সুন্দরবনকে ঝুঁকিতে ফেলে প্রায় ২০০ শিল্পকারখানা স্থাপন
Published: 4th, May 2025 GMT
সুন্দরবনের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) সীমানা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেখানে শিল্প প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর জাতীয় পরিবেশ কমিটির বৈঠকে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের ভেতরে শিল্পের অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়। যদিও পরিবেশবাদীরা বলছিলেন, শিল্পকারখানা সুন্দরবনকে সংকটে ফেলবে।
২০১৭ সালের ৬ আগস্ট জাতীয় পরিবেশ কমিটির চতুর্থ সভায় ইসিএ এলাকার সীমানা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ওই কমিটির সভাপতি শেখ হাসিনা। বৈঠকের কার্যবিবরণীতেই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এখন সেটি সামনে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, ওই সভার পর অবৈধভাবে গড়ে ওঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাড়পত্র দেওয়ার পাশাপাশি নতুন করে এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) প্ল্যান্ট, সিমেন্ট কারখানা ও সিকদার গ্রুপের পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোনের অনুমোদন দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।
জীববৈচিত্র্যের অসামান্য সম্ভার সুন্দরবনের পরিবেশগত ও বাস্তুতান্ত্রিক গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ১৯৯৭ সালে একে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো। তবে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠা, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে নৌযান চলাচলসহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ জানিয়েছে সংস্থাটি।
সুন্দরবনকে রক্ষায় ১৯৯৯ সালে বনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা বা ইসিএ হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। একই সঙ্গে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শ্বাসমূলীয় এই বনের ইসিএর মধ্যকার মাটি, পানি ও বায়ুর বৈশিষ্ট্য নষ্ট হয়, এমন কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়।
অবশ্য ইসিএর মধ্যে কোন কোন এলাকা পড়েছে, তা নিয়ে সংশোধিত ও চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয় ১৯ বছর পর—২০১৭ সালের জুন মাসে। সে অনুযায়ী সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার ১০ উপজেলার ৬৫টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার ২৯৮ মৌজা ইসিএর অন্তর্ভুক্ত।
আগের সরকার সুন্দরবনকে রক্ষার বদলে শিল্প রক্ষার ওপর জোর দিয়েছিল। দুর্নীতিপ্রবণ মানসিকতা থেকেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। শরীফ জামিল, সদস্যসচিব, ধরিত্রী রক্ষায় আমরাদেখা যায়, তত দিনে সুন্দরবনের ইসিএ এলাকার মধ্যে বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে এবং ওঠার পর্যায়ে রয়েছে। বেশির ভাগ শিল্পকারখানার মালিক প্রভাবশালী। সরকারও সেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে।
ইসিএ নিয়ে প্রশ্ন তুলে শিল্প অনুমোদনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশ-প্রকৃতি সুরক্ষার যে সাংবিধানিক, আইনি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার আছে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সেগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে এ ধরনের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন, ‘যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেয়েছে, কিন্তু কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হয়নি, অন্তর্বর্তী সরকার সেগুলোর অনুমোদন বাতিল করে পরিবেশ সুরক্ষায় উদাহরণ তৈরি করতে পারে।’
কী হয়েছিল সভায়জাতীয় পরিবেশ কমিটির মোট সদস্য ২৯ জন। এর মধ্যে অর্থ, কৃষি, স্থানীয় সরকার, পানিসম্পদ, পরিবেশ ও বন, ভূমি, খাদ্যসহ মোট ১০টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা থাকেন সদস্য হিসেবে। এ ছাড়া ১৭টি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও তিনজন বাইরের মনোনীত প্রতিনিধি থাকেন কমিটিতে। সভায় বলা হয়, সুন্দরবন অঞ্চলে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। এমন চাহিদার প্রেক্ষাপটে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবগুলো (শিল্পকারখানার ছাড়পত্র) অনুমোদন করা যেতে পারে বলে শেখ হাসিনাকে অভিহিত করা হয়।
