সুবীর নকরেক। মধুপুরের প্রত্যন্ত বনাঞ্চলে বসে বিদেশের কাজ করেন, ফ্রিল্যান্সার হিসেবে। ইন্টারনেটের গতি তাঁর জন্য একটা সমস্যাই। প্রায়ই বনের মধ্যে গাছের তলায় চলে যেতেন নেটওয়ার্ক পাওয়ার জন্য। সুবীর নকরেককে নিয়ে ২০২২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় ‘বনে বসে সুবীরের ডলার আয়’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার পরপরই মধুপুরের সেই বনাঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট নিয়ে হাজির হয় গ্রামীণফোন ও অ্যাম্বার আইটি।
প্রতিবেদক রাহিতুল ইসলামের এ ধরনের উদ্দীপনাময় ২৫টি প্রতিবেদনের সংকলন ‘সুখবর বাংলাদেশ’ গত জুলাই মাসে প্রকাশিত হয়েছে। এক মাসের মধ্যেই গত আগস্ট মাসে চতুর্থ মুদ্রণ বের হয়েছে বইটির। মূলত ফ্রিল্যান্সার ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সফল উদ্যোক্তাদের কথা আছে বইটিতে। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে গিয়েও রাহিতুল তুলে এনেছেন অদম্য সব মানুষের গল্প।
তাই তো প্রকাশক মতিউর রহমান তাঁর কথায় লিখেছেন, ‘.
এটুকু থেকেই বোঝা যায় যে বইটিতে আছে সেই সব মানুষের কাহিনি, যাঁরা অদম্য, তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যাঁরা নিজের জীবনে যেমন ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন, তেমনি আশপাশের মানুষদের জীবনও বদলে দিয়েছেন। ‘বাবাকে বাঁচাতে দুই ভাইয়ের ফ্রিল্যান্সিং’ শিরোনামের লেখাটার কথাই ধরা যাক। লেখক শুরু করেছেন এভাবে, ‘জুনের তৃতীয় রোববার বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় বাবা দিবস। সন্তানেরা বাবাকে শুভেচ্ছা জানায়। উপহার, বিশেষ ট্রিট দেওয়াও চলে। শুভ সরকার ও সৈকত সরকার—এই দুই ভাইয়ের বাবা দিবসের তাৎপর্য একদমই অন্য রকম। শুধু এই বিশেষ দিন নয়, তিন বছর ধরে প্রতিদিনই বাবা রুবেল মিয়ার জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।’ বাবা রুবেল মিয়া ক্যানসারে আক্রান্ত। বাবার ব্যয়বহুল চিকিৎসা করাতেই শুভ সরকার ১৮ বছর বয়সেই শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। সঙ্গে নিয়ে নেন ছোট ভাই সৈকত সরকারকে। এই ফ্রিল্যান্সিং করে বাবার চিকিৎসার খরচ তো মিটিয়েছেনই, বাবাকে একটা ফ্ল্যাটও কিনে দিয়েছেন। শুভ সরকার কাজ করেন মূলত স্পেশাল এফেক্ট নিয়ে, যার চাহিদা ভালোই আছে বিদেশে। শুভ ও সৈকতের এই গল্প প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত হয় ২০২৩ সালের বাবা দিবসে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজানুর রহমান শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে ক্রাউড ফান্ডিং নিয়ে কাজ করেন। তাঁর গল্পে পাওয়া যায় ফ্রিল্যান্সারদের সামাজিক সমস্যার কথা। ‘...শুরুতে অনেকে বলেছিল, দুই নম্বরি ব্যবসা করি, ডলার জালিয়াতি করি, কম্পিউটারে প্রতারণা করি ইত্যাদি...’ বিষয়টি এখানেই শেষ হয় না, থানা পর্যন্ত গড়ায়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বুঝিয়ে বললে তিনি বুঝতে পারেন ফ্রিল্যান্সিং কী, মিজানুর রহমানের কাজ কী? এ ধরনের উটকো ঝামেলা কমবেশি সব ফ্রিল্যান্সারের আছে।
এই বইয়ে আছে গৌরনদীর এক স্কুলের ডিজিটাল হয়ে ওঠা, মাদ্রাসা থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার মিনহাজ, খাগড়াছড়ির প্রত্যন্ত এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোগের গল্প। ৬৮ বছর বয়সী আবেদ সিরাজ বাক্প্রতিবন্ধী, ফ্রিল্যান্সিং করে সংসার চালান। এই গল্পও হৃদয়ছোঁয়া। মনোয়ার ইকবাল চাকরি ছেড়ে দিয়ে হয়েছিলেন সফটওয়্যার উদ্যোক্তা। প্রতিষ্ঠা করেন প্রাইডসিসি আইটি লিমিটেড। এখন কর্মীদের বেতনই দেন ৯০ লাখ টাকা। শাশুড়ির কিনে দেওয়া ল্যাপটপে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেছিলেন পপি রানী সিনহা। তারপর পান সফলতা। পড়াশোনাসহ নানা কাজে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের প্রযুক্তির সুবিধা দিতে ইনোভেশন গ্যারেজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেছেন আশিকুর রহমান। তিনি নিজেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। অ্যাপ ও সফটওয়্যার তৈরি করেন। মাসে বিক্রি হয় প্রায় সোয়া ছয় লাখ টাকা।
