সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের শ্বশুর বাড়িতে হামলা-লুটপাট
Published: 6th, May 2025 GMT
কুমিল্লার চান্দিনায় সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের শ্বশুর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। পরে বাড়ি ঘেরাও করে অবরুদ্ধ রাখেন হামলাকারীরা। গতকাল সোমবার রাত ১২টার পর চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের মীরাখোলা মুন্সি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মুজিবুল হকের স্ত্রী হনুফা আক্তারের বড় ভাই আলাউদ্দিন মুন্সি ও নাছির উদ্দিন মুন্সির ঘরে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার পর যৌথ বাহিনীর অভিযানে চারজন আটক হয়।
আটক ব্যক্তিরা হলেন– চান্দিনা উপজেলার মীরাখোলা গ্রামের মো.
মামলায় অভিযোগ করা হয়, রাত ১২টার পর বাড়ির লোকজন ঘুমিয়ে পড়ার পর স্থানীয় কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ৭০-৮০ জন লোক এসে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। পরে খবর পেয়ে যৌথ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনার সঙ্গে জড়িত চারজনকে আটক করে। রাত আড়াইটার দিকে যৌথ বাহিনী চলে যাওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। দুপুরে চান্দিনা থানা-পুলিশ বাড়িতে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাটি স্থানীয় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) কর্মী সমর্থকরা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
আলাউদ্দিন জানান, তাদের ঘরের চারটি আলমারি ভেঙে ৩৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ৪টি টিভি, ২টি এসি, ৩টি ফ্রিজ, সিসিটিভি ক্যামেরাসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। তার শিশু সন্তানরা ভয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে ছিল। আতঙ্কে দুই শিশু অজ্ঞান হয়ে পড়ে। যারা ঘটনায় জড়িত তাদের অনেকেই এলডিপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
তবে চান্দিনা উপজেলা এলডিপি সভাপতি একেএম সামছুল হক মাস্টারের দাবি, হামলায় এলডিপির কোনো নেতাকর্মী জড়িত নন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ মিথ্যা। তারপরও যদি তাদের দলের কেউ জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হামলার নেতৃত্ব দেওয়া অভিযুক্ত কামাল জানান, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সাবেক রেলমন্ত্রীর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আলাউদ্দিন ও নাছির উদ্দিন অত্যাচার করতো। কেউ তাদের কথার অবাধ্য হলে বাড়িতে ধরে নিয়ে মারধর করতো। কয়েকদিন আগেও তারা সরকারি টাকায় নির্মিত পাকা রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ উল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আলাউদ্দিন থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। মামলা এফআইআর করা হয়েছে। জড়িতদের অন্যদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক চান্দিনার মীরাখোলা গ্রামের মুন্সি বাড়িতে হনুফা আক্তার রিক্তাকে বিয়ে করেন। মুজিবুল হক কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের ৫ বারের সংসদ সদস্য। গত ৫ এপ্রিল বিকেলে মুজিবুল হকের নিজ বাড়িতেও হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আত্মগোপনে আছেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল টপ ট ম জ ব ল হক র র লমন ত র এলড প
এছাড়াও পড়ুন:
রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে ঢাকার আদালতের আদেশ
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনে (আরসিবিসি) থাকা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্ত করে ফেরত আনার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত এ আদেশ দেন।
গতকাল রোববার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, প্রায় ৯ বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার (৮ কোটি ১০ হাজার ডলার) বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ। ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক পাচারে জড়িত ছিল বলে সিআইডির আবেদনের ভিত্তিতে আদালত এ নির্দেশ দেন।
ছিবগাত উল্লাহ বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনার মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে দুই কোটি ডলার ফেরত আসে। আর আরসিবিসির মাধ্যমে ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৬৮ হাজার ডলার ফেরত পায় বাংলাদেশ। প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার অন্য উদ্যোগে ফেরত আসে। এখন আরসিবিসির কাছে পুরো ৮১ মিলিয়ন ডলারই ফেরত চাওয়া হচ্ছে, যেটা আদালত বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন।
আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে করা মামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, এর সঙ্গে সিআইডির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সিআইডির কাছে যে মামলা আছে, সে ব্যাপারে কাজ চলছে। সমাপ্তির পথে, খুব দ্রুতই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
আদালতের আদেশে বলা হয়, তদন্তে সংগৃহীত তথ্যপ্রমাণ এবং ফিলিপাইন সরকারের পাঠানো মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পর্যালোচনা করে প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে হ্যাকাররা অবৈধভাবে ৮১ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী বলেন, আদালতের আদেশ কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশের কপি (অনুলিপি) পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে টাকা দেশে ফেরত আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির তথ্য ১ দিন পর জানতে পারলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা ২৪ দিন গোপন রাখে। ৩৩তম দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়।
সিআইডির ভাষ্য, জাতিসংঘের কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম (ইউএনটিওসি), ফিলিপাইনের আইন এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) নির্দেশনার আলোকে এবং সর্বশেষ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার এখন ফিলিপাইনের সরকারের কাছ থেকে এই অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করবে।
সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা (মেসেজ) পাঠিয়ে ফেডে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপাইনের মাকাতি শহরে রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে।
অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়, ফিলরেম মানি রেমিট্যান্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি হচ্ছিল না। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস মিলছিল না।
২০২০ সালের ২৭ মে ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা ওই মামলায় অর্থ রূপান্তর, চুরি, আত্মসাতের অভিযোগে রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওই মামলা চালিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেন নিউইয়র্কের আদালত। তবে ব্যক্তিগত এখতিয়ার না থাকায় চারজন বিবাদীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এদিকে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১ কোটি ৯১ লাখ ডলার জরিমানা করে আরসিবিসিকে। ওই সময় করা এক মামলায় ফিলিপাইনের আদালত ২০১৯ সালে আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগিতোকে মুদ্রা পাচারের আট দফা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলায়ও তাঁকে আসামি করা হয়।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশেও একটি মামলা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা ওই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিটির সময় গত ৮ জুলাই আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী চলতি সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ দেওয়ার কথা।
এর আগে গত ১১ মার্চ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে ছয় সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি করে সরকার। এ কমিটিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্তকাজের অগ্রগতি, এ-সংক্রান্ত সরকারি অন্যান্য পদক্ষেপের পর্যালোচনা, এ ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এ জন্য ওই কমিটিকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় পরে আরও তিন মাস সময় বাড়ানো হয়।
পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা হলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের পরিচালক আলী আশফাক ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল হুদা।