সভার কার্যবিবরণীতে শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘এ পর্যায়ে শেখ হাসিনা প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে বলেন, সুন্দরবনের ইসিএ এলাকার সীমানা ও মৌজা নির্ধারণ করে ২০১৫ ও ২০১৭ সালে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল, সেটি কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। ইসিএ ঘোষণার ক্ষেত্রে সুন্দরবনের চতুর্দিকে ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের যে পরিমাপ নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটির ভিত্তিও স্পষ্ট নয়। জারিকৃত মৌজার তালিকাটি নিয়ে তিনি (শেখ হাসিনা) অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ইসিএ তালিকাটি পুনরায় পরীক্ষার প্রয়োজন আছে বলে জানান তিনি।’
সভায় লাল শ্রেণিভুক্ত (বেশি ক্ষতিকর) ট্যানারি, ডাইং, ওয়াশিং, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ও টায়ার পাইরোলাইসিস ছাড়া মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) এলাকায় নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
জাতীয় কমিটির ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রইছউল আলম মণ্ডল। তিনি এখন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, যেকোনো সভা প্রচলিত আইনের বাইরে যেতে পারে না। ওই সময় ‘এনভায়রনমেন্টাল কমপ্লায়েন্স’ (পরিবেশগত আইনকানুন) মেনে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দূষণ রোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, জানতে চাইলে রইছউল আলম বলেন, সব কটি বিষয় তাঁর মনে পড়ছে না। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইসিএ এলাকার পর্যালোচনা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
তবে, পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, এরপর ইসিএর আর কোনো পুনর্বিবেচনা হয়নি। এতে বোঝা যায়, প্রভাবশালীদের অবৈধ শিল্পের অনুমতি দিতেই ইসিএ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। ইসিএতে কোনো আপত্তির দিক থাকলে সরকার সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা পর্যালোচনা করত।
জাতীয় পরিবেশ কমিটির বৈঠকে ইউনেসকোর শর্ত মেনে সুন্দরবন এলাকার জন্য ‘কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের মে মাসে এসইএ সম্পন্ন হয়। যদিও সেটাকে সুন্দরবনবান্ধব না করার বদলে শিল্পবান্ধব করা হয়েছে উল্লেখ করে পরিবেশকর্মীরা জাতিসংঘের কাছে চিঠি দেন।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’র (ধরা) সদস্যসচিব শরীফ জামিল প্রথম আলোকে বলেন, আগের সরকার সুন্দরবনকে রক্ষার বদলে শিল্পরক্ষার ওপর জোর দিয়েছিল। তারা পরিবেশ, জনজীবন, বাস্তুতন্ত্র রক্ষার মৌলিক সব শর্ত পাস কাটিয়ে সব মেগা প্রজেক্ট (বড় প্রকল্প) বাস্তবায়ন করেছিল। দুর্নীতিপ্রবণ মানসিকতা থেকেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। দুঃখজনকভাবে এখনো পরিবেশ-প্রকৃতিকে অবজ্ঞা করে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আদালতে গিয়েও লাভ হয়নি২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ‘সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংগঠন সুন্দরবনের ইসিএর মধ্যে গড়ে ওঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে উচ্ছেদ করা ও ছাড়পত্র না দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তালিকা করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে উচ্ছেদ করা এবং নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানকে ছাড়পত্র না দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন। এর পরের বছর পরিবেশ অধিদপ্তর একটি তালিকা আদালতে জমা দেয়। ওই তালিকায় ছিল ১৯০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে ২৪টি লাল শ্রেণির।
পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩-এ দূষণের মাত্রা অনুযায়ী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে চার শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘লাল শ্রেণি’র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) করা বাধ্যতামূলক। ইআইএর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারণে পরিবেশের ওপর কী কী ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে, তা চিহ্নিত করা যায়। সম্ভাব্য সেসব ক্ষতি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিককে। অন্য তিন শ্রেণি হলো ‘সবুজ’, ‘হলুদ’ ও ‘কমলা’।
ইসিএর মধ্যে থাকা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাড়পত্র না দেওয়ার আদেশের পর আদালতে যায় কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী। জাতীয় পরিবেশ কমিটির সভার সিদ্ধান্তের আলোকে সেসব প্রতিষ্ঠানকে ছাড়পত্র দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে সিকদার গ্রুপের পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোনকে ছাড়পত্র দেওয়ার আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে পরিবেশ অধিদপ্তর। লিভ টু আপিল নিষ্পন্ন হওয়ার আগেই ২০২০ সালে অবস্থানগত ছাড়পত্র পায় পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিবেশগত ছাড়পত্র) মাসুদ ইকবাল মো.
