যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল কর্মীদের ব্যাপকভাবে ছাঁটাই ‘আসন্ন’ এবং তা দুই দিনের মধ্যে শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। গত সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার অচলাবস্থার (শাটডাউন) কবলে পড়ার ঘটনায় দুই দলের আইনপ্রণেতারা একে অপরকে দোষারোপ করছেন।

গতকাল বুধবার থেকে এ শাটডাউন শুরু হয়। আগের দিন মধ্যরাতের মধ্যে নতুন সরকারি ব্যয় বা অর্থায়ন পরিকল্পনায় একমত হতে ব্যর্থ হন কংগ্রেসের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্যরা।

এখন শাটডাউন নিয়ে কোনো পক্ষই আপস করতে আগ্রহী নয়—এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বুধবার শাটডাউন শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা কাটিয়ে ওঠার প্রস্তাবের ওপর এক ভোটাভুটি ব্যর্থ হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী প্রচেষ্টা আগামীকাল শুক্রবার চালানো হবে।

কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের অধিবেশন এখন স্থগিত আছে। এতে বর্তমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এ অবস্থায় লাখো কর্মী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির বিলিয়ন বিলিয়ন (শত শত কোটি) ডলার ক্ষতি হতে পারে।

গতকাল বিকেলে হোয়াইট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স নজিরবিহীনভাবে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটের সঙ্গে উপস্থিত হন। তিনি বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের ‘রাজনৈতিক খেলা’ খেলার অভিযোগ তোলেন।

ভ্যান্স বলেন, ‘তাঁরা সত্যি যদি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ওপর এর (শাটডাউন) প্রভাব নিয়ে এতটা চিন্তিত হন, তবে তাঁদের যা করা উচিত তা হলো, সরকারের দরজা আবার খুলে দেওয়া। আমরা কীভাবে কাজ করছি, সে বিষয়ে অভিযোগ না করা।’

এদিকে লেভিট জানান, ফেডারেল সরকারে ব্যাপক ছাঁটাই চলতি সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই শুরু হতে পারে। সাংবাদিকেরা সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘দুই দিনের মধ্যে, একেবারে শিগগিরই।’ তিনি আরও হালনাগাদ তথ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

তাঁরা (ডেমোক্র্যাটরা) সত্যি যদি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ওপর এর (শাটডাউন) প্রভাব নিয়ে এতটা চিন্তিত হন, তবে তাঁদের যা করা উচিত তা হলো, সরকারের দরজা আবার খুলে দেওয়া। আমরা কীভাবে কাজ করছি, সে বিষয়ে অভিযোগ না করাজেডি ভ্যান্স, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট

‘কখনো কখনো এমন কিছু করতে হয়, যা করতে চাই না’, বলেন লেভিট। তাঁর দাবি, ‘এ অবস্থায় আমাদের ঠেলে দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরাই।’

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই সতর্ক করেছিলেন, শাটডাউন দীর্ঘায়িত হলে তিনি ‘ডেমোক্র্যাটদের বিষয়ে’ স্থায়ী কাটছাঁটের সুযোগ পাবেন।

গতকাল ট্রাম্প প্রশাসন আরও জানায়, নিউইয়র্ক শহরের অবকাঠামো প্রকল্পে ১৮ বিলিয়ন (১ হাজার ৮০০ কোটি) ডলারের অর্থায়ন আটকে রাখা হবে। এ শহর প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতাদের নির্বাচনী ঘাঁটি।

হোয়াইট হাউসে ভ্যান্সের মন্তব্য ছিল দুই দলের মধ্যকার তীব্র দোষারোপের সাম্প্রতিকতম পর্ব। এর আগে সিনেটের শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য চাক শুমার অভিযোগ করেছিলেন, রিপাবলিকানরা জোর করে তাঁদের অর্থায়ন পরিকল্পনা মানাতে চাইছেন।

কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের অধিবেশন এখন স্থগিত আছে। এতে বর্তমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এ অবস্থায় লাখো কর্মী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির বিলিয়ন বিলিয়ন (শত শত কোটি) ডলার ক্ষতি হতে পারে।

ডেমোক্র্যাটরা নতুন ব্যয় পরিকল্পনায় সম্মত হওয়ার আগে স্বাস্থ্যসেবা তহবিলের নিশ্চয়তা চান। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা চান, অন্তত নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বর্তমান হারে অর্থায়ন বজায় রেখে ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা।

শুমার ও তাঁর সহযোগীরা বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা বাঁচাতে আলোচনায় চাপ তৈরি করতেই তাঁরা শাটডাউন হতে দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে রিপাবলিকানদের সঙ্গে আলোচনায় আজ পর্যন্ত সফলতা আসেনি।

‘কেন আলোচনায় বসা থেকে তাঁরা পালাচ্ছেন? আমার জীবনে এমন দেখিনি’, বলেন কানেটিকাটের ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস মারফি। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার তখনই খুলবে, যখন রিপাবলিকানরা গুরুত্ব দিয়ে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে কথা বলবেন।’

আরও পড়ুনকংগ্রেসে অর্থ বিল নাকচ, সংকটে ট্রাম্প প্রশাসন১৭ ঘণ্টা আগে

অন্যদিকে কংগ্রেসের উভয় কক্ষ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন, কিন্তু ব্যয় বিল পাসের জন্য প্রয়োজনীয় ৬০ ভোট পাননি—সেই রিপাবলিকানরা বলছেন, ‘স্বাস্থ্যসেবার বাড়তি তহবিল নয়, অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত সরকার সচল রাখাকে।’

‘এটা হারজিত বা দোষারোপের বিষয় নয়’, বলেন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা জন থুন। তিনি বলেন, ‘এটা জনগণের ব্যাপার। আর (ডেমোক্র্যাটরা) জনগণকে রাজনৈতিক স্বার্থে জিম্মি করেছেন।’

রিপাবলিকানদের দাবি, ডেমোক্র্যাটদের চাওয়া ‘স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ’ করদাতাদের বেশি অর্থ খরচ করাবে। এগুলো চালু করা হয়েছিল কোভিড–১৯ মহামারির বিশেষ পরিস্থিতি সামলাতে। সেটি এখন আর নেই।

কেন আলোচনায় বসা থেকে তাঁরা (রিপাবলিকানরা) পালাচ্ছেন? আমার জীবনে এমন দেখিনি। সরকার তখনই খুলবে, যখন রিপাবলিকানরা গুরুত্ব দিয়ে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে কথা বলবেনক্রিস মারফি, কানেটিকাটের ডেমোক্র্যাট সিনেটর

‘আবশ্যিক কর্মী’ যেমন সীমান্তরক্ষী বা সেনারা আপাতত বিনা বেতনে কাজ করতে বাধ্য হবেন। আর যাঁরা ‘অপ্রয়োজনীয় কর্মী’ হিসেবে বিবেচিত, তাঁদের বেতন ছাড়া ছুটিতে পাঠানো হবে। অতীতে এমন পরিস্থিতি কেটে গেলে তাঁদের বকেয়া বেতন দেওয়া হয়েছে।

বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, এবার সরকারের অচলাবস্থার প্রভাব ২০১৮ সালের চেয়েও বড় হবে। তখন কিছু অর্থায়ন বিল পাস করেছিল কংগ্রেস। এবার প্রায় ৪০ শতাংশ ফেডারেল কর্মী অস্থায়ী ছুটিতে যেতে পারেন। এটি সংখ্যার হিসাবে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার।

গতকালই কিছু কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। হোয়াইট হাউসে ভ্যান্স আবারও স্থায়ী ছাঁটাইয়ের হুমকি দেন। তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলি, এ অবস্থা যদি দীর্ঘায়িত হয়, তবে আমাদের কর্মী ছাঁটাই করতেই হবে।’

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার শাটডাউনের কবলে, ট্রাম্পের হুমকিতেও কাজ হলো না০১ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র প বল ক ন পর স থ ত এ অবস থ সরক র র র অর থ হওয় র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