সেনাবাহিনীর জবাব ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে: পাকিস্তান আইএসপিআর প্রধান
Published: 7th, May 2025 GMT
পাকিস্তানে ভারতের হামলাকে অপ্ররোচিত ও কাপুরুষোচিত আখ্যা দিয়ে দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেছেন, গত রাতে কাপুরুষ ভারত পাকিস্তানের ছয়টি স্থানে ২৪টি হামলা চালিয়েছে। এঘটনায় আটজন নিরীহ নাগরিক শহীদ হয়েছেন।
বুধবার সকালে এক ব্রিফিংয়ে পাক আইএসপিআর মহাপরিচালক এসব কথা বলেন। খবর দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন
তিনি জানান, গভীর রাতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একাধিক হামলায় পাকিস্তানের বিভিন্ন বেসামরিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত আটজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৩৩ জন আহত হয়েছেন।
পাক আইএসপিআর মহাপরিচালক বলেন, শুধু পূর্ব আহমদপুর এলাকায় পাঁচজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন কন্যাশিশুও রয়েছে। মুজাফফরাবাদে বিলাল মসজিদ লক্ষ্যবস্তু করা হলে একজন শিশু আহত হয় এবং মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোটলিতে আব্বাস মসজিদ এবং মুরিদকেতে আরও একটি মসজিদে হামলা চালানো হয়, যেখানে একজন নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন।
তিনি আরও জানান, সিয়ালকোটের নিকটবর্তী কোটলি লোহারান গ্রামে একটি কামানের গোলা আঘাত হানে এবং শাকরগড়ে একটি ঔষধালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আইএসপিআর ডিজি আরও বলেন, পাক সেনাবাহিনী এই ভিত্তিহীন ভারতীয় আগ্রাসনের জবাবে দৃঢ় ও সমন্বিত প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। সকল গণমাধ্যমকে আজ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে নিয়ে যাওয়া হবে, যাতে গোটা বিশ্ব ভারতের নগ্ন আগ্রাসনের সাক্ষী হতে পারে।
পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর জবাব ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
এদিকে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করেছে। এর আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের নয়টি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী বুধবার এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
বিবৃতিতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী জানায়, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের অভিযানে পাকিস্তানের ৯টি জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর অবকাঠামো লক্ষ্য করা হয়েছে। পাকিস্তানের সেনা সদস্যদের ওপর কোনো হামলা চালানো হয়নি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাবিতে বিক্ষোভে মেয়েদের ভিডিও করার সময় কলেজছাত্র আটক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবি প্রদর্শনের প্রতিবাদ চলাকালে মেয়েদের ভিডিও করার অভিযোগে এক কলেজছাত্রকে আটক করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে সোপর্দ করা হয়। কবি নজরুল সরকারি কলেজের ওই শিক্ষার্থীকে আটকের সময় ছাত্রশিবিরের কর্মীরা বাধা দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। প্রক্টরের উপস্থিতিতে ওই কলেজছাত্রের মুঠোফোন ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনি উসামা বিন লাদেনসহ কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তির পোস্ট শেয়ার করেছেন। ফেসবুক মেসেঞ্জারে ‘ইসলামী ছাত্রশিবির, চৌমুহনী কচুয়া’ নামের একটি গ্রুপের সক্রিয় সদস্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রক্তবীজ অর্ক বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে টিএসসিতে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ দেখি এক লোক মেয়েদের দিকে মোবাইল তাক করে জুম করে ইনঅ্যাপ্রোপিয়েট (অশোভন) ভিডিও করছে। আশপাশে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই লোকটি দৌড় দিয়ে সোজা টিএসসির ভেতরে ঢুকে পড়েন। আমরাও পেছনে যেতে চাই। কিন্তু পরে দেখি, সেখানে গুপ্ত সংগঠনের কিছু ছোট ছোট টিম আমাদের টিএসসির ভেতর ঢুকতে দিচ্ছে না।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অর্ক লিখেন, ‘প্রায় ৪ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি মোট ৬ বার নিজের নাম বদলায়, ৪টিরও বেশি ফেসবুক আইডি দেখায়।’
ছাত্রশিবিরের কর্মীদের বিরুদ্ধে ওই কলেজছাত্রকে আড়াল করার অভিযোগ তুলে অর্ক তাঁর পোস্টে আরও লিখেন, ‘প্রক্টর স্যার ওই ব্যক্তির মেসেঞ্জারে দেখলেন, “ইসলামী ছাত্রশিবির- চৌমুহনী কচুয়া” গ্রুপে সে একেবারে অ্যাকটিভ সদস্য। ঘটনাস্থলে থাকা ছাত্রশিবিরের লোকজন তাকে আড়াল করতে গেল কেন?’
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিয়ান ফারুক ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘নারী নিপীড়কদের শেল্টার (আশ্রয়) দেয় কারা? টিএসসিতে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়। এই প্রতিবাদের বিপরীতে টিএসসির গেইটের মুখে শিবিরেরাও স্লোগান দিতে থাকে। এমন এক মুহূর্তে শিবিরের এক কর্মী আমাদের প্রতিবাদের ভেতর চলে এসে নারীদের আপত্তিকর ভিডিও নিতে শুরু করে। ধরা পড়ার পর সে জোরপূর্বক পালিয়ে যায়। পালিয়ে শিবিরের মিছিলে ঢুকে পড়ে এবং টিএসসির ভেতর শেল্টার নেয়।’
ওই ব্যক্তিকে আটক করতে গেলে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা বাধা দেন অভিযোগ করে নাহিয়ান ফারুক আরও লিখেন, ‘একজন অপরাধীকে তারা টিএসসিতে ঢুকতে দিলেও, আমাদেরকে টিএসসিতে ঢুকতে বারবার বাধা দেয়। আমরা জোরপূর্বক ভেতরে যাই এবং প্রক্টরসহ শিবিরের ফরহাদের (ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ) সাথে কথা হয়। ঐ ঘটনার পর সেই হ্যারাসার (নিপীড়ক) ধরা পড়ে।’
প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলেটা কবি নজরুল কলেজে পড়ে, চাঁদপুরে বাড়ি। আমার কাছে একটু বেকুব টাইপের মনে হয়েছে। তবে ইসলামিক এটা বোঝা যায়। আমি তখন ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদেরকেও বলেছি, আমার কাছে দুটো অপশন— হয় পুলিশে দেওয়া, না হয় অভিভাবকসহ মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া।’
প্রক্টর আরও জানান, ‘পরে ওর দুজন মামাতো ভাই ও একজন ছোটবেলার বন্ধু আসে। আমরা প্রাথমিকভাবে মুচলেকা নিয়েছি। ওর ছবি নিয়েছি আর ফোন রেখে দিয়েছি। ওর মুচলেকার কপি চাঁদপুর, শাহবাগ ও চকবাজারের (সে যেখানে থাকে) থানায় পাঠাব এবং জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করা হবে। পরে যদি এমন কোনো কিছু করে, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ সরাসরি ব্যবস্থা নেবে।’ তাঁর পরিবারের সদস্যরা এসে তাঁকে নিয়ে গেছেন বলেও জানান প্রক্টর।