বর্তমানে সুন্দরবনের ইসিএর মধ্যে লাল শ্রেণির মোট কতটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য অধিদপ্তর দিতে পারেনি। পরিচালক মাসুদ ইকবাল এ ব্যাপারে অধিদপ্তরের বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ের যোগাযোগের পরামর্শ দেন। ১৬ এপ্রিল প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সেখানে যোগাযোগ করেও পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তর বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আসাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের এলাকায় ও মোংলা ইপিজেডে (রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা) প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কারখানা চালু আছে। উভয় এলাকা ইসিএর মধ্যে পড়েছে।
শিল্পকারখানা: সরেজমিন১৬ এপ্রিল সরেজমিনে দেখা যায়, সুন্দরবনের ইসিএর মধ্যে ২০৫ একরের মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভূমি উন্নয়ন, সড়ক, বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া জায়গায় ২৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাচ্ছে।
এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশেই ইপিজেড। সেখানকার ৩০২টি প্লটেই শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে ইপিজেডের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া যায়নি।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠান সিকদার গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোনকে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বলা হয়েছিল, সেখানে ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোনে কোনো স্থাপনা দেখা যায়নি। এর উত্তর-পূর্ব পাশে তিনটি নিরাপত্তাচৌকি রয়েছে। দুজন নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানে ৩০ একর জমি নিয়েছে একটি শিল্পগোষ্ঠী। সিমেন্টের ব্যাগ তৈরির প্ল্যান্ট করার কথা। চার বছর আগে কাজও শুরু হয়েছিল। তবে দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।
এদিকে গত সোমবার সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে জাতীয় পরিবেশ কমিটির ১৬তম সভায় সুন্দরবনের ইসিএ এলাকায় নতুন করে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সূত্র বলছে, পুরোনো শিল্পের বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে এবং তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
এর আগে ১৬ এপ্রিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেকগুলো লাল শ্রেণিভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে সবুজ শ্রেণিতে নিয়ে আসা হয়েছে। সেগুলোর তথ্য নিচ্ছি। আর সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান না করতে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, সেটারও একটা তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছি।’এসব তথ্য ও প্রতিবেদন হাতে আসার পর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সুন্দরবনের কী ক্ষতি হচ্ছে২০২২ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিন থেকে করা ‘ইমপ্যাক্ট অব ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট অন দ্য ফ্লোরা অ্যান্ড ফনা অ্যান্ড ইকোসিস্টেম অব দ্য সুন্দরবন অ্যান্ড সারাউন্ডিং এরিয়াজ’ শীর্ষক এক গবেষণায় সুন্দরবনের চারপাশে গড়ে ওঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা বর্জ্য ও গ্যাস আর বিদ্যুৎকেন্দ্রের উত্তপ্ত পানি সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করছে বলে বলা হয়।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্টাডিতে দেখেছি সুন্দরবনের চারপাশের গড়ে ওঠা শিল্পকারখানা–সংলগ্ন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারার সংখ্যা কমে এসেছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, রামপাল ও মোংলার সুন্দরবন এলাকায় প্রতি বর্গমিটারে চারার সংখ্যা ২ থেকে ৩টি। অন্যদিকে যেসব এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান নেই, সেখানে চারার সংখ্যা প্রতি বর্গমিটারে ১০ থেকে ১৪টি।
