরুর আবহাওয়া মন্ত্রী মানুয়েল পুলগার ভিদালের মতে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে জলবায়ুবিরোধী রাজনীতির উত্থান হয়েছে। বিভিন্ন দেশে পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন নীতি দুর্বল করার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। এসব পরিস্থিতিতে কপে বড় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে।
এ ছাড়া কপে যাঁরা পরিবর্তন চান, তাঁদের বড় হতাশা হলো, এই সম্মেলনে প্রায় ২০০ দেশের পূর্ণ ঐকমত্য ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। ফলে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রস্তাবগুলো বহুবার আটকে গেছে। উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে, কপ২৬-এ ‘কয়লা ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা’ নিয়ে আপত্তি তোলে ভারত। ফলে শেষ মুহূর্তে ‘পর্যায়ক্রমে কয়লার ব্যবহার কমানোর’ সিদ্ধান্ত হয়।
এ ক্ষেত্রে একটি সমাধান হতে পারে, কপে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সিদ্ধান্ত নেওয়া। কিন্তু সেটি চালু করতেও প্রথমে সব দেশের পূর্ণ সমর্থন প্রয়োজন, যা বড় একটি বাধা। কিছু সরকার প্রস্তাব করেছে, কপ যেন দুই বছর পরপর হয়। তবে ইন্টার-আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সভাপতির বিশেষ উপদেষ্টা অবিনাশ প্রসাদ বলেন, দুই বছর পরপর কপ হলে তা গতি হারাতে পারে।
জাতিসংঘ নিজেও কপের পরিবর্তন চায়। জাতিসংঘ জলবায়ুবিষয়ক সচিবালয়ের প্রধান সাইমন স্টিয়েল একটি ১৫ সদস্যের দল গঠন করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক বিশ্বনেতা, কূটনীতিক, মন্ত্রী, ব্যবসায়ী ও আদিবাসী প্রতিনিধিরা। তাঁরা আগামী দশকে কপকে কীভাবে আরও কার্যকর করা যায়, এ বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। স্টিয়েল বলেন, ‘নতুন যুগে আমাদের পরিবর্তিত ও উন্নত হতে হবে।’
নানা জটিলতা ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে হতাশা প্রকাশ করেছে এবারের কপ৩০–এর আয়োজন দেশ ব্রাজিলও। দেশটি বলেছে, নতুন প্রতিশ্রুতি নয়, বরং পুরোনোগুলো বাস্তবায়নে মনোযোগ দেওয়া উচিত। এমন পরিস্থিতিতে এবারের কপে একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। তা হলো, বিশ্বের জলবায়ু কূটনীতি যেন আলোচনাকেন্দ্রিক থেকে বাস্তবায়নকেন্দ্রিক করা যায়। এখন দেখার পালা, এই প্রস্তাব কতটা সফল হয়।