ট্রাম্প প্রশাসনের ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থী ধরপাকড়ের মধ্যেই কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ
Published: 29th, March 2025 GMT
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি পূরণের জন্য আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি নীতি পরিবর্তন করতে সম্মত হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী সভাপতি ক্যাটরিনা আর্মস্ট্রং পদত্যাগ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের ধরপাকড়ের মধ্যে তাঁর পদত্যাগের ঘটনা ঘটল।
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করার পর গত বছরের আগস্ট থেকে ক্যাটরিনা আর্মস্ট্রং বিশ্ববিদ্যালয়টির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি দাবি করেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইহুদি বিদ্বেষ এবং ইহুদি শিক্ষার্থীদের হয়রানি সহ্য করেছে।
ট্রাম্প ইতিমধ্যেই স্কুলের জন্য প্রায় ৪০ কোটি ডলারের কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল প্রত্যাহার করেছেন। তাঁর প্রশাসন ক্যাম্পাসের বিক্ষোভে জড়িত শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দিতে নিশানা করছে।
গতকাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়টি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ক্যাটরিনা আর্মস্ট্রং কলাম্বিয়ার মেডিকেল সেন্টারের প্রধান হিসেবে তাঁর আগের দায়িত্বে ফিরে যাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সহসভাপতি ক্লেয়ার শিপম্যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডেভিড জে গ্রিনওয়াল্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের চরম অনিশ্চয়তার সময়ে ড.
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতিতে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সহসভাপতি ক্লেয়ার শিপম্যান লিখেছেন, ‘আমাদের সামনে থাকা গুরুতর চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে আমি এই দায়িত্ব গ্রহণ করছি।’ তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে এবং ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার’ বাস্তবায়নের জন্য ‘জরুরি ভিত্তিতে কাজ’ করা হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা এবং ‘শিক্ষাগত স্বাধীনতা’ সমুন্নত রাখা হবে।
গত সপ্তাহে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের বেশ কয়েকটি দাবি মেনে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিক্ষোভে মুখোশ নিষিদ্ধ করা এবং কিছু একাডেমিক প্রোগ্রামের তদারকিতে পরিবর্তন আনা।
ট্রাম্প প্রশাসনের আটকে দেওয়া তহবিল পুনর্বহাল করা হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অনুষদ এই কাটছাঁটের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
আরও পড়ুনফিলিস্তিনের জন্য বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়৩০ এপ্রিল ২০২৪গাজা যুদ্ধ এবং ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের বিরুদ্ধে গত বছর ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু ছিল নিউইয়র্কের এই বিশ্ববিদ্যালয়।
শুধু কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েরই তহবিল আটক দেওয়া হয়নি, বরং ট্রাম্প প্রশাসন আরও ৬০টি বিশ্ববিদ্যালয়কে সতর্ক করে দিয়েছে, ক্যাম্পাসগুলোয় ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগের সমাধান না করা হলে তাদের তহবিলও বাতিল করা হতে পারে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কল ম ব য পদত য গ র জন য তহব ল
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’