প্রতিটি বীজে ভ্রূণ থাকে। দূষণের কারণে অধিকাংশ বীজের ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তাদের অঙ্কুরোদ্গম হয় না। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দূষণ জোয়ারের টানে বনের ভেতর চলে আসে। ফলে বনের মাটির গুণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় উদ্ভিদের বৈচিত্র্য কমে আসবে। সুন্দরবনের বন্য প্রাণী, পাখিসহ সামগ্রিক জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতিমধ্যে সুন্দরবনের কোথাও কোথাও এ ধরনের ক্ষতি দৃশ্যমান হচ্ছে।
শিল্পের কাছে গুরুত্ব পায়নি প্রাণ–প্রকৃতিএশিয়ান হাতি ও বেঙ্গল টাইগার—এ দুটি বন্য প্রাণীকে বাংলাদেশের প্রাণ–প্রকৃতির প্রতিনিধিত্বকারী প্রাণী (ফ্ল্যাগশিপ স্পেসিস) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএনের সুপারিশ পাশ কাটিয়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের তিনটি রক্ষিত বনের লক্ষাধিক গাছ, ২৬টি পাহাড় কেটে ও হাতি চলাচলের ১৪টি ক্রসিং পয়েন্টের ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয় দোহাজারি–কক্সবাজার রেললাইন। ১৫ হাজার একর ম্যানগ্রোভ বন কেটে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপকূলে তৈরি করা হয় দেশের সবচেয়ে বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ ছাড়া বিগত সরকারের সময় দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীতে ১০ হাজার একর রক্ষিত বন ও ইসিএ ঘোষিত সোনাদিয়া অধিগ্রহণ করা হয় পর্যটনের নামে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ ইসিএমানুষের নানাবিধ কর্মকাণ্ড কোনো একটি নির্দিষ্ট বাস্তুতন্ত্রের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিনষ্ট হওয়ার শঙ্কা থাকলে সেটিকে প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা বা ইংরেজিতে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মূলত নির্দিষ্ট বন, জলাশয়, হাওর ও সৈকতের মাটি, পানি, বায়ুসহ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা করতে ইসিএ ঘোষণা করা হয়। সুন্দরবনসহ নানা সময়ে বাংলাদেশে ইসিএ ঘোষণা করা হয়েছে ১৩টি এলাকাকে। ইসিএ ঘোষণা করার পর এসব সংবেদনশীল এলাকায় ৯ ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে প্রাকৃতিক বন ও গাছপালা কাটা, শিকার ও বন্য প্রাণী হত্যা, প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থলের ক্ষতি হয় এমন কর্মকাণ্ড; মাছ ও জলজ প্রাণীর ক্ষতি হয় এমন কর্মকাণ্ড এবং মাটি, পানি, বায়ু ও শব্দদূষণ তৈরি করে এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন নিষিদ্ধ করা হয়।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান দেয় ইউনেসকো। কিন্তু তাতে শর্ত ছিল এই বনের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় এমন কোনো তৎপরতা চালানো যাবে না। শর্ত লঙ্ঘনের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হলে তার বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান চলে যাবে। এরপর ১৯৯৯ সালে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের সম্ভার রক্ষায় সরকার সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাকে ইসিএ হিসেবে ঘোষণা করে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচল ও ইসিএর মধ্যে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানা—এই তিন তৎপরতা সুন্দরবনকে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করতে পারে বলে তৎকালীন সরকারকে সতর্ক করে ইউনেসকো। সতর্ক করার পরও তৎকালীন সরকার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সম্পন্ন করে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ১০ ক ল ম ট র স ন দরবন র চ প রথম আল ক র স ন দরবন ২০১৭ স ল সরক র স মন ত র ন এল ক অন য য় এল ক য় র অন ম হয় ছ ল র চ লক কর ত প র জন য ধরন র র ওপর এমন ক সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
পর্যটক টানতে ছাড়ের ছড়াছড়ি, নির্বাচন ঘিরে আশা-নিরাশা
দেশে শীতকালীন পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে। সাধারণত এ সময় ভ্রমণ ও পর্যটনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ বছরও পর্যটকেরা ঘুরতে যাওয়ার জন্য কক্সবাজার ও পার্বত্য অঞ্চলকে বেশি পছন্দ করছেন। নতুন গন্তব্য হিসেবে চাহিদা বেড়েছে সুন্দরবনের। নানা বিধিনিষেধ ও যাতায়াতে অসুবিধার কারণে সেন্ট মার্টিন ও সিলেটে যাওয়ার চাহিদা কমেছে।
