সিরাজের বোলিং তোপে দিশেহারা ক্যারিবীয়রা, ভারতের দারুণ শুরু
Published: 2nd, October 2025 GMT
ঘরের মাঠে নতুন মৌসুমের প্রথম টেস্টেই ভারত যেন জানিয়ে দিল- তিন কিংবদন্তির অবসর, আগের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারের ক্ষত বা দলের রূপান্তর; এসবই পেছনের গল্প। নতুন গল্প শুরু হয়েছে আক্রমণাত্মক ছন্দে। হায়দরাবাদের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৬০ রানে গুটিয়ে দেয় ভারত। এরপর ২ উইকেটে ১২১ রান তুলে দিনের শেষে ৪১ রানের লিড নিয়েই মাঠ ছাড়ে তারা।
ইংল্যান্ড সফরের ‘আয়রন ম্যান’ মোহাম্মদ সিরাজ আবারও প্রমাণ করলেন কেন তিনি ভারতের আক্রমণের সামনের কাতারের সেনাপতি। বল বারবার ফুল লেংথে ফেলে উইকেট নিশানা করেছেন, একটুও ছাড় দেননি ক্যারিবীয় ব্যাটারদের। ইনিংসের প্রথম পাঁচ উইকেটের মধ্যে চারটিই এসেছে তার হাতে। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল ঘরের মাঠে প্রথমবার পাঁচ উইকেট পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু ডিআরএসে তা হাতছাড়া হয়। শেষ পর্যন্ত তার শিকার ৪০ রানে ৪ উইকেট।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশকে ১৫২ রানের টার্গেট ছুড়ল আফগানিস্তান
পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের
অন্যপ্রান্তে জসপ্রিত বুমরাহ যোগ দিলেন ইয়র্কারের ঝলকানি নিয়ে। জাস্টিন গ্রিভসকে এলবিডব্লিউ আউট করতে না পারলেও দ্রুতই লেজের ব্যাটসম্যানদের দিশেহারা করেন। আর এদিনই তিনি রেকর্ড গড়েন। ভারতে সবচেয়ে কম বল করে ৫০ টেস্ট উইকেট পাওয়া বোলার এখন বুমরাহ (মোহাম্মদ শামির চেয়ে ৫২১ বল আগে)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং লাইনআপে নাম আছে, কিন্তু রান নেই। একাদশে মোট নয়টি টেস্ট সেঞ্চুরি। কিন্তু তার ছাপ পড়েনি মাঠে। ওপেনার ত্যাগনারায়ণ চন্দরপল শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে, ব্র্যান্ডন কিং সোজা বল ছেড়ে মধ্যস্টাম্প হারালেন। আলিক আথানাজ কিছুটা আত্মবিশ্বাসী হচ্ছিলেন। কিন্তু সিরাজ তার অভিজ্ঞতার ঘাটতি চমৎকারভাবে কাজে লাগালেন। সামান্য ফুল বলের লোভে স্লিপে ক্যাচ দিলেন আথানাজ।
কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন রোস্টন চেজ ও শাই হোপ। ৭০ বল টিকে ছিলেন তারা। কিন্তু সেটাও যথেষ্ট হয়নি। কুলদীপ যাদবের দুর্দান্ত ড্রিফট আর টার্নে বোল্ড হন হোপ। আর চেজকে ফাঁদে ফেলে সিরাজের দারুণ অ্যাঙ্গেলে আসা বল, উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ বানিয়ে।
বল হাতে সিরাজ নেন ৪০ রানে ৪টি উইকেট। বুমরাহ ৪২ রানে ৩টি। আর কুলদীপ যাদব ২৫ রানেন নেন ২টি উইকেট। অপর উইকেটটি শিকার করেন ওয়াশিংটন সুন্দর।
১৬০ রানের স্বল্প স্কোরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুটিয়ে দিয়ে সহজ দিনটা ভারত আরও স্মরণীয় করে তুলতে পারত। ৬৮ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ার পর যশস্বী জয়সওয়াল ৭ চারে ৩৬ করে আউট হন। এরপর ৯০ রানের মাথায় নতুন তিন নম্বর সাই সুদর্শন মাত্র ৭ রানে ফিরলেন। এখানেই বোঝা গেল, রোহিত-কোহলি-অশ্বিন-পন্তহীন এই দলে রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
তবে চাপ সামলালেন লোকেশ রাহুল। নির্ভার, ব্যস্তহীন অর্ধশতক তুলে নিয়ে দলের ব্যাটিংকে স্থিতি দিলেন তিনি। শুভমান গিল অপরাজিত থাকেন ১৮ রানে। তাদের ব্যাটিংয়েই দিনের শেষে ভারত লিড ধরে রাখল ৪১ রানে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উইন ড জ ক র ক ট র প রথম উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
বল হাতে দুর্দান্ত মারুফা, ব্যাট হাতে রুবাইয়া—পাকিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের
তিন বছর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপ অভিষেকে একটিই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। সেটি এসেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। তিন বছর পর আজ সেই পাকিস্তানকে হারিয়েই ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু করল বাংলাদেশ।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে নিগার সুলতানার দল। গত এপ্রিলে যে পাকিস্তানের কাছে বাছাইপর্বে হেরে শঙ্কার মুখে পড়েছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন, সেই দলটিকেই ১২৯ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ নারী দল ম্যাচ জিতেছে ৭ উইকেটে। ১৩০ রানের লক্ষ্যটা ১৮.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়েই পেরিয়ে যান নিগাররা।
