চাঁদপুরে পরিত্যক্ত কক্ষে চলছে আরএনবি অফিসের কার্যক্রম
Published: 20th, June 2025 GMT
চাঁদপুরে বিদ্যুৎ বিভাগের পরিত্যক্ত ট্রেন নাইটিং কক্ষে চলছে আরএনবি অফিস কার্যক্রম। যেখানে ছাপড়ি ঘরের মতো কক্ষটিতে আরএনবি চাঁদপুর ইউনিটে কর্মরত সদস্যরা অত্যন্ত বাজে পরিবেশে কাজ চালিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের বড়স্টেশন এলাকায় বহু পুরাতন ও জরাজীর্ণ কক্ষটিতে টিনের চালা দিয়ে বৃষ্টির পানি ভিতরে পড়ে অফিসের সরকারি মূল্যবান কাগজ পত্র নষ্ট হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, যাত্রীগণের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বা আরএনবি কর্মরত আছে। এ জেলা চাঁদপুর হতে বর্তমানে আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি চট্টগ্রামে আসা যাওয়া করছে। ট্রেনগুলোতে যেন নিরাপদে যাত্রীসেবা নিশ্চিত হয়, সে বিষয়গুলোই তদারকি করছে আরএনবি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য জানান, চাঁদপুরে আরএনবি সদস্যের কেউ কেউ রেলওয়ে টিকেট কালোবাজারি, বড়স্টেশনের ভ্রাম্যমাণ দোকান হতে উৎকোচ গ্রহণসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার তথ্য প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। তবে এগুলো আদৌ কতটা সত্য সেটা তদন্তে সংশ্লিষ্টরাই ভালো বলতে পারবেন। আমরা চাই আরএনবি সদস্যদের কাজে আরো গতি ফিরুক।
তথ্য মতে, চাঁদপুরে আরএনবি কার্যালয় পরিচালিত হচ্ছে একজন এএসআই এর দায়িত্বে। যদিও এখানে ২০ জন সদস্য থাকার কথা হলেও লোকবল রয়েছে মাত্র ৮ জন। এরমধ্যে এএসআই এক জন, হাবিলদার এক জন এবং সিপাহী রয়েছে ছয় জন। তাই ঘাটতি পূরণে ঈদসহ বিশেষ সময়ে চাহিদানুযায়ী আনসার সদস্য এনে সাময়িক দায়িত্ব পালন করানো হয়।
আরএনবি চাঁদপুরের হাবিলদার ইমাম হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, “আমরা একটা জরাজীর্ণ ভূতুড়ে পরিবেশে এখানে ৮ জন দায়িত্ব পালন করছি। বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে অনেক সময় স্টেশন মাস্টারের অফিসে আরএনবি চাঁদপুরের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।”
এ বিষয়ে আরএনবি চাঁদপুরের দায়িত্বে থাকা এএসআই শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমি পার্শ্ববর্তী জেলা কুমিল্লার ছেলে। এখানে দায়িত্বে আসার পর পরই রেলওয়েতে চুরি প্রতিরোধ, মামলা দেওয়া, টিকেট কালোবাজারি রোধে কাজ, ছাদ ও ইঞ্জিনে যেন কেউ না বসে, পাথর নিক্ষেপ না করে সেসব বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি। বড়স্টেশনে ভ্রাম্যমাণ দুই-তিনশ’ দোকান হতে কে বা কারা ২০/৩০ টাকা করে উৎকোচ নেয় তার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “দায়িত্ব যখন যেখানে যেকোন অবস্থাতেই পালন করতে সমস্যা নেই। তবে দাপ্তরিক কাজেরও একটা সুন্দর পরিবেশ থাকলে মানসিকভাবে ভালো লাগে। এখন যেখানে রয়েছি, তাতে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি পড়ে জরুরি কাগজপত্রসহ সব নষ্ট হয়ে যায়। তাই স্টেশন বা প্লাটফরম সংলগ্ন এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে আরএনবি অফিস ও সকল সুবিধাদিসহ মান সম্মত অন্তত ১৫ জন আরএনবি সদস্যের বসবাস উপযোগী নতুন অফিস ও ব্যারাক নির্মাণে ঊর্দ্ধতনরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে রেল সম্পদ রক্ষা ও নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালনে সহায়ক হবে।”
এ বিষয়ে আরএনবি’র পূর্বাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট মো.
