পুলিশের ধাওয়ায় মৃত্যু, ১০ মাস পর হত্যা মামলায় বেরোবি শিক্ষক গ্রেপ্তার
Published: 20th, June 2025 GMT
পুলিশের ধাওয়ায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার ১০ মাস পর হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহামুদুল হককে। তার মুক্তির দাবিতে শুক্রবার রংপুরে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
গত ৩ জুন হাজিরহাট থানায় মামলাটি করেন ছমেছের স্ত্রী আমেনা বেগম। স্বামীকে নজিরের হাটে কুপিয়ে হত্যা করার অভিযোগ আনেন।
এজাহারে বলা হয়, রংপুরের পুলিশ, প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা ২ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় ছমেছকে কুপিয়ে জখম করে। রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মাথার পেছনে ছুরি দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধা ছিল।
হাজিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আল মামুন শাহ মামলা নথিভুক্ত করে তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব নিয়েছেন। এ বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
এ বিষয়ে জানতে ছমেছের বাড়ি গেলে স্ত্রী আমেনা বেগম জানান, তার স্বামীকে ধরতে ২ আগস্ট পুলিশ এলে তিনি দোকান থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারান। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল না। কেন হত্যা মামলা করলেন? প্রশ্নের উত্তরে বলেন, পুলিশ তাকে ডেকে নিয়ে কাগজে সই করতে বলেছে। তিনি সই করেছেন। তিনি কারো নামে মামলা করেননি।
ছমেছের ছেলে আশিকুর রহমান বলেন, তার বাবাকে পুলিশ ধরতে এলে দোকান থেকে নেমে পালাতে গিয়ে মারা গেছেন। যারা বাবাকে ধরতে এসেছিল, তিনি তাদের বিচার চান। তিনি স্বীকার করেন, তার বাবা হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।
মূলত গত ২ আগস্ট স্থানীয় ওয়ার্ড জামায়াতের আমির নাছির উদ্দিনকে ধরতে পুলিশ গিয়েছিল। এর সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, এ ঘটনায় হত্যা মামলা করা অন্যায়। নিরীহ মানুষকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এসময় তারা বলেন, ভুয়া মামলায় শিক্ষক মাহমুদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাহমুদুলের মুক্তিসহ তিনদফা দাবি জানান তারা। এগুলো হল বেরোবি শিক্ষক মাহামুদুল হককে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে হবে। তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে হবে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা আগামী ৩ কার্য দিবস সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করবে। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে থানা ঘেরাও করা হবে বলে হুশিয়ার করেন তারা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপি নেতা–কর্মীদের মানববন্ধন, স্মারকলিপি
কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) সংসদীয় আসনকে ভেঙে ত্রিখণ্ডিত করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রকাশ করা খসড়া তালিকা বাতিল এবং বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।
‘কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা পুনরুদ্ধার বাস্তবায়ন কমিটি’–এর ব্যানারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীর অনুসারী বিএনপির নেতা–কর্মীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপি, কুমিল্লা মহানগর দক্ষিণের ৯ ওয়ার্ড ও লালমাই উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের কয়েক শ নেতা–কর্মী অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতার হোসাইন, সদস্যসচিব ওমর ফারুক চৌধুরী, লালমাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাসুদ করিম, সদস্যসচিব ইউসুফ আলী মীরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এ সময় ‘নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত, মানি না, মানব না’, ‘আসন পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত, বাতিল করো, করতে হবে’, ‘সাবেক কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা, ফিরিয়ে দাও, দিতে হবে’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী বিএনপি নেতা–কর্মীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বৃহত্তর কুমিল্লা সদর দক্ষিণ এলাকা নিয়ে সাবেক কুমিল্লা-৯ আসনটি ফিরিয়ে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের এই খসড়া বাতিল করতে হবে। যদি আসন ফিরিয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতার হোসাইন বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ও পৌরসভা (বর্তমানে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলা এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ড) নিয়ে বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসনের সীমানা ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরী এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে মনিরুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসনটি বিলুপ্ত করে কুমিল্লা-৬, কুমিল্লা-৮ ও কুমিল্লা-১০ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। চার থেকে পাঁচ দফা পরিবর্তনের পর বর্তমানে কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসনে রয়েছে বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসনটি। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন, আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু সেই দাবি মেনে নেওয়া হয়নি।
আখতার হোসাইন বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যেখানে কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহাল করার কথা, সেখানে সেটি না করে কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসনকে ভেঙেচুরে ত্রিখণ্ডিত করে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ২০০৮ সালের মতো এবারও ষড়যন্ত্র করে মনিরুল হক চৌধুরীকে আটকানোর জন্য ইসি এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
লালমাই উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ইউসুফ আলী মীর বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগপর্যন্ত কুমিল্লায় ১২টি আসন ছিল, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় একটি আসন কমিয়ে কুমিল্লায় হযবরল অবস্থার সৃষ্টি করেছে ইসি। সেই থেকেই তাঁরা কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন। ইসির ঘোষিত খসড়া তালিকা বাতিল করতে হবে। সেটি না করা হলে নেতা–কর্মীরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লা-১০ আসনের নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত খসড়া বাতিল এবং বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে একটি স্মারকলিপি পেয়েছেন। এটি ইসি সচিবের কাছে পাঠানো হবে।