রাহিতুল ইসলাম প্রতিটি লেখার সঙ্গে বর্তমান হালনাগাদও যুক্ত করেছেন। তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, সবাই যাঁর যাঁর জায়গায় উন্নতি করছেন। এক মলাটে এই ২৫ কাহিনি আসলে মানুষের অদম্য ইচ্ছাশক্তির। যেগুলো সবার জন্যই অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশের জন্য সুখবর তো অবশ্যই।
সুখবর বাংলাদেশ
রাহিতুল ইসলাম
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
প্রকাশ: জুলাই ২০২৫
প্রচ্ছদ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি
পৃষ্ঠা: ১২০
মূল্য: ৩৫০ টাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র রহম ন র গল প ক জ কর র জন য প রক শ সরক র প রথম অদম য
এছাড়াও পড়ুন:
জকসু নির্বাচন: ছাত্রদলের প্যানেলকে ‘ভাড়াটিয়া’ আখ্যা দিয়ে একাংশের
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ছাত্রঅধিকার পরিষদ যৌথভাবে ঘোষিত প্যানেলকে কেন্দ্র করে তীব্র বিরোধ দেখা দিয়েছে। ঘোষিত প্যানেলকে ‘ভাড়াটিয়া’ উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রদলের একাংশের নেতাকর্মীরা।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ নামের সমন্বিত প্যানেল ঘোষণা করেন।
আরো পড়ুন:
বিচারকের ছেলে হত্যার প্রতিবাদে ইবিতে বিক্ষোভ
নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবিতে আশুগঞ্জ সার কারখানায় সমাবেশ
এ সময় কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরসহ শাখা ছাত্রদলের বহু নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। প্যানেল ঘোষণার পরই ১৮তম ব্যাচের ৩০–৩৫ জনের একটি গ্রুপ স্লোগান দিতে শুরু করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
তারা ‘ভুয়া ভুয়া’, ‘আঠারো আঠারো’, ‘গর্জে উঠো আঠারো’, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে আঠারো’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে প্যানেল ঘোষণার প্রতিবাদ জানান। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিলও করেন।
তাদের অভিযোগ, ঘোষিত প্যানেলটি ছাত্রদলের প্রকৃত কর্মীদের বাদ দিয়ে ‘ভাড়াটিয়া’ দিয়ে সাজানো হয়েছে।
বিক্ষোভরত নেতাকর্মীরা দাবি করেন, জকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলে যদি ১৮ ব্যাচের কেউ স্থান পায়, তাহলে তাকে অবশ্যই ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী হতে হবে এবং ব্যাচটি থেকে পাঁচজনকে স্থান দিতে হবে। অন্যথায় প্যানেল ঘোষণা হওয়ার আগে প্রতিটি মনোনীত প্রার্থীর সাংগঠনিক পরিচয় স্পষ্ট করে জানাতে হবে।
এসব দাবি না মানা হলে ‘ঐক্যবদ্ধ ১৮ ব্যাচ’ নামে আলাদা এক্সক্লুসিভ প্যানেল ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এদিকে ঘোষিত সমন্বিত প্যানেলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব (সহ-সভাপতি), শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক খাদিজাতুল কুবরা (সাধারণ সম্পাদক) এবং আহ্বায়ক সদস্য বিএম আতিকুর রমান তানজিল (সহ-সাধারণ সম্পাদক)।
প্যানেলের অন্যান্য সম্পাদক পদে রয়েছেন—মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র সম্পাদক অনিক কুমার দাস, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক নুসরাত চৌধুরী জাফরিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. মাশফিকুল ইসলাম রাইন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক আল শাহরিয়ার শাওন, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক অর্ঘ্য শ্রেষ্ঠ দাস, আন্তর্জাতিক সম্পাদক অপু মুন্সী, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক তাকরিম আহমেদ, ক্রীড়া সম্পাদক মো. কামরুল হাসান নাফিজ, পরিবহন সম্পাদক মাহিদ হাসান, সমাজসেবা ও শিক্ষার্থীকল্যাণ সম্পাদক মো. আনন বিন রহমান এবং পাঠাগার ও সেমিনার সম্পাদক রিয়াসাল রাকিব।
নির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন—ইমরান হাসান ইমন, সাদমান সাম্য, সুলতান মাহমুদ শুভ, মনিরুজ্জামান মনির, তৌহিদুল ইসলাম তানিম ও মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ। আরও একজন নির্বাহী সদস্যের নাম পরে জানানো হবে বলে জানা গেছে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী