পোশাকশ্রমিক মাজহারুল ইসলাম। স্ত্রী পারভীন আক্তার ও দেড় বছরের ছেলে আয়ান ইসলামকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরের মোগরখাল এলাকায় রাশিদা আক্তারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। গত ২৫ এপ্রিল রাতে বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে পারভীন, আয়ান, তাসলিমা আক্তার, তাঁর দুই মেয়ে তানজীলা আক্তার ও সামী আক্তার মারা যান।
স্ত্রী-সন্তানের মৃত্যুতে মাজহারুলের জীবন ওলটপালট হয়ে গেছে। পাগলপ্রায় মাজহারুল বলছিলেন, ‘আমার সব শেষ অইয়া গেছে। আমি এখন কী নিয়া বেঁচে থাকব? আল্লাহ আমার কী পরীক্ষা নিচ্ছে? আমি আর সইতে পারছি না।’

গত ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় মহানগরের ডেগেরচালা এলাকায় বিস্ফোরণে ঘুমন্ত অবস্থায় দগ্ধ হন পোশাকশ্রমিক হারিজ উদ্দিন, তাঁর স্ত্রী আয়েশা খাতুন ও ছেলে মাঈনুল ইসলাম। রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করলে কয়েক দিন পর তিনজনই মারা যান।
সুনামগঞ্জের তাহেরপুরের ঘাগড়া এলাকার বাসিন্দা হারিজ উদ্দিন পরিবার নিয়ে ডেগেরচালায় ভাড়া থাকতেন। এ বিস্ফোরণের কিনারা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সম্প্রতি গাজীপুরে দুটি ঘটনাতেই আটজনের মৃত্যু হয়। গত বছরের ১৩ মার্চ বিকেলে কালিয়াকৈর তেলিরচালা এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধ হন ৩২ নারী-পুরুষ ও শিশু। পরে একে একে দগ্ধদের মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়।

২০২৩ সালের আগস্টে মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকায় ঘরে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডে মারা যান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার মিনারুল ইসলাম ও তাঁর বাবা ফরমান আলী। ওই বছরের গোটার দিকে গাজীপুরের মারিয়ালি কলাবাগান এলাকায় ছেলের বাসায় বেড়াতে এসে রান্না করার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান মমতাজ বেগম।
গাজীপুর জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই গ্যাসের বিস্ফোরণ ঘটলেও ঘটনা কিংবা হতাহতের সঠিক পরিসংখ্যান নেই স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কাছে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ 
মামুন সমকালকে জানান, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা, আহত ও নিহতের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। অনেক সময় ঘটনা ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয় না। তবে গত এক বছরে জেলায় গ্যাস থেকে অগ্নিকাণ্ডের অন্তত ৬০টি ঘটনা ঘটলেও কোনো তদন্ত কমিটি হয়নি বলে জানান তিনি।
দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ কিছু পরামর্শ দেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন। তিনি বলেন, সিলিন্ডার ব্যবহারে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। অনুমোদিত ও মানসম্মত সিলিন্ডার, সংযোগ পাইপ ভাল্ব ও রেগুলেটর ব্যবহার করতে হবে। চুলা থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে ঠান্ডা ও বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে সিলিন্ডার রাখতে হবে। সিলিন্ডার লিকেজ হয়েছে কিনা, নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। সবাই সচেতন থাকলে প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এল ক য় ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

চার শতাধিক প্রোগ্রামার নিয়ে রাজধানীতে ‘হিরোইউনিয়ন’

সারাদেশের চার শতাধিক প্রোগ্রামারকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্যতিক্রমী মিললমেলা। শুক্রবার রাজধানীর আইডিইবি অডিটোরিয়ামে দিনব্যাপী এ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। ‘হিরোইউনিয়ন’ শীর্ষক এ আয়োজনে সারাদেশের উদীয়মান প্রোগ্রামিং প্রফেশনালসরা অংশ নেয়। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এডটেক প্রতিষ্ঠান ‘প্রোগ্রামিং হিরো’।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন প্রোগ্রামার ও প্রোগ্রামিং হিরো–এর প্রধান নির্বাহী (সিইও) ঝংকার মাহবুব। আরও উপস্থিত ছিলেন সফটওয়্যার কোম্পানি ব্রেইন স্টেশন ২৩–এর সিইও রাইসুল কবির, ব্র্যাক আইটিস-এর সিনিয়র টেকনোলজি অ্যাডভাইজার শাহ আলি নেওয়াজ তপুসহ অন্যান্য প্রযুক্তিবিদ ও ইন্ডাস্ট্রি লিডাররা।

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ঝংকার মাহবুব বলেন, সামনে যতই এআই টুল আসুক না কেন, আমাদের সেটিকে কাজে লাগিয়ে নিজের কোডিং স্কিল ও প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে নিতে হবে। লিংকডইনের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে— গিটহাব কো-পাইলটের মতো এআই টুল ব্যবহার করলে একজন প্রোগ্রামারের কোড লেখার গতি গড়ে ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। তবে কোড লেখা যত সহজই হোক না কেন, ফিচার টেস্টিং, বাগ ফিক্সিংয়ের জন্য দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের প্রয়োজন থেকেই যাবে। তাই প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে, এআইকে সহযোগী করে, নিজেদের দক্ষতা অব্যাহতভাবে বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানের শেষে গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের মাঝে সার্টিফিকেট ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ইন্টার‌অ্যাক্টিভ লার্নিং অ্যাপের মাধ্যমে ‘প্রোগ্রামিং হিরো’র যাত্রা শুরু হয়। এতে মজার ছলে প্রোগ্রামিং শেখার সুযোগ পেত শিক্ষার্থীরা। পরে এডটেক ইন্ডাস্ট্রির প্রচলিত কাঠামো থেকে বের হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডেড লার্নিং এনভায়রনমেন্ট গড়ে তোলে প্রতিষ্ঠানটি; যেখানে একজন শিক্ষার্থী শূন্য থেকে শুরু করে জব–রেডি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ওঠার জন্য ধারাবাহিকভাবে উন্নত ট্রেনিং পেয়ে থাকে। গত পাঁচ বছরে প্রোগ্রামিং হিরো ইতিমধ্যে ৬০টিরও বেশি দেশে ২ হাজার ২৬০ কোম্পানিতে ৪ হাজার ৭০০ জনের শিক্ষার্থীকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