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ঝুলে থাকা সেই তরুণকে গুলি করেছিলেন পুলিশের ২ সদস্য
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলায় আজ মঙ্গলবার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম কিবরিয়া খান। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের সময় রামপুরা থানায় কর্মরত ছিলেন। এখন বাড্ডা থানায় কর্মরত।
জবানবন্দিতে গোলাম কিবরিয়া বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের সময় রামপুরায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের রড ধরে ঝুলে থাকা এক তরুণকে গুলি করেছিলেন এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার। এ ঘটনার ভিডিও তখন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। তারিকুল তখন রামপুরা থানায় আর চঞ্চল রামপুরা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।
এসআই গোলাম কিবরিয়া জবানবন্দিতে বলেন, সেই ভিডিওকে কেন্দ্র করে গত বছরের ২৯ জুলাই খিলগাঁও অঞ্চলের তৎকালীন এডিসি রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে রামপুরা থানায় একটি সভা হয়। সেই সভায় ভিডিওটি সবাইকে দেখানো হয়। সেখানে উপস্থিত সবাই ভিডিওটি দেখে এসআই তারিকুল ও এএসআই চঞ্চলকে শনাক্ত করেন।
পরে জানা যায়, ওই তরুণের নাম আমির হোসেন। তিনি তখন আফতাবনগরে একটি দোকানের কর্মী ছিলেন। তাঁর পায়ে ছয়টি গুলি লেগেছিল। তিনি বেঁচে আছেন।
জবানবন্দিতে গোলাম কিবরিয়া বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই তিনি থানায় ছিলেন। তখন থানার বেতার অপারেটরের মাধ্যমে জানতে পারেন হাবিবুর রহমান (ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার) আন্দোলন দমনে নিলিং পজিশনে (হাঁটু গেড়ে বসে) গিয়ে চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত বছরের ১৯ জুলাই (শুক্রবার) জুমার নামাজের পরপরই থানার আশপাশের এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা জমায়েত হতে থাকে। সেই পরিস্থিতিতে থানার বেতার অপারেটর আব্দুর রহমান বেতার বার্তার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেন। তখন ওসি বিটিভি ভবন এলাকায় অবস্থান করছিলেন। সেই বার্তা পেয়ে খিলগাঁও অঞ্চলের এডিসি (তৎকালীন) রাশেদুল ইসলাম ও ওসি (তৎকালীন) মশিউর রহমান বিজিবির এপিসি নিয়ে সোয়া দুইটা থেকে আড়াইটার দিকে রামপুরা থানায় আসেন। সেই পরিস্থিতিতে তাঁদের (রাশেদুল ও মশিউর) নির্দেশনায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়।
এসআই গোলাম কিবরিয়া জবানবন্দিতে বলেন, সেই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ফলে বনশ্রী জামে মসজিদের পাশে নাদিম নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ছাড়া রামপুরা থানার পার্শ্ববর্তী রাস্তায় মায়া ইসলাম নামের একজন নিহত এবং মুসা নামের এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয় বলে জানতে পারেন।
গত বছরের ২১ জুলাই কিংবা ২২ জুলাই তৎকালীন ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রামপুরা থানায় এসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ভূমিকা রাখার জন্য ওসিকে এক লাখ টাকা নগদ পুরস্কার দেন বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন গোলাম কিবরিয়া।
পুলিশের আরেক সদস্য কনস্টেবল (এখন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় কর্মরত) আবু বকর সিদ্দিকও এ মামলায় আজ জবানবন্দি দিয়েছেন।
এই মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, এসআই তারিকুল, এএসআই চঞ্চলসহ পাঁচজন আসামি।
এ মামলায় আজ কনস্টেবল আবু বকর সিদ্দিক নামের আরও একজন জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলাটির পাঁচ আসামি হলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান, সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার। এর মধ্যে চঞ্চল কারাগারে। বাকি চারজন পলাতক।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।