পিস্তল হাতকড়া ওয়াকিটকি নিয়ে জিপ-হাইয়েসে চলে যাওয়া ব্যক্তি কারা
Published: 3rd, October 2025 GMT
ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন ব্যক্তি মহাসড়কে থামান একটি যাত্রীবাহী বাস। তাঁদের হাতে ছিল পিস্তল, হাতকড়া, টর্চলাইট ও ওয়াকিটকি। বাস থেকে চালককে নামিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন তাঁরা। এরপর চলে যান একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস, একটি প্রাইভেট কার ও একটি জিপে করে।
ছয় বছর আগে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতুর দক্ষিণ পাড়ের শিকলবাহা ব্রিজ এলাকায় সংঘটিত এ ঘটনায় গত মাসের শেষের দিকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি সত্য, তবে কারা এ ঘটনায় জড়িত তা শনাক্ত করা যায়নি। ডিবি পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত নয় বলে জানানো হয়েছে এই তদন্ত প্রতিবেদনে। এর আগেও পুলিশ একইভাবে প্রতিবেদন দিয়েছিল।
নিহত চালকের নাম জালাল উদ্দিন। তিনি দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা। ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল রাতে তাঁকে হত্যার ঘটনাটি ঘটে। নিহত ব্যক্তির পরিবার ও বাসচালকেরা বলেছেন, ছয় বছরেও এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে না পারা দুঃখজনক। জড়িত ব্যক্তিরা যাঁরাই হোক, শনাক্ত করে তাঁদের বিচারের আওতায় আনার দাবি তাঁদের। তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর আদালতে নারাজি আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী। আগামী ৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদীর উপস্থিতিতে প্রতিবেদনটি গ্রহণের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
দুই দফা তদন্তেও বাসচালক জালাল উদ্দিনের খুনিরা শনাক্ত না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মো.
নিহতের স্ত্রী ইলিনা খানম জানান, তাঁর তিন ছেলের মধ্যে বড়জন প্রতিবন্ধী, অন্য দুজন এখনো ছোট। স্বামীর মৃত্যুতে অভাব-অনটনে সংসার চলছে তাঁর। তিনি আক্ষেপ করেন, ‘বিচার দূরে থাক, পুলিশ তো ছয় বছরে খুনিদেরই শনাক্ত করতে পারেনি। গরিব বলে আমরা কি বিচার পাব না? আমার সন্তানেরা কি জানতে পারবে না তাদের বাবার খুনি কারা?’
মামলার নথি ও নিহত ব্যক্তির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জালাল উদ্দিন শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক ছিলেন। ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল রাতে গাড়িতে যাত্রী নিয়ে কক্সবাজার থেকে গাজীপুরের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন তিনি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রামের পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলাসংলগ্ন শিকলবাহা ব্রিজ এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে প্রথমে চারজন লোক তাঁর গাড়ি থামান। এরপর গাড়িতে ইয়াবা রয়েছে দাবি করে তা খুঁজে বের করে দিতে জালাল উদ্দিনকে পিটুনি দিতে থাকেন। সেখানে ডিবি পুলিশ পরিচয়ের ১০-১২ জন লোক ছিলেন। একপর্যায়ে আহত অবস্থায় চালককে বাসে ফেলে চলে যান তাঁরা। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশের করা লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিহত ব্যক্তির পিঠ, কোমর, হাঁটু ও কবজিতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই জুয়েল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে নগরের কর্ণফুলী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গাড়িতে ওঠা লোকজনের হাতে পিস্তল, হাতকড়া ও ওয়াকিটকি ছিল।
হত্যার এ ঘটনা তখন দেশব্যাপী পরিবহনশ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। চালককে হত্যার প্রতিবাদে ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ ৮৮টি রুটে বাস ধর্মঘট পালন করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
শুরুতে মামলাটি তদন্ত করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রাম। তদন্ত চলাকালে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাসটির সুপারভাইজার আজিম উদ্দিন ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এক ব্যক্তি ওই বছরের ২৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। আজিম জবানবন্দিতে বলেন, কক্সবাজার থেকে ২৮ জন যাত্রী নিয়ে রাত আটটার দিকে গাজীপুরের উদ্দেশে তাঁরা রওনা হন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে গাড়িটি শিকলবাহা ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে চারজন লোক ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গাড়িটি থামান। তাঁদের হাতে পিস্তল, হাতকড়া, ওয়াকিটকি ও টর্চলাইট ছিল। চালক জালালকে ওই ব্যক্তিরা বলেন, তাঁর কাছে ইয়াবা আছে। ওই সময় চালককে হাতকড়া পরিয়ে গাড়ি থেকে নামানো হয়। এরপর ওই ব্যক্তিরা চালককে মারধর করতে থাকেন। যাঁরা চালককে মেরেছিলেন, তাঁদের বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে হবে। ঘটনার সময় কেউ কারও নাম উচ্চারণ করেননি। পরে চালককে বাসে ফেলে তাঁরা জিপগাড়ি, হাইয়েস ও প্রাইভেট কারে করে চলে গেছেন।
ঘটনার যে প্রত্যক্ষদর্শী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন, তিনি পেশায় দারোয়ান। স্থানীয় ওই ব্যক্তি জবানবন্দিতে বলেন, ডিবি পুলিশ পরিচয়ের ব্যক্তিদের নিয়ে প্রথমে ঘটনাস্থলে একটি মাইক্রোবাস আসে। গাড়ি থেকে চার–পাঁচজন লোক নামেন। এর পরপরই জিপগাড়ি ও প্রাইভেট কার আসে। গাড়িতে আসা ব্যক্তিদের কাউকে তিনি চেনেন না।
তিন বছর তদন্ত শেষে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রামের তৎকালীন পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার সিনহা ২০২২ সালের ১৬ জুলাই আদালতে এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। এতে বলা হয়, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মারধরে বাসচালক জালালের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যায়নি। ঘটনাস্থল নির্জন হওয়ায় কোনো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া যায়নি। যে গাড়িতে করে জড়িত ব্যক্তিরা পালিয়ে যান, সেই গাড়ির নম্বরও পাওয়া যায়নি। তবে চট্টগ্রাম ডিবি পুলিশের কেউ ঘটনায় জড়িত নয়।
প্রথম এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দেওয়া হলে বাদী নারাজি আবেদন করেন। এরপর আদালত ডিবি পুলিশকে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে নগর ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক জয়নাল আবেদীনও গত মাসের শেষের দিকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। তিনিও আগের তদন্তকারী কর্মকর্তার মতো চট্টগ্রাম ডিবি পুলিশ জড়িত নয় উল্লেখ করেন। পুলিশের কেউ ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত না থাকার বিষয়টি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। ঘটনার পর চলে যাওয়া হাইয়েস ও জিপ শনাক্ত করা যায়নি। জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, মারধরে মৃত্যু হয়েছে এটি সত্য হলেও জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে না পারায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় আদালতে নারাজি আবেদন করবেন জানান মামলার বাদী ও নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই জুয়েল হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই দফা তদন্তে বলা হচ্ছে চট্টগ্রামের পুলিশ জড়িত নয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে এরা কারা। প্রকাশ্যে ব্যস্ত সড়কে গাড়ি দাঁড় করিয়ে কোনো অপরাধী চক্রের পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়। যাঁরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে বিচার যেন হয়, এটিই আমাদের চাওয়া।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ল উদ দ ন এ ঘটন য় র তদন ত ছয় বছর জন ল ক হত য র হ তকড় ঘটন র প রথম চ লকক
এছাড়াও পড়ুন:
মেসি-সুয়ারেজদের হারিয়ে প্লে’অফে শিকাগো ফায়ার
দীর্ঘ আট বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে প্লে-অফে জায়গা করে নিল শিকাগো ফায়ার এফসি। বাংলাদেশ সময় বুধবার (০১ অক্টোবর) সকালে দারুণ গোল উৎসবের ম্যাচে ইন্টার মায়ামিকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে নিশ্চিত করল তারা ২০১৭ সালের পর প্রথম প্লে-অফ।
শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে শিকাগো। ম্যাচের ১১তম মিনিটেই জ্বলে ওঠেন জে দ’আভিলা। তিনি চমৎকার এক হেডারে এগিয়ে দেন দলকে। এরপর ৩১ মিনিটে দ্রুতগতির পাল্টা আক্রমণ থেকে গোল করেন জনাথন ডিন। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে একসময় চাপে পড়ে যায় মায়ামি।
আরো পড়ুন:
এমবাপ্পের হ্যাটট্রিকে রিয়ালের বড় জয়
বুসকেটসের অবসর ঘোষণা: এক নিঃশব্দ শিল্পীর শেষ অধ্যায়
তবে ৩৯ মিনিটে টমাস আভিলেস গোল করে ব্যবধান কমান। কিন্তু বিরতিতে যাওয়ার আগেই রোমিং কুওমে গোল করে আবারও দুই গোলে এগিয়ে দেন শিকাগোকে।
দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে মায়ামি পুরোপুরি ভরসা রাখে লুইস সুয়ারেজের অভিজ্ঞতায়। ৫৭ মিনিটে তার গোলেই ব্যবধান দাঁড়ায় ৩-২। এরপর জর্ডি আলবার দুর্দান্ত পাস থেকে ৭৪ মিনিটে সমতায় ফেরান উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। ম্যাচ তখন দাঁড়িয়ে যায় ৩-৩ এ, আর মনে হচ্ছিল খেলা একেবারেই মায়ামির দিকে হেলে পড়ছে।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে নতুন নাটক লিখে শিকাগো। ৮০ মিনিটে জাস্টিন রেইনল্ডস গোল করে আবারও এগিয়ে দেন দলকে। মাত্র তিন মিনিট পর দূরপাল্লার ঝড়ো শটে ব্রায়ান গুতিয়েরেজ নিশ্চিত করেন শিকাগোর স্মরণীয় জয়।
এই জয়ে এমএলএস টেবিলে অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে শিকাগো (১৫ জয়, ৬ ড্র, ১১ হার)। অন্যদিকে লিওনেল মেসির মায়ামি (১৬ জয়, ৮ ড্র, ৭ হার) যদিও আগেই প্লে-অফ নিশ্চিত করে রেখেছে। তবে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে গোলশূন্য থাকলেন আর্জেন্টাইন তারকা। আর এই হারের ফলে সাপোর্টার্স শিল্ড জয়ের লড়াইয়ে বড় ধাক্কা খেল মায়ামি। এখন শুধু জয় পেলেই শিরোপা নিশ্চিত করতে পারবে ফিলাডেলফিয়া ইউনিয়ন।
উল্লেখ্য, ম্যাচটি মূলত হওয়ার কথা ছিল ৩০ আগস্টে, কিন্তু লিগস কাপ ফাইনাল খেলতে গিয়ে মায়ামির কারণে তা পিছিয়ে যায়। সেই ম্যাচে সিয়াটলের কাছে ৩-০ গোলে হেরেছিল তারা।
ঢাকা/আমিনুল