আগে বগুড়ায় যমুনা নদীর বৈধ-অবৈধ বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগ নেতারা। গত ৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতারা এ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। তবে গোপনে সঙ্গে রেখেছেন আওয়ামী লীগ নেতাদেরও। এখন বিএনপি-আওয়ামী লীগ মিলেমিশে বালু লুট করছে। এ কারণে অবৈধ বালুর ব্যবসা নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই কোনো মহলের।
সারিয়াকান্দি
সরকারিভাবে জেলায় পাঁচটি বালুমহালের মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের নারাপালা ও বোহাইল ইউনিয়নের কালিয়ান মহাল সবচেয়ে বড়। কাগজে-কলমে এই বালুমহাল দুটি জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা দেওয়া হয়। তবে বালু তোলা হয় সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী, চরকুমারপাড়া, দেবডাঙ্গা, কুতুবপুর, ধলিকান্দি, চন্দনবাইশার রৌহদহ, আদবাড়িয়া, চর চন্দনবাইশা, দেলুয়াবাড়ি, ইছামারা ও গজারিয়া পয়েন্ট থেকে।
নারাপালা বালুমহালটি কয়েক বছর আগে থেকে ইজারা নিয়ে আসছেন সারিয়াকান্দি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আইয়ুব আলী তরফদার এবং সারিয়াকান্দি পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুস সালাম। আর কালিয়ান বালুমহালটি ইজারা নিতেন জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সারিয়াকান্দির কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামান রাসেল। তারা তিনজনসহ একই দলের কয়েকজন মূলত সারিয়াকান্দি উপজেলায় বৈধ ও অবৈধ বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তারা আত্মগোপনে যান। তখন ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাজু আলম, কামালপুর ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক দেলোওয়ার হোসেন পুটু, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানা ও বিএনপি কর্মী মোখলেছার রহমান হিটলু। কিন্তু তাদের সঙ্গে গোপনে বালুর ব্যবসার সঙ্গী হন আওয়ামী লীগের ওই তিন নেতাসহ আরও কয়েকজন।
এদিকে বালু তোলায় ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। এ নিয়ে ইছামারার মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলম প্রতিবাদ করেন। এ কারণে গত ৮ জানুয়ারি তাঁকে মারধর করেন বালু ব্যবসায়ীরা।
সারিয়াকান্দি পৌর বিএনপির সভাপতি শাহাদৎ হোসেন সনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগসাজশে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন বালু ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তাদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানানো হবে।’
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাজু আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি বালু ব্যবসায় জড়িত নই। মোখলেছার রহমান হিটলুসহ কয়েকজন জড়িত।’
সারিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরে আজম বাবু বলেন, ‘আমাদের দলের যারা বালু ব্যবসায় জড়িত ছিল, তারা এখন আর নেই। আওয়ামী লীগের লোকেরাই এখনও গোপনে বালু ব্যবসা করছেন।’
ধুনট
এ উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের চৌবেড় মৌজায় সরকারি বালুমহালটি কয়েক বছর ধরে ইজারা পাচ্ছেন জেলা যুবলীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন। তাঁর সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা যোগ দিয়ে পার্শ্ববর্তী সারিয়াকান্দি উপজেলার বোহাইল, আওলাকান্দি, ধুনটের শহরাবাড়ী, শিমুলবাড়ী, ভান্ডারবাড়ী, বৈশাখী কৈয়াগাড়ী ও ভূতবাড়ী এলাকায় যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে গেলে বালুমহাল নিয়ন্ত্রণে নেন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে অন্যতম ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি রাশেদুজ্জামান উজ্জ্বল ও ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সদস্য বেলাল হোসেন বাবু। তারা যুবলীগ নেতা বেলালের সঙ্গে সমঝোতা করে যৌথভাবে বালু তোলা শুরু করেন। বালু তোলার ফলে শহরাবাড়ী খেয়াঘাটের পাশের চরসহ শিমুলবাড়ীতে ভাঙনে জেগে ওঠা চর যমুনায় বিলীন হয়েছে। বৈশাখী চরেরও একই অবস্থা। শহরাবাড়ী ঘাট থেকে অতিরিক্ত বালুবোঝাই ট্রাক চলাচল করায় কয়েক কোটি টাকায় নির্মিত শহরাবাড়ী থেকে ধুনট উপজেলা পর্যন্ত সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে।
ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বালু ব্যবসা করি না। দলের অন্য কেউ করতে পারে।’
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, ‘উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের অনানুষ্ঠানিক কপি পেয়েছি। বালু উত্তোলনকারীদের মৌখিকভাবে বন্ধ রাখতে বলেছিলাম। এর পরও বালু তোলায় তাদের দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
সোনাতলা
এ উপজেলায় অন্তত আটটি বালুর পয়েন্ট রয়েছে। এগুলো আগে নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এখন নিয়ন্ত্রণ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে মধুপুর বালুর পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ করতেন মধুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা, সোনাকানিয়া বালুর পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ করতেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান শান্ত, চরপাড়ারটি সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনহাদুজ্জামান লিটন। এখন বালুর পয়েন্টগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম টিটো, মধুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান প্রিন্স, জোড়গাছা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গোলাম রব্বানী, উপজেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুমসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম টিটু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আগেও আমি বালু ব্যবসা করিনি, এখনও জড়িত নই। যারা আমার কথা বলেছে, তারা মিথ্যা বলেছে।’
এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে ফোন করে নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। আত্মগোপনে থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসকের বক্তব্য
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজ বলেন, ‘যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে প্রশাসনের সার্বক্ষণিক নজর আছে। অভিযোগ পেলে অভিযান চালানো হয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ন ত কর ম র ব ল র ব যবস ন আওয় ম উপজ ল র শহর ব ড় ল ইসল ম দল র য
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ‘গুরুত্বপূর্ণ ভবনে ক্ষতি’: আইএইএ
ইরানের আরাক শহরের কাছে নির্মাণাধীন একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলায় ‘গুরুত্বপূর্ণ ভবন’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। হামলায় সেখানে ভারী পানির পারমাণবিক চুল্লির পানিশোধন ইউনিটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান বৃহস্পতিবার আরাকের খোনদাব পরমাণু স্থাপনায় ভারী পানির রিয়্যাক্টরে বোমাবর্ষণ করা হয়। তবে আইএইএ জানিয়েছে, পারমাণবিক চুল্লিটি এখনও চালু হয়নি। সেটি বর্তমানে নির্মাণাধীন। ওই স্থাপনায় কোনো পারমাণবিক পদার্থ ছিল না। খবর-বিবিসি
হেভি ওয়াটার রিয়্যাক্টর ঠান্ডা রাখার জন্য এক ধরনের বিশেষ রাসায়নিক পানি ব্যবহার করা হতো। আরাক স্থাপনার মতো রিয়্যাক্টরগুলো বিজ্ঞান গবেষণার জন্য ব্যবহার করা যায়। এর অবস্থান তেহরান থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। তবে এই রিয়্যাক্টরে উপজাত হিসেবে প্লুটোনিয়াম তৈরি হয়, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বৃহস্পতিবার ম্যাক্সার টেকনোলজির প্রকাশিত একটি স্যাটেলাইট ছবিতে ইসরায়েলি হামলার পর মধ্য ইরানের আরাকের ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা রাতভর অভিযানের সময় ইরানের আরাকের একটি ‘নিষ্ক্রিয় পারমাণবিক চুল্লিতে’ আঘাত করেছে। এছাড়া ইরানের নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনা আবারও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে।
আইএইএ-এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েলি হামলার ফলে এখন পর্যন্ত ‘গুরুতর তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর ঘটনা’ ঘটেনি। তবে ‘তেজস্ক্রিয় দুর্ঘটনার ঝুঁকি’ এখনও রয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই কঠিন ও জটিল পরিস্থিতিতে আইএইএয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্ধারিত সময়ে এবং নিয়মিতভাবে পারমাণবিক স্থাপনাগুলো নিয়ে কারিগরি তথ্য পাওয়া।’