কুষ্টিয়ায় শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, অভিযুক্ত ব্যক্তির দোকানে আগুন
Published: 15th, March 2025 GMT
কুষ্টিয়ায় আট বছর বয়সী এক শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির দোকান ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। আজ শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার একটি ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ব্যক্তি (৫০) একজন মুদিদোকানি।
ভুক্তভোগী শিশুটির মা জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর মেয়ে ওই ব্যক্তির দোকানে যায়। তখন তিনি বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে শিশুটিকে দোকানের মধ্যে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। মেয়েটি বাড়ি গিয়ে মাকে বিষয়টি জানায়। পরে প্রতিবেশীদের নিয়ে তিনি ওই ব্যক্তির দোকানে যান। তখন অভিযুক্ত ব্যক্তি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। বিষয়টি ভুক্তভোগীর মা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে জানান। পরে তাঁদের থানা ও হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু খরচের কথা ভেবে তাঁরা আর যাননি।
শিশুটির বাবা বলেন, ঘটনার দিন তিনি ঢাকায় ছিলেন। বাড়ি ফিরলে তাঁর স্ত্রী বিষয়টি জানান। পরে অভিযুক্ত ব্যক্তির দোকানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলে তিনি ক্ষমা চান। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তি কৌশলে এলাকা ছেড়ে চলে যান। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি নিয়ে বিচার করবে বলে আশ্বাস দিলেও পরে আর কেউ এগিয়ে আসেননি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এই দোকানদারের বিরুদ্ধে এর আগেও এ ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। তখন ভুক্তভোগী মেয়েটি ১৪ বছরের হওয়ায় তার দরিদ্র পরিবার লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি কাউকে জানায়নি। এবারের ঘটনাও একটি পক্ষ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। তবে বিষয়টি জানাজানি হলে এর প্রতিবাদে আজ দুপুরের দিকে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় লোকজন। পরে তাঁরা ওই ব্যক্তির দোকান ভাঙচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, স্থানীয় কিছু লোকজন ওই ব্যক্তির দোকানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবেশ শান্ত করেছে। ভুক্তভোগী পরিবারটি এখনো থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি। পরিবারটির সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সমান কাজ করেও কম মজুরি পান আদিবাসী নারীরা
দিন যায়, আসে নতুন দিন। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যায় অনেক কিছুই। শুধু বদল হয় না সমাজের পিছিয়ে পড়া কিছু জনগোষ্ঠীর ভাগ্য। বিশেষ করে, আদিবাসী নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন যুগ যুগ ধরে।
সমালোচনার মুখে ও সময়ের প্রয়োজনে অনেক ক্ষেত্রেই লিঙ্গ বৈষম্য কমেছে। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দিনে দিনে কমছে। কিন্তু, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল পল্লীর নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আগের মতোই।
দিনাজপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকার সাঁওতাল পল্লী জয়পুর পাড়া। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামটি দেখতে বেশ সুন্দর। নিরিবিলি পরিবেশ, চারদিকে সবুজের সমারোহ। সবুজ ধানক্ষেত আর কিছু দূর পর পর সাঁওতালদের বাড়ি। কোথাও কোথাও উঁচু টিলার মাঝে বড় বড় পুকুর। পুকুর পাড়ে কিছু সাঁওতাল ঘর বেঁধে থাকছেন। পাশের বড় মাঠে খেলা করছে কিছু আদিবাসী শিশু।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে পেশা বদলাচ্ছেন অনেক শ্রমিক
ছোট্ট হাতে সংসারের হাল
পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের কেউ কেউ বাঁশের চটা তুলছেন, কেউ রান্নার জন্য গাছের ডাল কাটছেন। বাড়িতে পালন গরু-ছাগল দেখভাল করছেন পুরুষ ও নারী উভয়ই। নারীদের অধিকাংশই গরু-ছাগল চড়ানোসহ বিভিন্ন কাজে বাড়ির বাইরে। যদিও ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়নি তেমন।
কয়েকজন সাঁওতাল নারীকে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। তারদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরাও পুরুষের মতো জমিতে বীজ বপন, চারা উত্তোলন, রোপণ, সার দেওয়া, নিড়ানি ও ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত সব কাজ করি। কিন্তু, এখনো সেই আগের মতোই মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা।”
গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের জয়পুর পাড়া গ্রামের কর্মজীবী সাঁওতাল নারী মমতা হেমব্রম। তিনি বলেন, “পুরুষরা কাজ করে মজুরি পান ৫০০ টাকা আর আমাদেরকে দেওয়া হয় ৪৫০ টাকা। ক্ষেত-খামারের কাজ অনেক কঠিন। পুরুষ-নারী তো সমান কাজ করি। আমরা সমান মজুরি চাই, কিন্তু চাইলেও তো তারা দেন না।”
একই গ্রামের সাবিনা হাসদা। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “এই অঞ্চলে অধিকাংশ পুরুষ ও নারী ধান-আখ ও মাছ চাষ ও গরু-ছাগল লালনপালন করেন। কাজ একই হলেও আমাদের মজুরি পুরুষের চেয়ে কম। আমরা সমান মজুরি চাই।”
সুরুজ মনি টুডু নামের আরেক নারী বলেন, “আমরা পুরুষের সমান কাজ করি, তাই আমরা এই মে দিবস থেকেই সমান মজুরি চাই। আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে সমান মজুরি নিশ্চিত করার দাবি করছি।”
সাপমারা গ্রামের দেলু মারমা বলেন, “আমাদের সব কাজই কৃষিনির্ভর। সে কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কাজ করতে হয়। তা না হলে সংসার চলে না। আমরাও চাই, পুরুষ এবং নারী যেন সমান মজুরি পান।”
পুকুর পাড়েই বাস করেন অমেদা হাজদা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “সব জায়গায় পুরুষের দাম বেশি, নারীদের দাম কম। সে কারণে তাদের মজুরি বেশি, আমাদের কম। আমাদেরকেও পুরুষের সমান দাম দেবে, সমান মজুরি দেবে, এটাই আমাদের দাবি।”
সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে রাইজিংবিডিকে বলেন, “এই এলাকার অধিকাংশ নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা বিষয়ে তাদের ধারণাই নেই। অনেকে জানলেও কাজ হারানোর ভয়ে ন্যায্য মজুরির বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সমঅধিকারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি।”
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক রিকতু প্রসাদ বলেন, “গাইবান্ধার নারীরা আজও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে, গোবিন্দগঞ্জের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীরা। নারী-পুরুষ সবাই শ্রমিক, বৈষম্য করতেই তাদের আলাদা চোখে দেখা হয়। মে দিবসে মুখে যতই বলি না কেন, পুরুষশাসিত সমাজে এখনো পরিবর্তন আসেনি। সমাজ থেকে মজুরি বৈষম্য দূর করার জোর দাবি জানাই।”
বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী রাইজিংবিডিকে বলেন, সব ক্ষেত্রেই নারীরা অবহেলিত এবং বঞ্চিত। মুখে সবাই নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। সাঁওতাল তথা আদিবাসী নারীদের সমান মজুরি পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। তারা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে করা প্রয়োজন।
ঢাকা/মাসুম/রফিক