রান তাড়ার শুরুটা অবশ্য শঙ্কা জাগিয়েছিল। ১০ ওভারের প্রথম পাওয়ার প্লেতে ২৩ রান করতেই ১ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ওপেনার ফারজানা হক ১৭ বলে মাত্র ২ রান করে এলবিডব্লু হয়েছেন ডায়ানা বেগের বলে।
পাওয়ার প্লের পর ১২তম ওভারের শেষ বলে ফিরে যান তিনে নামা শারমিন আক্তার। ১০ রান করতে ৩০ বল খেলতে হয়েছে শারমিনকে। শারমিন ফেরার পর ওপেনার রুবাইয়া হায়দার ও নিগার সুলতানা পরের দুই ওভারে তুলতে পারেন মাত্র ২ রান।
বাংলাদেশ গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে ১৫তম ওভারে। পাকিস্তান নারী দলের সাদিয়া ইকবালকে চার মেরে আড়মোড়া ভাঙেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। পাকিস্তানি অফ স্পিনার রামিন শামীমের করা পরের ওভারে আসে ১৩ রান, দুই চারে যার ৯-ই নিগারের। রান-উৎসবে এরপর যোগ যেন রুবাইয়াও। বাঁহাতি স্পিনার নাশরা সান্ধুর করা ১৯তম ওভারে তিনটি চার মারেন এদিনই প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলতে নামা রুবাইয়া।
শেষ পর্যন্ত অভিষেকটা ফিফটি করে রাঙিয়েছেন তিনি। ৬২ রানের জুটি গড়ে অধিনায়ক নিগার সুলতানা ফিরে গেলেও ২৮ বছর বয়সী রুবাইয়া ফিরেছেন দলকে জিতিয়ে, সঙ্গে একটা রেকর্ড নিয়েও। ৭৭ বলে ৮ চারে ৫৪ রানে অপরাজিত থেকেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। মেয়েদের ওয়ানডে অভিষেকে যা বাংলাদেশের ব্যাটারদের সর্বোচ্চ ইনিংস। রুবাইয়া ভেঙেছেন আয়েশা রহমানের রেকর্ড, ২০১১ সালে বিকেএসপিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৩ রান করেছিলেন আয়েশা।
৪৪ বলে ২৩ রান করে নিগারের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নামা সোবহানা মোস্তারি ১৯ বলে করেন অপরাজিত ২৪ রান। ৬টি চার ছিল সোবহানার ইনিংসে।
এর আগে বোলিংয়ে বাংলাদেশকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন পেসার মারুফা আক্তার। প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে ওমাইমা সোহেল ও সিদরা আমিনকে ফেরান মারুফা। দুর্দান্ত এক বলে প্রথম উইকেটটি পেয়েছেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া ফুলার লেংথের বলটা বাঁক খেয়ে ভেতরে ঢুকে লেগ স্টাম্পে আঘাত হানে। ‘গোল্ডেন ডাক’ পান পাকিস্তান ওপেনার ওমাইমা। পরের বলে আরেকটি ‘গোল্ডেন ডাক।’ এবারও অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢুকছিল বলটি, সিদরা ড্রাইভ করতে গিয়ে সেটিকে টেনে নিয়ে যান লেগ স্টাম্পে। হ্যাটট্রিক অবশ্য পাননি মারুফা, থেমেছেন এই ২ উইকেট নিয়েই।
তবে ম্যাচ সেরা মারুফার ওই শুরুটাকেই টেনে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের অন্য বোলাররা। তাঁদের মধ্যে আলাদা করেই বলতে হয় লেগ স্পিনার স্বর্ণা আক্তারের কথা। ৩.৩ ওভার বল করে মাত্র ৫ রানে তিনি নেন ৩ উইকেট। তাঁর পুরো করা তিনটি ওভারই ছিল মেডেন।
২ রানে ২ উইকেট খোয়ানোর মুনিবা আলীকে নিয়ে ৪২ রান যোগ করেন পাকিস্তানের রামিন শামীম। পরপর দুই ওভারে এ দুজনকে ফিরিয়ে আবারও পাকিস্তানকে চাপে ফেলেন বাঁহাতি স্পিনার নাহিদ আক্তার। এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট তুলে নিতে থাকেন বাংলাদেশের বোলাররা। ফল, ৩৮.৮ ওভারে ১২৯ রানে অলআউট পাকিস্তানের মেয়েরা।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েদের বিপক্ষে এটিই কোনো দলের সর্বনিম্ন রান। আগের সর্বনিম্ন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দলের করা ৯ উইকেটে ১৪০ রান। ২০২২ সালে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সেই ম্যাচটি অবশ্য হেরেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। রান তাড়ায় বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ১৩৬ রানে। আজ এমন কিছুর শঙ্কা দূর হয়েছে অভিষিক্ত রুবাইয়াতের ব্যাটে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ ৭ অক্টোবর, গুয়াহাটিতে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোরপাকিস্তান: ৩৮.৩ ওভারে ১২৯ (রামিন ২৩, সানা ২২, মুনিবা ১৭, ডায়না ১৬*, সিদরা ১৫, আলিয়া ১৩; স্বর্ণা ৩/৫, নাহিদা ২/১৯, মারুফা ২/৩১)।বাংলাদেশ: ৩১.১ ওভারে ১৩১/৩ (রুবাইয়া ৫৪*, সোবহানা ২৪*, নিগার ২৩; ডায়না ১/১৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মারুফা আক্তার।