সরকারকে মানবাধিকারের পরিসর বাড়াতে হবে
Published: 23rd, October 2025 GMT
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মানবাধিকার পরিসর বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা যে আহ্বান জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সেটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। রোববার পাঠানো যৌথ চিঠিতে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে নির্বিচার গ্রেপ্তার বন্ধ এবং গ্রহণযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার ও খারিজের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গায়েবি মামলা ও নির্বিচার গ্রেপ্তার হয়ে উঠেছিল শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরোধী মত দমনের অন্যতম রাজনৈতিক অস্ত্র। এটি ছিল দেশি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগের প্রধান একটি জায়গা। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও ঢালাও মামলা ও নির্বিচার গ্রেপ্তার মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে বড় একটি উদ্বেগের কারণ রয়ে গেছে। বিশেষ করে অসংখ্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে খুনের মামলা দেওয়া হয়েছে। আইন উপদেষ্টা নানা সময়ে ঢালাও মামলার প্রবণতাকে বিব্রতকর বলেছেন।
সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা একাধিকবার স্বীকার করেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে অনেকের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের মামলা পর্যালোচনা ও নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তির আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেই আশ্বাস কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কেননা, সরকারের ১৪ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও সাংবাদিকসহ অসংখ্য ব্যক্তি যথাযথ বিচারপ্রক্রিয়া ছাড়াই কারাগারে আটক আছেন। অভিযোগ আছে, জামিনের অধিকার থাকা সত্ত্বেও অনেককে তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে জামিন দেওয়া হয়নি। এটা নিশ্চিতভাবেই ন্যায়বিচারের মূলনীতির পরিপন্থী।
যৌথ চিঠিতে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে মৌলিক স্বাধীনতা পুনর্বহাল, আইন সংস্কার, গুম, অন্যান্য নিপীড়নের তদন্তসহ বেশ কিছু পদক্ষেপকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের ব্যাপারে জোর দিয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এটা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের জরুরি কর্তব্য বলে আমরা মনে করি। এর পাশাপাশি চিঠিতে জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে ও বিগত ১৫ বছরে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারিক প্রক্রিয়া যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখা যায়, তার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে (আইসিটি) প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে।
এইচআরডব্লিউ, সিপিজে, সিভিকাস, ফোরটিফাই রাইটস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার এবং ডিজিটাল অধিকার নিয়ে কাজ করে আসছে। বিগত সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে এই সংস্থাগুলো সব সময়ই সোচ্চার থেকেছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে তাদের পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমরা মনে করি।
ছয়টি সংস্থা তাদের চিঠিতে নিরাপত্তা খাতের সংস্কার যেমন র্যাব বিলুপ্তি, ডিজিএফআইয়ের সংস্কার, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বেসামরিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। একই সঙ্গে সামরিক বাহিনীকে বেসামরিক আদালত আইসিটির এখতিয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। মানবাধিকার কমিশনকে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে সংস্কার এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মতো নিপীড়নমূলক আইন সংস্কার অথবা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া আন্তর্জাতিক মান পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে তারা এগুলো সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছে।
আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক ছয় মানবাধিকার সংগঠনের পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করবে। নির্বাচনের আগে মানবাধিকার পরিসর বাড়ানোর দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবে। ঢালাও মামলায় নির্বিচার গ্রেপ্তার করার যে অভিযোগ উঠেছে, সরকারের উচিত সেগুলো পর্যালোচনা করা ও নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র আহ ব ন জ ন য় ছ ম নব ধ ক র স র জন ত ক সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
অর্থ আত্মসাতে ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপি’ জোট
রাজধানীর আগারগাঁও বাজার বণিক সমবায় সমিতির বৈদ্যুতিক সংযোগের হিসাব নম্বর-১৭০০৪৯৯০ অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮২৭ টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
কিন্তু সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি ওই অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিল বাবদ ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩৭৯ টাকা ব্যয় দেখিয়েছে। যা প্রকৃত পরিশোধের চেয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা বেশি। সমিতির সদস্যদের অভিযোগ, অতিরিক্ত বিল দেখিয়ে কমিটির নেতারা ওই টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
বিদ্যুৎ বিলের বাইরে নেতারা কুলখানি ও মিলাদ, আপ্যায়ন, প্রশাসনিক খরচ, অনুদান, সম্মানী ভাতা, মামলার খরচ, বিদ্যুতের মালামাল ক্রয় ও যাতায়াত বাবদ ব্যয় দেখিয়ে গত দুই অর্থবছরে অন্তত দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ মর্মে সমিতির সদস্যরা জেলা সমবায় কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। অনেক খাতে টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে, যেখানে সমিতির ব্যয়ের সুযোগ নেই এবং সদস্যদের অনুমোদনও নেওয়া হয়নি।
বিদ্যুৎ বিল বেশি দেখানোর সুযোগ নেই। কোনো কারণে অতিরিক্ত খরচ হলে তা সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে দেখানো হয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) যার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, সমিতির চার সদস্যের একটি চক্র বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।সমিতির সভাপতি এ বি এম নুরুল হক চৌধুরীসমিতির সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, বর্তমান কমিটির নেতারা ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় থেকেই সাধারণ সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ করছেন। প্রতিবাদ করলে সদস্যপদ বাতিল ও নানাভাবে অত্যাচার করা হয়। অতীতে এর মূলে ছিলেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগপন্থী নেতারা। বর্তমানে বিএনপিপন্থী নেতারা সক্রিয় এবং আওয়ামীপন্থীদের যোগসাজশে টাকা আত্মসাৎ চলছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সমিতির মার্কেট ভবনের নির্মাণকাজ চলছে নূরানী কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের মাধ্যমে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি দোকানের আকার প্রায় ৭০ বর্গফুট বা তার বেশি। কিছু দোকান একত্রে বড় আকারে তৈরি হচ্ছে। নকশা অনুযায়ী, দুটি বেজমেন্টসহ ভবনটি ১৩ তলার। বেজমেন্ট-২–এ পার্কিং, বেজমেন্ট-১–এ কাঁচাবাজার এবং নিচতলা থেকে দোকান থাকবে। মোট সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ৪৫৫টির বাইরে আরও অর্ধশত দোকান তৈরি হবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে অতিরিক্ত প্রায় দুই লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি এ বি এম নুরুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ বিল বেশি দেখানোর সুযোগ নেই। কোনো কারণে অতিরিক্ত খরচ হলে তা সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে দেখানো হয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) যার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, সমিতির চার সদস্যের একটি চক্র বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। প্রথম নিয়োগ করা কর্মকর্তাকে নিয়ে তাঁদের আপত্তির কারণে অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তা এইচ এম সহিদ-উজ-জামান ‘বিএনপি-আওয়ামী’ জোটসাধারণ সদস্যদের টাকা আত্মসাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সমিতির সদস্যরা। অতীতে কমিটিতে থাকা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ করতেন। এখন এ কাজে তাঁদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন, যোগসাজশ করছেন কমিটিতে থাকা বিএনপিপন্থী নেতারা। ফলে পটপরিবর্তনের পর সদস্যরা এসব নিয়ে প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
বাজারের বর্তমান কমিটি নেতারা ২০২৩ সালের মার্চে নির্বাচিত হয়েছেন। ওই সময় ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফোরকান হোসেন এবং থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসফিকুর রহমানের (উজ্জ্বল) প্রভাব ছিল। তাঁদের প্রভাবে সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন এ বি এম নুরুল হক চৌধুরী, যিনি শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। সাধারণ সম্পাদক আব্দুন নুর-শাহী এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক মামুন হোসেন ছিলেন থানা কমিটির সদস্য।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর কমিটিতে থাকা বিএনপিপন্থী নেতারা সক্রিয় হন। এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহসভাপতি মো. নুরুজ্জামান। তাঁর ছেলে মো. মনিরুজ্জামান ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির শেরেবাংলা নগর ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক। আছেন শেরেবাংলা নগর থানা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্য সমিতির পরিচালক শাহ আলম। বিএনপিপন্থী আরও তিন পরিচালক—শাহাদাত হোসেন, আতাউল কবির ও আবু সাঈদও রয়েছেন।
প্রশ্রয় ও যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করছেন থানা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্য পরিচালক শাহ আলম। তিনি বলেছেন, গত ১৬ বছর এতটাই নির্যাতিত হয়েছেন যে তিনি দেশেও থাকতে পারেননি। তাঁদের কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেননি, দেবেন না। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ পদে থাকার বিষয়ে সমিতির সভাপতি এ বি এম নুরুল হক চৌধুরী বলেন, বাজারের স্বার্থে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁ রাখতেই ওই পদ গ্রহণ করেছিলেন। নির্বাচনে তাঁর বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী থাকায় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের সহযোগিতায় কোষাধ্যক্ষ পদে ছিলেন।
সদস্যদের অভিযোগ, অতীতে সমিতি থেকে কারও কুলখানির আয়োজন করা হয়েছে বলে সদস্যরা কেউ জানেন না। এ ছাড়া কুলখানি আয়োজন করবেন মৃত ব্যক্তির পরিবার, স্বজন ও সন্তানেরা। কোনো মিলাদ মাহফিলের বিষয়েও সদস্যরা জানেন না।কুলখানি, মিলাদ, অনুদানে ব্যয়বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতারা কুলখানি, মিলাদ মাহফিল ও অনুদান বাবদ সমিতির টাকার ব্যয় দেখিয়েছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওই খাতে ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৩ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সমিতি থেকে অনুদান দেওয়া হয় প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। আর ২০২৪-২৫–এ খাতে বরাদ্দ ছিল ছয় লাখ টাকা।
সদস্যদের অভিযোগ, অতীতে সমিতি থেকে কারও কুলখানির আয়োজন করা হয়েছে বলে সদস্যরা কেউ জানেন না। এ ছাড়া কুলখানি আয়োজন করবেন মৃত ব্যক্তির পরিবার, স্বজন ও সন্তানেরা। কোনো মিলাদ মাহফিলের বিষয়েও সদস্যরা জানেন না। মিলাদ-কুলখানিতে অর্থ ব্যয়ের জন্য সদস্যরা অনুমোদনও দেননি। তাই ওই সব খাতে সদস্যদের আমানতের টাকা ব্যয়ের সুযোগ নেই। সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ করেই ওই তিন খাতে ব্যয় দেখিয়েছেন সমিতির নেতারা।
অভিযোগকারী আরেক সদস্য ইসফাকুল কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির নেতারা সদস্যদের উপস্থিতির স্বাক্ষরকে প্রস্তাব অনুমোদনের স্বাক্ষর দেখিয়ে ভুয়া প্রতিবেদন দিয়েছেন। আসলে অধিকাংশ সদস্য আত্মসাতের বাজেট সমর্থন করেননি।
ছয় খাতের ব্যয় নিয়েও আপত্তিসদস্যদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতারা ছয় খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় দেখিয়েছেন। খাতগুলো হলো আপ্যায়ন, প্রশাসনিক, সম্মানী ভাতা, মজুরি, মামলা পরিচালনা ও যাতায়াত। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সম্মানী ভাতায় ৬ লাখ ৯৪ হাজার, আপ্যায়নে ৬ লাখ ৩৬ হাজার এবং প্রশাসনিক খরচে ৫ লাখ ২২ হাজার টাকা। কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-বোনাস দেওয়ার পরও আলাদা করে মজুরি বাবদ দেড় লাখ ও যাতায়াতে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। অথচ সমিতির কাজের প্রয়োজনে সর্বোচ্চ এক-দুই কিলোমিটার দূরের সংশ্লিষ্ট সমবায় কিংবা গণপূর্তের কার্যালয়ে যাওয়া লাগে।
অভিযোগকারীরা বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে নতুন মার্কেট ভবনের নির্মাণকাজ শুরুর পর সব দায়িত্ব গণপূর্ত ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। সদস্যরা কিস্তিতে সেই টাকা পরিশোধ করছেন। তাই আপ্যায়ন কিংবা প্রশাসনিক খরচ ঠিকাদারের বহন করার কথা। এসব খাতে দেখানো বিপুল ব্যয় মূলত আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ওই ছয় খাতে আগের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি, অর্থাৎ ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সম্মানী ভাতায় ২০ লাখ এবং আপ্যায়ন ও মামলা খরচে ১০ লাখ করে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। প্রথম নিয়োগ করা কর্মকর্তাকে নিয়ে তাঁদের আপত্তির কারণে অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তা এইচ এম সহিদ-উজ-জামান তদন্ত চলছেসদস্যদের অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন ৬ অক্টোবর দেওয়ার কথা ছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকা জেলা সমবায় কার্যালয়ের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির জানান, তাঁর অসুস্থতার কারণে আরেকজন কর্মকর্তা কাজটি করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ওই কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরানো হলে তিনি নতুনভাবে কাজ শুরু করেছেন। সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে আয়-ব্যয়ের সব তথ্য চাওয়া হয়েছে। তথ্য পেলে সেগুলো যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তা এইচ এম সহিদ-উজ-জামান প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। প্রথম নিয়োগ করা কর্মকর্তাকে নিয়ে তাঁদের আপত্তির কারণে অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।