এই খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, পর্যটক আকর্ষণে মূল্যছাড়সহ নানা ধরনের অফার ও সুবিধা রয়েছে। বিদেশি পর্যটকদের জন্যও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করেন অপারেটররা। গত বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, বিধিনিষেধসহ বিভিন্ন কারণে পর্যটন ব্যবসায় কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। এ বছর পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক থাকায় পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীদের আশা, এবার ভালো ব্যবসা হবে।
যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকছে
পর্যটক আকর্ষণে হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলো এই মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের ছাড় দিচ্ছে। এর মধ্যে সিলেট ও শ্রীমঙ্গলের রিসোর্টগুলো সপ্তাহের কার্যদিবস ও ছুটির দিন বিবেচনায় ২০ থেকে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়। শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা রিসোর্ট ও নভেম ইকো রিসোর্ট ২০ থেকে ৩০ শতাংশ এবং গ্র্যান্ড সুলতানের ওয়েবসাইটে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়ার উল্লেখ রয়েছে। শ্রীমঙ্গলে প্রায় দুই শ হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট আছে। তারা হানিমুনসহ বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় মূল্যছাড় দেয়।
পর্যটকদের কাছে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক খুব পছন্দের জায়গা। সেখানকার অধিকাংশ রিসোর্টে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় পাওয়া যায়। সাজেকের মেঘকাব্য হিলটপ কটেজ, মেঘপল্লী ও ডিমোর সাজেক ভ্যালি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ইত্যাদি ২০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় দেয়। তাদের বিভিন্ন ধরনের নানা প্যাকেজ রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ পর্যটন করপোরশনও ৩০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দেয়।
কক্সবাজারে বেশি, সেন্ট মার্টিনে কম
দেশের অন্যতম শীর্ষ পর্যটন গন্তব্য কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিন। অনেকেই এক যাত্রায় এ দুটি গন্তব্য ঘুরতে যান। গত ৯ মাস সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল। ১ নভেম্বর সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও চলতি মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় দ্বীপটি ভ্রমণ করতে পারবেন। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাত যাপনের সুযোগ থাকবে। তবে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক সেখানে যেতে পারবেন না। এরপর আবার ৯ মাসের নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এ জন্য সেন্ট মার্টিনে রাত্রিযাপনে এবার হোটেল ও রিসোর্টের ভাড়া বেশি হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজারে প্রায় সাড়ে চার শ হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে রিজার্ভেশন নেওয়া শুরু হয়েছে। পর্যটক টানার জন্য সেখানে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তবে ডিসেম্বরে পর্যটকের সমাগম বেড়ে গেলে ছাড় কমে যেতে পারে, এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে কক্সবাজার হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ‘গত বছর পর্যটন মৌসুমে বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্টেরই প্রত্যাশিত লাভ হয়েছিল। এবারও ভালো ব্যবসা হবে বলে আশা করছি। বিশেষ করে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত সীমিত থাকায় কক্সবাজারের ওপর বেশি চাপ পড়তে পারে।’
সিলেটে এবার কমছে
সিলেটে সাধারণত শীত ও বর্ষা মৌসুমে পর্যটকের বেশি উপস্থিতি থাকে। সিলেটের হোটেল-মোটেলগুলো ভালো ব্যবসা করলে মাসে গড়ে দেড় কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত বছর বর্ষা মৌসুমে সিলেটে পর্যটকের উপস্থিতি কম ছিল। যদিও শীত মৌসুমে ব্যবসা বৃদ্ধি পায়।
স্থানীয় হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সংস্কারকাজ চলছে। এ কারণে মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে। ৪-৬ ঘণ্টার জায়গায় ১৬-১৮ ঘণ্টা লেগে যায় গন্তব্যে পৌঁছাতে। আবার স্থানীয় সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের অবস্থাও খারাপ। ফলে জাফলং ও জৈন্তাপুরে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় পর্যটকদের। অন্যদিকে সিলেট রুটে বিমানভাড়া অত্যাধিক, আবার ট্রেনের টিকিট চাহিদামতো পাওয়া যায় না। এসব কারণে সিলেটে পর্যটক কমছে।
সিলেটের হোটেল অ্যান্ড গেস্টহাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নতুন মৌসুম শুরু হলেও হোটেল-মোটেল বুকিং তেমন নেই। নভেম্বর মাসের শেষের দিকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের পরীক্ষা শেষ হবে। এর মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি না হলে চলতি মৌসুমে সিলেটের পর্যটন ব্যবসায় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
জাহাজে সুন্দরবনে যাওয়া
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এবার সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটকের বাড়তি আকর্ষণ রয়েছে। যদিও সেখানে সীমিতসংখ্যক পর্যটক যাওয়ার সুযোগ পান। সুন্দরবনে রাত্রিযাপনের জন্য কিছু রিসোর্ট রয়েছে। লঞ্চ বা বড় ট্রলার ভাড়া করে দিনে দিনে সুন্দরবন ঘুরে আসা যায়। এ ছাড়া আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ক্রুজ বা জাহাজে ভ্রমণ। সুন্দরবন ভ্রমণে বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৬০টি ক্রুজ তথা জাহাজের ব্যবস্থা রয়েছে। জাহাজে দুই রাত ও তিন দিনের প্যাকেজ ভ্রমণে খরচ পড়ে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা।
এ নিয়ে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট ও স্পা লিমিটেডের প্রধান বিপণন ও রাজস্ব কর্মকর্তা এ কে এম আসাদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ক্রুজগুলোতে ইতিমধ্যে ডিসেম্বর মাসের ৯০ শতাংশ আগাম বুকিং হয়ে গেছে।’
হাওরে আড়াই শর বেশি হাউসবোট
পর্যটকদের কাছে হাউসবোটকেন্দ্রিক পর্যটনও দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। দেশে বর্তমানে প্রায় তিন শ হাউসবোট রয়েছে। এর মধ্যে আড়াই শর বেশি হাউসবোট চলে টাঙ্গুয়ার হাওরে। বাকিগুলোর কার্যক্রম চলে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই, পদ্মা নদীর মাওয়া পয়েন্ট ও অন্যান্য এলাকায়। হাওরকেন্দ্রিক হাউসবোটের মূল পর্যটন মৌসুম হলো জুন-সেপ্টেম্বর চার মাস। হাওরের বোটগুলো শীত মৌসুমে পদ্মা নদীতে চলে আসে।
আলাপকালে জানা যায়, হাউসবোটে চড়ে ঘুরতে প্রতিজনের টাঙ্গুয়ার হাওরে ৪ থেকে ১২ হাজার টাকা, কাপ্তাই হ্রদে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা এবং পদ্মা নদীতে দেড় হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়।
হাউসবোট অ্যাসোসিয়েসন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. আরাফাত হোসেন বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে অনেকটা পর্যটকশূন্য ছিল হাওরের হাউসবোটগুলো। আবার সিলেট মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে এ বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে হাওরে পর্যটক সমাগম কম ছিল। এখন শীত মৌসুমের পর্যটক টানার চেষ্টা করছি আমরা।’
বিদেশি পর্যটকে ভাটা
দেশে বিদেশি পর্যটক তুলনামূলক কম। পর্যটন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে অন্যতম বড় বাধা তাঁদের ভ্রমণকালে মোট অর্থের ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এ ছাড়া বিদেশি পর্যটকদের জন্য দেশে ভালো গাইডের স্বল্পতা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের নদী কিংবা পাহাড়ে ভ্রমণে রয়েছে নানা বিধিনিষেধ।
বিদেশি পর্যটক নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান রয়েল বেঙ্গল ট্যুরস জানায়, এই খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তাদের মুনাফা হয়েছিল প্রায় ১১ লাখ টাকা, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কমে ৭ লাখে নেমেছে।
রয়েল বেঙ্গল ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিদেশি পর্যটক টানতে হলে বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করতে হবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা বাড়ে।
নির্বাচন ঘিরে আশা ও শঙ্কা
ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যটক বৃদ্ধি পাওয়া বা কমে যাওয়া নির্ভর করে মূলত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও যোগাযোগব্যবস্থা—এই তিন বিষয়ের ওপর। কিন্তু দেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ব্যবসায়ীরা। আবার নির্বাচন উপলক্ষে অনেক প্রবাসী ও বিদেশি আসবেন দেশে। স্বাভাবিকভাবে তাঁরা বিভিন্ন স্থানে ঘুরতেও যাবেন। ফলে হোটেল-মোটেলগুলোর ব্যবসা বাড়বে, এমনটাও আশা করা হচ্ছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন আমাদের সিলেট প্রতিনিধি]