কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি এনসিপির
Published: 22nd, April 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একমত জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। কুয়েটের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে এনসিপি।
মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টায় রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির পক্ষ থেকে কুয়েটের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিদাওয়ার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অচলাবস্থা নিরসন করে হল খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া সার্বিক বিষয়ে ইউজিসির নেতৃত্বে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত। এতে বলা হয়, কুয়েটের উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছে এনসিপি। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বহিরাগতরা দেশি অস্ত্রসস্ত্রসহ হামলা চালায়। হামলায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশ না করলেও একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাতজন দলীয় কর্মী থাকার কথা বলেছেন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরে এ ধরনের আচরণ বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে লক্ষ করা গেছে। এ বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে, শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা এবং উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল থেকে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপাচার্যকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদের অধিকার সবার রয়েছে, তবে শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হলে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এনসিপির নেতারা আরও বলেন, দুই মাস আগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কুয়েট শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি দিলেও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি, যা চরম দায়িত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ। আগামীকাল (বুধবার) ইউজিসির একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিনে পরিদর্শনে কুয়েটে যাবে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুনকুয়েটের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শাহবাগে ‘ব্লকেড’, যান চলাচল বন্ধ২ ঘণ্টা আগেসংবাদ সম্মেলন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক-উস সালেহীন ও ফয়সাল আহমেদ। শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের আদেশ উপাচার্য একা নিয়েছেন কি না, তাঁর পদত্যাগেই এর সমাধান কি না, জানতে চাইলে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আর কুয়েটের শিক্ষার্থীরা যেহেতু মনে করছেন, এ সংকট নিরসনের সমাধান ভিসির পদত্যাগ, তাঁদের এ দাবির সঙ্গে আমরা সংহতি জানাচ্ছি। পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে, শিক্ষা কার্যক্রম সচল করার জন্য এ ছাড়া কোনো দাবিদাওয়া দেখছি না। ইউজিসির অধীন একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করারও দাবি জানাচ্ছি।’
আরেকটি প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, কুয়েটের শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা যেসব কর্মসূচি দিচ্ছেন, দাবি জানাচ্ছেন—এনসিপি এসব যৌক্তিক দাবি ও মতামতকে সমর্থন জানায়। এ ইস্যুতে এনসিপির পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পদত য গ র দ ব উপ চ র য এনস প র
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।