আকাশ আর পাতাল বোঝানোর জন্য কোনো সীমানা নেই। নিরালম্ব, বায়ুভূত শূন্যে সচল এই সব ইমেজ যেন কোনো জাদুকরি চালে চলমান কিংবা অদৃশ্য শক্তির মায়াজালে বন্দী। শিশির ভট্টাচার্য্যের সৃজন-চৈতন্য এইভাবে ত্রিশঙ্কু অবস্থান থেকে পর্যবেক্ষণ করে মানুষ, প্রকৃতি এবং সর্বোপরি সময়ের নেতির লীলা। কোন বোধ বা রসের বিচারে শিশিরের ছবির বিশ্লেষণ যথার্থ হবে, তা নিশ্চিত হিসেবে বলা সম্ভব নয়, তবে এ কথা দর্শকমাত্রই অনুধাবন করবেন যে শিল্পীর নয়ন-সুখকর ললিত সচল কালো রেখার ইমেজের অন্তরালে রয়েছে এই নেতিবাচক সময়ের সার্কাসি বয়ান। কোথাও পরিপ্রেক্ষিতের ইশারা নেই, নেই আগে-পিছের, ওপরে-নিচের হিসাব। বায়ুভূত কিংবা জলজ হাইড্রার মতো ভাসমান এই সব ইমেজ স্বয়ং চালে স্পেসে আবির্ভূত হয়ে ভয়াল সুন্দর প্রেতায়িত আবেশ তৈরি করে। প্রথমত, আমরা কী সুন্দর বলে বিমোহিত হই। বিমুগ্ধ নয়নে দেখি মানুষের মুখ, নারীর সুনয়ন ও কল্লোলিত চুল, সুডৌল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, দেখি নিসর্গের ডালপালা ও পত্রালির বিচিত্র বিকাশ। কিন্তু কোনো ইমেজই স্থির, সার্বভৌম ও স্বাধীন নয়, একটির সঙ্গে আরেকটি জড়িয়ে আছে। মানুষ, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, পল্লবিত নিসর্গের ডালপালা এবং মানুষের ব্যবহৃত তৈজসপত্র, হাতিয়ার ও মারণাস্ত্র নিখুঁত ড্রয়িংয়ের মাহাত্ম্যে পরস্পরিত হয়ে অভূতপূর্ব জৈবিক গড়নে উত্তীর্ণ হয়েছে।
শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্যের রেখাচিত্র.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইবিতে অভয়ারণ্যের মেহেদি উৎসব
হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফেরাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মেহেদি ও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্য।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় তারা এ আয়োজন করে।
আরো পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে চলছে রাস উৎসব ও মেলা
পুণ্যস্নান মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হলো রাস উৎসব, মেলা চলবে ৫ দিন
সরেজমিনে দেখা যায়, মেহেদি ও নবান্ন উৎসব ঘিরে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি। রঙিন কাগজের সাজে পুরো স্থানজুড়ে তৈরি হয়েছিল উৎসবের আমেজ। পরিবেশবান্ধব বার্তা বহনকারী ঝুলন্ত ডেকোরেশন, প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার স্টল এবং সাহিত্য–সংস্কৃতির বিভিন্ন উপস্থাপনা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।
শিক্ষার্থীরা জানান, অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়। প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার হার কমে গেলেও এ আয়োজন সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
ফাতিমা খাতুন নামে ইবির এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মধ্যে অভয়ারণ্য সবসময়ই ব্যতিক্রম। আজ মেহেদি উৎসবে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে। আজকাল প্রাকৃতিক মেহেদি দেওয়ার সংস্কৃতি অনেকটাই কমে গেছে। তারা সেই সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তাছাড়া নবান্ন উৎসব যেখানে একদম বিলীনপ্রায়, সেখানে তারা এটারও আয়োজন করেছে। আশা করছি, এ রকম সুন্দর আয়োজন চলমান থাকবে।”
সংগঠনটির সভাপতি নাইমুল ফারাবী বলেন, “আমরা এবার দ্বিতীয়বারের মতো মেহেদি উৎসবের আয়োজন করছি। একসময় মেয়েদের হাত সর্বদা মেহেদীর রঙে রাঙা থাকত। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এ চর্চা এখন কমে গেছে। এটাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যই আজকের এই আয়োজন।”
তিনি বলেন, “আজ যে মেহেদি দেওয়া হচ্ছে, সেটা আমাদের সংগঠনের রোপণ করা গাছের পাতা থেকে তৈরি। এর মাধ্যমে আমরা শুদ্ধতা ছাড়িয়ে দিতে চাই।”
তিনি আরো বলেন, “মেহেদি উৎসবের পাশাপাশি আমরা এবার প্রথমবারের মতো নবান্ন উৎসব আয়োজন করেছি। এর মাধ্যমে আমার বাংলার সংস্কৃতিকে পূনর্জ্জীবিত করতে চাচ্ছি। বাংলার বহুল প্রচলিত সংস্কৃতিকে যাতে করে শিক্ষার্থীরা পুনরায় ধারণ করতে পারে, সেজন্য আমাদের এই আয়োজন।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী